কড়চা ডেস্ক : মানিকগঞ্জে বেড়ে উঠা টাঙ্গাইলের বড় কালীবাড়ি এলাকার নৃত্যশিল্পী তিথী সেন সম্প্রতি গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না তার ভক্ত এবং স্বজনরা। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একই দাবি করা হচ্ছে।
গত ১৩ এপ্রিল গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা এলাকায় ‘জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী তিথী সেন হত্যার পরিকল্পনাকারী ও সহযোগিতাকারী বিয়ে করে এবং না করে একাধিক নারীর জীবন নষ্টকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সজল রায় এবং তার সহযোগীদের বিচার চাই’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন নৃত্যশিল্পী তিথী সেনের ভক্তবৃন্দরা।
মানববন্ধনকারীরা জানান, গত ৮ এপ্রিল নৃত্যশিল্পী তিথী সেন আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক পুলিশ অফিসার সজল রায় (৩০) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। ফেসবুকসহ যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে তারা জানতে পারেন তিথী আত্মহত্যা করার পিছনে সজল রায়ের হাত থাকতে পারে। সজল রায় আগেও দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম সুশান সরকার(নিকু)। সজল রায়ের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মানিকগঞ্জের মেয়ে সুশান এখন অন্য স্বামীর সাথে সংসার করছেন বলে জানা যায়। সজল রায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রোকসানা মির্জাকে। তাদের সংসারে ব্যাপক অশান্তি চলার পর্যায়েই নৃত্যশিল্পী তিথীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। বিয়ের আশ্বাসও দেওয়া হয়।
সজল রায়ের বর্তমান স্ত্রী সংগীত শিল্পী রোকসানা মির্জার ঘনিষ্ঠ জনদের সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক পুলিশ অফিসার সজল রায় প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে রোকসানা মির্জাকে বিয়ে করেন। শর্ত থাকে বিয়ের পর সজল রায় মুসলমান হয়ে যাবেন। কিন্তু বিয়ের পর সজল রায় ও তার মা সরস্বতী মন্ডল তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন। তাকে জোড় করে শাখা সিঁদুর পরানো হয়। সংসার বাঁচাতে তিনি তাতে বাধ্য হন। তারপরও একই বিছানায় থেকে অন্য নারীদের সাথে প্রেমালাপ, চ্যাটিং, ছবি দর্শন এবং বিভিন্ন স্থানে তাদের সাথে ডেটিং করে সজল তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতন।
নৃত্যশিল্পী তিথী সেনের সাথে সজল রায়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে সূত্র আরো জানায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে গিয়ে তিথী সেনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হন সজল রায়। পরে তিথী সেনকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে মেলামেশা করেন। অত:পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি বা ভিডিও দিয়ে তিথী সেনকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন সজল। এসব কথা তিথী তার স্বজনদের বলতো।
সূত্র জানাচ্ছে, সজলের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকসানা মির্জা তিথীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার চেয়ে সম্প্রতি ফেসবুক আইডি’তে একটি পোস্ট লিখেন। কিন্তু তার পোস্ট সরিয়ে নিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ আসছে। তিথীর এক বান্ধবী আয়শা বেগমকেও একই কারণে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন আতঙ্কে আছেন।
এ ব্যাপারে তিথীর মা’র এক টেলিফোন কল থেকে জানা যায়, তিনিও তিথীর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচার চান। সজলের সাথে তার মেয়ে তিথীর প্রায়ই টেলিফোনে কথা হতো বলে তিনি জানান। তিথীর চলাফেরার ওপরও নজরদারি করতো সে। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হতো। তিথীর মৃত্যুর পাঁচদিন আগেও কথা কাটাকাটি হয়েছে। মৃত্যুর আগে ঘরে ঢোকার সময়ও কারও সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। তবে কার সাথে তিথী কথা বলছিল তা তার মা বলতে পারেননি।
তিথীর মা ওই টেলিফোন সংলাপে বলেন, তিথীর মৃত্যুর বিষয়টা মন্ত্রী দেখছেন (নির্দিষ্ট কোন মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করেন নি)। পুলিশের লোকজনও তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন। তবে কোন মামলা হয়নি বলে তিনি জানান। মামলা করবেন কিনা সে ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট ধারণা দেননি তিনি। তিনি জানান, তিথী মৃত্যুর আগে যে মোবাইল সেটে কথা বলেছে সেটি লাশের সাথে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। ওই সেটের কল লিস্ট দেখে অনুসন্ধান করলে অনেক তখ্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসংগত, গত বছর নিউইয়র্কে স্ত্রী রোকসানা মির্জাকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে নিউইয়র্ক পুলিশের (এনওয়াইডিপি) অফিসার প্রবাসী বাংলাদেশী সজল রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। চাকরি বহাল থাকলেও বন্দুক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা সজল রায় একজন সংগীত শিল্পীও। মানিকগঞ্জের ছেলে সজল রায় বর্তমানে নিউইয়র্ক কুইন্স-এ বসবাস করছেন।
(সহায়ক সূত্রঃ বায়ান্ন একাত্তর খবর, ইউএসবিডি২৪.কম, আমেরিকা বাংলা)