ডা. অপূর্ব চৌধুরী
মাঝে মাঝে বিড়ম্বনায় পড়ি । স্বভাবের কারণে নয়, পেশার কারণে । ভিনদেশি কারো কাছে নয়, দেশি জনের কাছে । জিজ্ঞাস করে বসেন – ডাক্তারিও করেন, আবার লেখালেখিও করেন ! কেমন করে !
দেশি লেখক ডাক্তারের সংখ্যা কম । অথবা বলা যায় – বর্তমানে ডাক্তার লেখকের সংখ্যা কম । হাসপাতাল আর চেম্বারে সাফা-মাওয়া তে ব্যস্ত ওনারা । আবার যে সব ডাক্তার বর্তমানে লেখক হিসাবে আছেন বা লিখছেন, তাদের মান লেখক পর্যায় পড়ে কিনা সন্দেহ । তবে দু’ চারজন ব্যতিক্রম । ওনারা ভালো কিছু লিখতে চেষ্টা করেন ।
দেশি লোকজনের ধারনা, ডাক্তার হলে লেখালেখির এতো সময় কোথায় ।
অনেকে ভাবেন, ডাক্তার মানে সারাদিন ছুরি-কাঁচি, সুঁই, সিরিঞ্জ আর স্টেথো নিয়ে দৌড়াবেন ! তার কোনো কবিতার আকাশ নেই, কোনো হৃদয় তার চোখে মেঘের আড়ালে বৃষ্টি দেয় না, তিনি কোনো হরিণী চোখ দেখে শীষ দিতে জানেন না, বিজ্ঞানের কঠিন সত্যকে তিনি গল্পের মতো বলতে পারেন না !
যাক, প্রসঙ্গ যখন এলো, কিছু গল্প বলি । ডাক্তার লেখকদের গল্প । লেখক ডাক্তারদের গল্প ।
প্রাচীন গ্রিক দেব এপেলোকে ধরা হতো মেডিসিন এবং কাব্যের দেব । জিউস এবং লেটোর সন্তান এপোলো ছিল প্রাচীন গ্রীকের সবচেয়ে বেশি গুনের অধিকারী দেব । সংগীত থেকে আরোগ্য, যুদ্ধ থেকে প্রকৃতি, অনেক গুনের অধিকারী এপোলো ছিল গ্রিক এবং রোমান মিথের চিকিৎসক দেব ।
এবার যাই মধ্যযুগের ইবনে সিনা’র কাছে । এগারো শতকে ইসলামিক এই স্কলার ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ , দার্শনিক, সাহিত্যিক এবং চিকিৎসক । ফাদার অফ মেডিসিন নামে পরিচিত আবিসিনা বা আবু আলী সিনা জন্মেছেন আজকের উজবেকিস্তানের বুখারে । ৪০ টি বই লিখেছেন চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর, ১৫০ টি বই লিখেছেন দর্শন, সাহিত্য, কাব্য, এমনকি ধর্মতত্ত্বের উপর । তার বিখ্যাত Canon of Medicine বইটি ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের বেশিরভাগ মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭ শতাব্দি পর্যন্ত মেডিসিনের প্রধান বই হিসাবে পড়ানো হতো । এমেরিকান একটি প্রকাশনী ১৯৭৩ সালেও বইটির একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন !
খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাসে যীশু খ্রীষ্টের পর যে চারজন ব্যক্তি গুরুপ্তপূর্ণ : Mathew, Mark, Luke, John, যারা ইতিহাসে নিউ টেস্টামেন্টের ২৭ টি চ্যাপ্টারের প্রথম চারটি চ্যাপ্টার গসপেলের ধর্মযাজক লেখক । সহজ করে গসপেল হলো যীশুর কথা এবং জীবনের বর্ণনা । অনেকটা হিন্দু ধর্মে উপনিষদ হলো বেদের ব্যাখ্যা, ইসলাম ধর্মের হাদিস হলো মহানবীর জীবন, কথা এবং কাজের বর্ণনামূলক ব্যাখ্যা । যাইহোক, এই St. Luke ছিলেন গ্রিসে জন্মগ্রহণ করা এক ডাক্তার । একইসাথে ডাক্তারি, লেখালেখি এবং যীশুর বাণী প্রচার করতেন ।
অনেকেই কোপার্নিকাসের নাম শুনেছেন । পৃথিবীর পরিবর্তে সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের মডেল ঘোষণা দিয়ে যিনি আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছেন, পোল্যান্ডে জন্ম এই কোপার্নিকাস একাধারে গণিতজ্ঞ, রাজনীতিক, জ্যোতির্বিদ, লেখক, বিজ্ঞানী, এমনকি ইকোনোমিস্ট ছিলেন, অনেকেই জানেন না – তিনি একজন ভালো চিকিৎসক ছিলেন ।
যারা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র-ছাত্রী, ফাদার অফ ইলেকট্রিসিটি এন্ড মেগনেটিজম বলা হয় যাকে, উলিয়াম গিলবার্টের নাম শুনেছেন । তিনি একইসাথে একজন চিকিৎসক, পদার্থবিদ, এবং ভালো লেখক ছিলেন । ষোলো শতাব্দীতে রানী প্রথম এলিজাবেদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক গিলবার্ট ইলেকট্রিসিটি শব্দটিও তার কোনো এক লেখায় সর্ব প্রথম ব্যবহার করেন ।
শেক্সপিয়রের অনেকগুলো কমেডি নাটকের একটি হলো As you like it । শেক্সপিয়র এটা লিখেছিলেন ১৫৯৯ সালে । কিন্তু গবেষকরা পরবর্তীতে দেখেছেন – শেক্সপিয়র নাটকের মূল ঘটনাটি নিয়েছেন ওই সময়ের আরেকজন বিখ্যাত লেখকের একটি লেখা থেকে । তিনি হলেন Thomas Lodge । ১৫৯০ সালে Rosalynde নামের একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেন Lodge, শেক্সপিয়র সেটা থেকে প্লট ধার করে নাটক লেখেন । লন্ডন শহরের ওয়েস্ট হ্যাম-এ জন্মেছিলেন Lodge । যেখানে বর্তমানে ইংল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব West Ham আছে । Lodge একাধারে ডাক্তার এবং সেই সময়ের জনপ্রিয় লেখক ছিলেন । নাটক, গল্প, কবিতা, এমনকি ভ্রমণ কাহিনী লিখে গেছেন । এমনও বলা হয় শেক্সপিয়রের হেনরি সিক্স নাটকের দ্বিতীয় পার্ট তার কোনো একটি লেখা থেকে নেয়া । ইতিহাসের অনেক আসল নায়কের নাম হারিয়ে যায়, খলনায়করা হয়ে ওঠে আসল নায়ক ।
আজকের ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি রাজনীতির জনক, ফাদার অফ লিবারেলিজম বলা হয় যাকে, সতেরো শতাব্দীর দার্শনিক জন লক ছিলেন দার্শনিক, লেখক, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী এবং সর্বশেষে ওই সময়ের একজন বিখ্যাত চিকিৎসক । দর্শনের গভীর তত্ত্ব Empiricism উপর লেখার পাশাপাশি বিজ্ঞানের উপর কাজ করেছেন সেই সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল, রবার্ট হুক’দের সাথে । বিংশ শতাব্দীতে সিগমন্ড ফ্রয়েডের থিওরি অফ মাইন্ড লকের এমফেরিকেল দর্শন তত্ত্বেরই আধুনিক সংস্করণ ।
এবার ফ্রয়েডের কথায় আসি । ফ্রয়েড নিজেও একই সাথে ডাক্তার, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক, এমনকি সাহিত্যিক ছিলেন । Anthropology এর উপর ফ্রয়েডের বিশদ ধারনা থাকায় totem and taboo থেকে শুরু করে civilization and its discontents নিয়ে ধর্মের সাথে সাইকো এনালাইসিস সংযুক্ত করে বিংশ শতাব্দীর চিন্তা ধারাকেই বদলে দেন তিনি । তার চিকিৎসা গবেষণার সাথে লেখক শৈলী সাইকো এনালাইসিসের বইগুলোকে গত শতাব্দীর ক্লাসিকে পরিণত করে । একজন নিউরোলজিস্ট ডাক্তারের মৌলিক চিন্তা আজ সাহিত্যিক থেকে ফিল্ম মেকার, ছবি আঁকিয়ে থেকে বিজ্ঞানী, রাজনীতি থেকে অর্থনীতির বিষয়গুলোতে প্রভাব ফেলেছে ।
আইরিশ কবি ও উপন্যাসিক ওলিভার গোল্ডস্মিথ এডিনবরা ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়েছিলেন, কিন্তু ডিগ্রি না নিয়ে তাস খেলে আর লেখালেখি করে কাটিয়েছেন ।
সতেরো শতাব্দীর পরিচিত দার্শনিক থমাস ব্রাউন একাধারে দার্শনিক, লেখক এবং চিকিৎসক ছিলেন । প্রথম জীবনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আর্টসের উপর পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে ইতালির বিখ্যাত University of Padua তে মেডিসিনের উপর পড়াশোনা করে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ডাক্তারি করেন । সতেরো শতাব্দীতে পাদুয়া ইউনিভার্সিটি মেডিসিনের জন্যে খুব বিখ্যাত ছিল।
আঠারো শতকের শেষের দিকে চার্লস ডারউনের দাদা Erasmus Darwin ছিলেন ডাক্তার, কবি, প্রকৃতিবিদ এবং দার্শনিক । মানবতাবাদি Erasmus Darwin সহ আরো কয়েকজন ১৭৮৭ সালে ইংল্যান্ডে দাস ব্যবসা বন্ধ করবার প্রথম উদ্যোগ নেন এবং The Society for the Abolition of the Slave Trade নামের একটি গ্রূপ তৈরী করেন । প্রথমে অনেক লেখালেখির মাধ্যমে ব্রিটিশ জনগণকে দাস প্রথার বিপক্ষে শিক্ষিত এবং সচেতন করে তুলেন । তার এবং সোসাইটির প্রচেষ্টায় ১৮০৭ সালে সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশরা সর্ব প্রথম আইন করে দাস প্রথা বন্ধ করেন । যে প্রথা এবং ব্যবসাটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছিলো, প্রতিটি ধর্ম পর্যন্ত এই অমানবিক প্রথাকে চালু রেখেছিলো শতাব্দীর পর শতাব্দী, একজন অসামান্য ডাক্তার এবং লেখক Erasmus Darwin সহ আরো কয়েকজন দার্শনিক, লেখক, বিজ্ঞানীর উদ্যোগে মানব ইতিহাস তার কালো অধ্যায় থেকে মুক্তি পেলো । আজকের যুগে অনেক ডাক্তাররা বিজ্ঞান নিয়ে যেখানে সামান্য দু কলম লেখার অযোগ্য, Erasmus Darwin রা সহ আরো কিছু ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা আঠারো শতাব্দীর শেষের দিকে Lunar Society নামের একটি গ্ৰুপ তৈরী করেছিল, যাদের কাজ ছিল বিজ্ঞানকে সহজ করে ইংরেজ জনগণের সামনে তুলে ধরে তাদেরকে বিজ্ঞানে শিক্ষিত করে তোলা । একটি জাতির শিক্ষিত শ্রেণী একদিনে তৈরী হয় না । তার পেছনে কিছু মানুষের অসামান্য অবদান থাকে, কিন্তু ইতিহাস হয়তো মানুষগুলোকে মনে রাখে না ।
উনিশ শতকের ইংরেজ সেরা কবি জন কিটসের নাম শুনেনি, ইংরেজি সাহিত্য পড়া এমন স্টুডেন্ট তেমন একটা পাওয়া যাবে না, যিনি একজন চিকিৎসকও ছিলেন । পঁচিশ বছর বয়সে যক্ষায় মারা যাওয়া এই জগৎ খ্যাত রোমান্টিক কবি আজকের কিংস কলেজ লন্ডনে মেডিসিনের উপর পড়েছিলেন ।
রাশিয়ান লেখক, নাট্যকার, ছোট গল্পের জনক বলা হয় যাকে, সেই আন্তন চেকভ ছিলেন একজন ভালো চিকিৎসক । ফরাসি মোপাসাঁ র সাথে চেকভের ছোটগল্প বিশ্ব সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি । লেখালেখি এবং চিকিৎসা শাস্ত্র, দুটোই চালিয়ে যাওয়া এই মহান লেখক দুষ্টমি করে বলতেন, “Medicine is my lawful wife, and literature is my mistress.”
জার্মান এপিক লেখক গ্যেটের বন্ধু শিলার ছিলেন জার্মানির ইতিহাসে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, দার্শনিক, কবি, প্রাবন্ধিক এবং চিকিৎসক ।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর উপন্যাস লিখে যিনি ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হয়ে ছিলেন, ইংরেজ লেখক, নাট্যকার সমারসেট মম একাধারে চিকিৎসক, ডিপ্লোম্যাট, সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট এবং মহাযুদ্ধের সময় রেডক্রসে কর্মরত একজন ডাক্তার ছিলেন ।
অনেক ডাক্তাররাও জানে না যে আধুনিক মেডিসিনের জনক উইলিয়াম ওসলার, কানাডিয়ান এই বিখ্যাত ডাক্তার, আমেরিকার মেরিল্যান্ডের বিখ্যাত জন হপকিন্স হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা, হিস্ট্রি অফ মেডিসিনের গুরু, বেডসাইড ক্লিনিকেল ট্রেইনিং প্রচলন করেন প্রথম যিনি, ব্যক্তিগতভাবে প্যাথোলজিস্ট এবং এমন ডাক্তাররা কম আছেন যারা পড়ে নি তার বিখ্যাত মেডিসিন টেক্সট বুক The Principles and Practice of Medicine, তিনি একাধারে এক ক্ষুরধার লেখক, ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ এবং ডাক্তারদের ডাক্তার ছিলেন !
শার্লক হোমসের জনক আর্থার কোনান ডোয়েল একজন ভালো চিকিৎসক ছিলেন তার সময়কালে । এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনে পড়াকালীন অনেক ডিটেকটিভ লেখার পাশাপাশি এই লেখক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন ।
করোনা ভাইরাসের এই সময়ে যার কথা না বললেই নয় । Edward Jenner । যাকে বলা হয় ভ্যাকসিনের জনক । ১৭৯৬ সালে স্মলপক্স ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে জেনার সর্ব প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন । এডওয়ার্ড জেনার একজন চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং সুলেখক ছিলেন । চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়েও অনেক লেখা লিখেছেন তিনি । অক্সফোর্ডের বিখ্যাত Jenner Institute যা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন গ্ৰুপের সাথে কাজ করছেন, এটি Edward Jenner এর নাম অনুসারে করা হয়েছে । জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরী ভ্যাকসিন নিয়েই অক্সফোর্ড গ্রূপ কাজ করছে বর্তমানে ।
কাবুলে জন্ম নেয়া, ইরানে আশ্রয় পাওয়া, প্যারিসে কৈশোর কাটানো এবং সর্বশেষে আমেরিকায় রিফিউজি হয়ে কেলিফোর্ণিয়ার সান্ডিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারনাল মেডিসিনে রেসিডেন্সি করা A Thousand Splendid Suns, The Kite Runner এর মতো বিশ্ব সাহিত্যকে নাড়া দেয়া বিপুল জনপ্রিয় দুটি গ্রন্থের প্রণেতা একুশ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমেরিকান কথাসাহিত্যিক খালিদ হুসাইনি পেশায় একজন ডাক্তার ।
বাংলা সাহিত্যের তিন দিকপালের একটু গল্প করি ।
কবিতায় রবীন্দ্রনাথ, কথাসাহিত্যে শরৎচন্দ্র এবং ছোটগল্পে বনফুল । তিনজনের একটা মজার মিল ছিল । তিনজনই রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কালের । না, এটা মিল নয় । তিনজনই সে যুগে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন হোমিওপ্যাথির প্রাকটিস করেছেন । নিজে, পরিবারে, লেখক বন্ধুদের, এমনকি প্রজাদেরকেও হোমিও ওষুধ দিতেন । ভ্রমণে গেলে বাক্স পেট্রার সাথে হোমিও দাওয়াইয়ের সুটকেস থাকতো । চিঠিপত্রেও তিনি হোমিও প্রেসক্রিপশন লিখে পাঠাতেন শুভাকাঙ্খীদের । শরৎচন্দ্র বার্মার রেঙ্গুনে থাকাকালীন দীর্ঘ সময় শ্রীকান্তের মতো উপন্যাস লেখার কালে হোমিওপ্যাথির চর্চা করতেন, কেরানি চাকরির পাশাপাশি পাড়ায় রোগী দেখতেন বিকেলে । পরে কলকাতায় ফিরে ভাগলপুর এবং বালিগঞ্জে হোমিও প্রাকটিস করতেন অনেকদিন ধরে । বাংলা সাহিত্যের মোপাসাঁ বনফুল ওরফে বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন এলোপ্যাথিক ডাক্তার, একজন ভালো প্যাথোলজিস্ট ।
আরো অনেকের নাম বলা যায় । আরো অনেকের লেখক জীবন এবং চিকিৎসক জীবন নিয়ে বলা যায় । মেক্সিকান ন্যাশনাল পুরস্কার প্রাপ্ত ঔপন্যাসিক আজুলা (Azuela), জার্মান কবি এবং প্রাবন্ধিক Gottfried Benn, যিনি পাঁচ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন, জার্মান দার্শনিক এবং লেখক Büchner, উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ জনপ্রিয় ভ্রমণ লেখক ডেভিড লিভিংস্টোন, ভারতে কাজ করতে গিয়ে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ম্যালেরিয়ার কারণ আবিষ্কার এবং ১৯০২ সালে যে কারণে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পান Ronald Ross, বিখ্যাত জাপানি নাট্যকার Kobo Abe, ইন্টারনেট দুনিয়ায় জনপ্রিয় ভারতীয় আমেরিকান স্পিরিচুয়াল লেখক দীপক চোপড়া, মিশরীয় আন্তর্জাতিক লেখক ইউসুফ ইদ্রিস, এরা প্রত্যেকেই পেশায় চিকিৎসক, মননে লেখক ।
জ্ঞানের কোনো ভাগ নেই । জ্ঞান মানে জীবনের আন্তঃসম্পর্ক গুলো বোঝা । পেশা জীবনের ছোট একটি অংশ । জ্ঞান হলো জীবনের সেই বিভিন্ন অংশগুলোর সমন্বয়।
যে পারে, সে সব পারে । যে পারে না, সে অজুহাত ঝাড়ে ।
সূত্র :
1. English and American Writers of Medical Background – JD Gordon
2. Medicine and Literature – ER Peschel
3. On Doctors Who Were Writers – DW Smithers
4. World Union of Physician Writers
5. Literature and Medicine Journal : Johns Hopkins University
© অপূর্ব চৌধুরীঃ চিকিৎসক এবং লেখক । জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড । গ্রন্থ ৭ । উল্লেখযোগ্য বই : অনুকথা, জীবন গদ্য, বৃত্ত ।