করোনাকালে জীবন

ছবিঃ আয়েশা স্নেহা

আয়েশা স্নেহা

মার্চ থেকে ঘরে আছি। জীবন আজ থমকে গেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে। অফিস, কারাখানা সীমিত আকারে শুরু হলেও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আজ প্রায় ১১৪ দিন যাবৎ আমি এবং আমার মত বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী ঘরে বন্দী। সময়টি কঠিন। যদিও অন লাইন ক্লাশ হচ্ছে এবং আমিও অন লাইনে ক্লাশ করছি। অন লাইনে পরীক্ষাও দিয়েছি। আমার ক্লাশ নাইনের তৃতীয় টার্মের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। আমাদের ইংলিশ মিডিয়ামের সেশন জুলাই-জুন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণিতে উঠেছি। ১৯ জুলাই ২০২০ হতে নতুন শ্রেণির ক্লাশ শুরু হবে।

আমার অভিমত, এই মহামারীর প্রভাবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। এর মূলত: দুটি কারণ, প্রথমত: বেশিরভাগ শিশুরা পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্ন। দ্বিতীয়ত: শিশুরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবর আসছে। বাবা মায়েরাও অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন একটি ভীতি নিয়ে; কারণ কেউ জানেন না, অদৃশ্য এই ভাইরাস কাকে আক্রমণ করছে এবং কে সাথে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিশুরা বাড়িতে একাকীত্বে সময় কাটাচ্ছে, শ্রেণি কক্ষ ও স্কুলের বন্ধু ছাড়া।

করোনা ভাইরাসের এই সময় সবার মতো আমিও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। এর প্রধান কারণ অনিশ্চয়তা। আমরা জানি না, আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে বা কবে আমরা এই ভাইরাস হতে মুক্তি পাবো। আমি এটাও জানি না, আমাদের ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা হবে কি-না। আমার ক্যামব্রিজ কারিকুলামে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা হওয়ার পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুসারে মে ২০২১। এ বছর মে ২০২০ এর ক্যামব্রিজ কারিকুলামের ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা হয়নি, করোনা ভাইরাসের কারণে। স্কুলের প্রাপ্ত নম্বরের উপর ক্যামব্রিজ স্কোর প্রদান করবে। আমার দুশ্চিন্তার আরও একটি কারণ এখনো আমার পাসপোর্ট করা হয়নি। জন্ম নিবন্ধন সনদে আমার নামের একটি সংশোধনী রয়েছে। সেটি করছে মানিকগঞ্জ পৌরসভা। বাবা পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করছেন; কিন্তু পাসপোর্ট কার্যক্রম আপাতত: বন্ধ জেনেছেন। অথচ নভেম্বর ২০২০ এর মধ্যে পাসপোর্ট নম্বর ব্রিটিশ কাউন্সিল-এ জানাতে হবে, এটি স্কুল জানিয়েছে।

মহামারীর পূর্বে আমার দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটতো বিদ্যালয়ে। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের কথা মনে পড়ছে। বন্ধু বান্ধবদের কথাও মনে হচ্ছে। করোনার কারণে বিদ্যালয় জীবনের শেষ বছরটা মনে হয় বাসায়ই কাটাতে হবে, এটি আমার বড় দুঃখ।

বাসায় সময় কাটাতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিজেকে আরো ভালো করে চিনতে পারছি। আগে তো পড়ালেখার ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলাম। এই অবসর সময়টি না পেলে হয়তবা আমার শখ করে ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা বিভিন্ন ধরনের বই পড়া হতো না।

করোনাকালীন বড়দের উচিৎ শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া এবং তাদের লুকানো প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করা।

আয়েশা স্নেহা: প্রাইম ব্যাংক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল- উত্তরা এর দশম শ্রেণির ছাত্রী

Facebook Comments Box
ভাগ