ধর্ষিতা বলো না আমায়
আজিজুন নাহার আঁখি
সারা বাংলায় ধ্বণিত হচ্ছে
জয় বাংলা স্লোগান,
যুদ্ধ জয়ের আশায়
কতো লোক হলো আগুয়ান।
হঠাৎ এক রাত্রিবেলা
যখন মা দিচ্ছে খাবার,
ভাইয়া এসে বললো মাকে
মাগো অনুমতি চাই তোমার।
মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে
কান্না করলো জোরে জোরে,
আর যদি না ফিরি মাগো
ক্ষমা করে দিও মোরে।
ভাইয়া যেদিন চলে গেলো
তার পরের দিন রাতে,
চুপি চুপি মিরাজ মাতবর
আসলো আমাদের বাড়িতে।
কেউ জানতো না সে ছিলো
পাক সেনাদের দোসর,
শান্তি কমিটির মেম্বার সে
কমিটি বানালো আলবদর।
সাঁঝের বেলা আমি যখন
পড়ছিলাম বসে টেবিলে,
হঠাৎ করে ঢুকলো ক’জন
আমাদের দরজা ঠেলে।
তাদের দেখে আমি আর মা
গেলাম অনেক ভরকে,
বাবা ছিলো গোয়াল ঘরে
সে এসেও গেলো চমকে।
কোনো কিছু বোঝার আগেই
বাবার বুকে চালালো গুলি,
মায়ের পেটে লাথি মেরে
আমাকে নিলো তুলি।
পাক সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে
আটকে রাখলো এক কামরায়,
নরপশুরা খাবলে খেলো
কামড়ে আর নখের আঁচড়ায়।
ফিরলাম যখন স্বাধীন দেশে
পরিচয় হলো ধর্ষিতা,
কেউ আমায় দেয় না ঠাঁই
বলে না কোনো কথাবার্তা।
ভাইয়ার খোঁজ মেলেনি আর
দিয়েছিলো বুঝি প্রাণ,
মাতৃভমির সম্মান রক্ষায়
নিজেকে করেছিলো বলিদান।
আজও এই স্বাধীন দেশে
নেই কোনো আমার সম্মান,
এখনো সবাই ধর্ষিতা বলে
করে শুধু অপমান।
মিরাজ মাতবর নিজেকে এখন
পরিচয় দেয় মুক্তিযোদ্ধা বলে,
মঞ্চে উঠে দেয় বক্তৃতা
স্বাধীনতার দিবসে অনুষ্ঠান হলে।
আমার মতো তোমাদের কেউ
যখন কভু হয়নি নির্যাতিতা,
তাদের কাছে মিনতি জানাই
বলো না আমায় ধর্ষিতা।
আমি ধর্ষিতা নই
আমি এই বাংলার লোক,
আমায় আর করোনা নিন্দা
সইতে পারিনা সেই শোক।