সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু
দৃষ্টিনন্দন ফুলের নাম ঢোলকলমি ফুল। গাছের নাম ঢোলকলমি গাছ।
নব্বই সনে কিংবা তার দু এক বছর আগে দেশজুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢোলকলমি গাছে থাকা একধরনের পোকা। গুজব রটে যায়, এই পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে।
এইসব খবর রেডিও, টিভি, পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মত কবে কজন মরল কজন হাসপাতালে গেল সেরকম ভাবে প্রচারিত হয়েছিল মাসজুড়ে। সারাদেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমন কি স্থানীয় প্রশাসনও ঢোলকলমি গাছ কেটে সাবার করেছিল। এই বিদঘুটে নামের পোকাটি যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো আমাদের এই দেশে, তার জুড়ি মেলা ভার! শুধু গ্রামে না, ঢোল কলমি পোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছিলো খোদ ঢাকা শহরেও। এটা না কি খুব বিষাক্ত এক পোকা, যার সংস্পর্শে আসলেই নির্ঘাৎ মৃত্যু। আতঙ্ক এই পর্যায়ে পৌঁছেছিলো, যে ছোট বড় সবাই তটস্ত থাকতো কখন যেনো কি হয়।
আতংক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের উপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারী নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়।
ঢোলকলমি আতঙ্ক, গুজব এবং মিডিয়ার ভূমিকা এখন সাংবাদিকতার ছাত্রদের শিক্ষার বিষয়। অথচ নদীতীর, খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখা, ভূমিক্ষয় রোধ, ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আমরা হুজুগে বাঙালী গুজবে বিশ্বাস করে সারাদেশ প্রায় ঢোলকলমি মুক্ত করে ফেলেছিলাম। বাতাস দিয়েছিল আমাদের মিডিয়া। যেমন এখনও বাতাস দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ইস্যুতে। আবার বাতাস না দিয়ে বাতাস আটকেও রাখে বণিকের হিসাবের মত।
কড়চা/ এস এ এন