বাবার মৃত্যু
রুহুল ইসলাম টিপু
মোঃ আনছার আলী, আমার বাবা। মৃত্যু ২৮ ডিসেম্বর ২০২০। বছর শেষ হওয়ার একদিন বাকী। ২০২০ এ কড়চা’য় এটিই আমার শেষ লেখা। মন আর লেখায় নেই। বাবার জন্ম ১৯৩৫ সালে। সে হিসেবে ৮৫’ তে শেষ করলেন জীবন। রেখে গেলেন প্রিয়তমা স্ত্রী আমার মা রওশন আরা বেগম, আমি সহ অপর দুই সন্তান, পুত্রবধু, নাতি নাতনি, নাতনির সন্তান, ভাই-বোন, শুভাকাঙ্খী ও বন্ধুবৃন্দ। ভীষণ সাদা মাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত খেয়ে গিয়েছেন লাল চালের ভাত। থাকার ঘর, ঘুমানোর জায়গা কিংবা পোষাক আশাক। কোন কিছুতেই অতি সাধারণের উর্ধে উঠতে পারেন নি। এজন্য আফসোস বা কষ্ট অনুভব করতে দেখিনি।
বাড়ি পুটাইল ইউনিয়নের মান্তা গ্রামে; তিনি ছিলেন সদু মুন্সীর দ্বিতীয় ঘরের তৃতীয় সন্তান, বড় এক বোন ছিলেন যিনি বিয়ের দুই দিনের মাথায় মারা যান। এরপর বড় ভাই, তিনিও প্রয়াত। এলাকার ৪ ভাইয়ের দ্বিতীয় বা মেঝ হিসেবে পরিচিত। সদু মুন্সীর বাবার নাম গেতু প্রামানিক। গেতু প্রামানিকের বাবা ছিলেন কোরআন প্রামানিক। এ তথ্য আমি বাবার নিকট হতে পেয়েছিলাম। সাত পুরুষের তথ্য যিনি রাখেন, তিনি একজন আধুনিক মানুষ। ফেসবুক পেজে ছোট ভাই আউয়াল বলেন, তার বাবার পর কাকার (আমার বাবা) ভালোবাসায় সিক্ত হন। আউয়াল হচ্ছেন আমাদের প্রতিবেশি প্রাক্তন পৌর কমিশনার প্রয়াত কাদের কাকা’র বড় ছেলে। আমার বাবার নিকট হতে এ ভালোবাসার প্রাপ্তি সংবাদ আমাকে বেশ আবেগ আপ্লুত করে। অনুভব করি মান্তা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত তার ভালোবাসার মধ্যে ছিল অজস্র মানুষ। মানুষকে ভালোবাসা, স্নেহ আর মমতা প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অকৃত্রিম এবং আন্তরিক। এ বিশালতার সুদীর্ঘ বিবরণ আজ শুধু মনেই পড়ছে। কিন্তু লেখনির শক্তি বড় সীমিত।
বাবার অহংকারের জায়গা ছিল তার তিন সন্তান। বড় আদর মেশানো মমতার ভালোবাসা পেয়েছি। রিজার্ভ ট্যাঙ্কের উত্তর কোণায় বাবার অফিস ছিল। কৃষি সম্প্রসারণের মহকুমা অফিস। আমরা তিন ভাই চকের রাস্তা দিয়ে বিকেলে আসতাম বাবার অফিসে; বাবা নিয়ে যেতেন আমাদের হাই স্কুলের ক্যান্টিনে; রস গোল্লা আর থাপড়ানো রুটি। শীতকালে মান্তার মাঠে মেলা। বর্ষার পূর্বে মান্তার মাঠে ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন এবং উপভোগ। বর্ষায় হেলাচিয়ার নৌকা বাইচ। গ্রীষ্মের স্কুল ছুটিতে ঝিটকা নানা বাড়িতে আম মৌসুমের আনন্দ। সবই এখন অতীত।
বাবা, আপনি আমার অহংকার। আপনার আদর্শ, শিক্ষা, জীবন ব্যাপী কর্মের ব্যাপ্তিই বলে দেয় আপনার বিশালতা। কড়চা মানিকগঞ্জের, আপনি মানিকগঞ্জের। মানিকগঞ্জের বাইরে কোথাও আপনি যেতে চান নি। এমন কি সরকারি চাকুরির বদলিকে আপনি অগ্রাহ্য করেছেন, মানিকগঞ্জকে ভালোবেসে। মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করে মানিকগঞ্জেই শুয়ে আছেন। আপনার মতো মানুষের বড় প্রয়োজন মানিকগঞ্জের এবং বাংলাদেশের। আমার বাবার মতো মোঃ আনছার আলীর জন্ম হোক ঘরে ঘরে। তবেই মানুষ ও দেশের কল্যাণ। আপনার ক্ষুদ্র অবদানই দেশের বৃহত্তর উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। দেশ এবং আমরা কখনও আপনাকে ভুলবো না। আর আমি হতে চাই দ্বিতীয় মোঃ আনছার আলী।
কড়চা/ আর ই টি