কড়চা থেকে দূরে থাকার কষ্ট
রুহুল ইসলাম টিপু
কড়চা আমার প্রিয় পত্রিকা। মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক; অন লাইন পোর্টালে পৃথিবীর যে কোন স্থান হতে কড়চা পড়া যায়। মানিকগঞ্জ আমার জন্মস্থান। আমার ভালোবাসার জেলা। মানিকগঞ্জ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। জন্ম থেকে বুঝতে পারা, বড় হওয়া, স্কুল জীবন, কলেজে পাঠগ্রহণ সবই মানিকগঞ্জে। পড়াশুনা ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সাথে সমান্তরাল ভাবে কাজ করে কেটেছে আমার ৬ টি বছর। আমার লেখালেখির ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’ শিখেছি পতাকা হতে। সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি হতে নব্বই এর দশকের প্রথমার্থ পর্যন্ত। এ সময় সাপ্তাহিক কড়চা’র প্রকাশনাকেও মানিকগঞ্জ আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। একইসাথে অনেকগুলো সাপ্তাহিক এবং দৈনিকও মানিকগঞ্জ থেকে বের হতে শুরু করে। মানিকগঞ্জকে মেলে এবং তুলে ধরার আমার জেলার সাংবাদিক এবং সংবাদ কর্মীদের নিরলস কর্মযজ্ঞ, দক্ষতা এবং নৈপুণ্য দূর থেকে দেখেছি। আনন্দ, উচ্ছাস এবং গর্বে মনকে আন্দোদিত করেছি। কর্ম জীবন ভিন্ন হওয়ার কারণে নিজ শহরে বেশি না আসার কষ্ট আমাকে খুব তাড়িত করেছে।
২০২০ সাল। বশ্বিক মহামারির বছর। মানুষ হতে মানুষের দূরে থাকার সময়। অনেক মানুষ, প্রিয়জন খুব অল্প সময়ে হারানো একটি কঠিন বাস্তবতা। বছরের প্রায় শেষে এসে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার কষ্ট কোথায়? মানিকগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কড়চা থেকে দূরে থাকার কষ্ট। ফেসবুক আমি তেমন ব্যবহার করি না। কর্ম এবং ৩ কন্যা ও তাদের মা’কে নিয়ে আমার অতি সাধারণ জীবন। মানিকগঞ্জে বাবা মা থাকেন। তাদের দেখভালের কাজ আমার ছোট ২ ভাই করেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কোভিড এর সময় কন্যারা যুক্ত করলো ফেসবুকের সাথে আমার বন্ধু যোগাযোগ। কড়চা সম্পাদক সুরুয খান বললেন, ভালোই লিখো। পাঠাও কড়চা’য়। শুরু করলাম এবং হারিয়েও গেলাম। ২৬ আগস্ট ২০২০ এ কড়চা’য় প্রকাশিত হলো শেষ লেখা ‘অনি এবং নিতা’ শিরোনামে গল্প। এরপর আর লিখতে পারিনি।
লিখার অভ্যাস ক্রমেই হারাতে বসলাম। বিভিন্ন বিষয়, তথ্য সংগ্রহ করে যত বারই বসেছি, তত বারই ব্যর্থ হয়েছি। সুরুয ভাই আমাদের সিনিয়র বড় ভাই। ছাত্র জীবন থেকেই আমরা তার ভক্ত ছিলাম। বিশেষ করে তার বিনম্র ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করতো। কড়চা’কে দীর্ঘদিন ধরে রাখা এবং প্রকাশনা অব্যাহত রাখার মন্ত্র আজ বুঝতে পারছি, সম্পাদক সুরুয খানের অপরিসীম ধৈর্য্, প্রজ্ঞা এবং সহিষ্ণুতা। এর মাঝে সুরুয ভাই একদিন ফোন করে বললেন কেমন আছো? আমি অনুভব করলাম কড়চা’য় আমার অনুপস্থিতি সম্পাদককেও আহত করছে। স্থির করলাম যদি লিখতে না পারি তবে ফেসবুক থেকেও বিদায় নিবো। সে অর্থে ফেসবুক থেকেও আমি অনুপস্থিত।
জন্ম মাটির টান অদ্ভুত একটি অনুভূতি। কড়চা পোর্টালে মাউস স্পর্শ মানেই মানিকগঞ্জ। মানিকগজ্ঞের সফলতায় আমার হয় গর্ব। আমার জেলার কোন একজন মানুষের কষ্টে আমি হই ব্যথিত। কড়চা থেকে আর দূরে থাকতে চাই না। কারণ কষ্ট ক্রমেই বেড়ে চলছে, এর বেশি হলে সেটি মেনে নেয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে দাড়াবে। আমার মানিকগঞ্জ বেশি বেশি করে চলে আসুক প্রচুর লেখনির মাধ্যমে, প্রকাশিত হোক প্রিয় কড়চা’য়, কষ্ট ভুলে একটু আনন্দ। এর মূল্য সীমাহীন আকাশ।
কড়চা/ আর ই টি