কড়চা রিপোর্ট : স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মা নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার বাস চালকের সহকারী (হেলপার) জীবন মিয়ার (২৮)। সংসারের একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি তিনি। মানিকগঞ্জে শুভযাত্রা পরিবহনে চালকের সহকারীর কাজ করেই তাঁর সংসার চলে। তবে ‘লকডাউনে’র কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেকার তিনি। পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদরের জয়রা গ্রামের জীবন মঙ্গলবার (৪ মে) এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ সহায়তা নিতে। ত্রাণসহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার মইদ্দে এক মাস ধইর্যা বাস বন্ধ। কাম-কাইজ নাই, আয়-রোজগারও নাই। ঘরে চাইল-ডাল নাই। এই ত্রাণ পাইয়া ঈদের আগে খুব উপকার অইলো। অন্তত ঈদ পর্যন্ত খাওনের ব্যবস্থা অইলো।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠোকাতে সরকানি নির্দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে উপার্জন বন্ধ থাকায় মানিকগঞ্জের প্রায় ছয় হাজার পরিবহন শ্রমিক চরম বিপাকে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকসহ ৫০ জন কর্মহীন পরিবারের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এতে সহায়তা করে হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা)। সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম আলো মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা এসব ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, আলু ও ছোলা ছিল।
এ সময় ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আজাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল ইসলাম শিকদার, জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি দীপক কুমার ঘোষ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার, উন্নয়নকর্মী বিমল রায়, সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান, প্রথম আলোর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল মোমিন, বন্ধুসভার আহ্বায়ক আবু সালেহ, সদস্যসচিব আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা সদরের বৈতরা গ্রামের বাসচালক মোজাফ্ফর হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়েছেন। তিনিও এসেছিলেন খাদ্যসহায়তা নিতে। তিনি বলেন,‘আমাগো খোঁজখবর কেউ নেয় না। ঈদের আগে বউ-পোলাপান নিয়ে কি যে কষ্টে আছি! আপনাগো পত্রিকা থেইক্যা এই ত্রাণ পেয়ে ভালোই অইলো।’
জেলা সদরের মেঘশিমুল গ্রামে স্ত্রী, শিশুসন্তান ও বৃদ্ধ মা–বাবাকে নিয়ে বাসচালক মো. জুয়েলের (৩০) সংসার। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুভযাত্রা পরিবহনের এই বাসচালকও বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তা পেয়ে জুয়েল বলেন, ‘চার মাসের মেয়ের জন্যে প্রতিদিন দুধ কিনতে অয়। ঘরে স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা–বাবা আছে। তাঁদের মুখে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে অয়। গাড়ি বন্ধ থাকায় ভীষণ কষ্টে কাটছে দিন। এই ত্রাণে কিছুটা অইলেও উপকারে আইবো।’
জেলার ঘিওর উপজেলার কেল্লাই গ্রামের হালিম মোল্লা বলেন, তিন সন্তানের সবাই পড়ালেখা করে। বড় ছেলে আলামিন হোসেন একাদশ ও ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে স্ত্রী আছেন। তিনি বলেন, ‘এক মাস ধইর্যা লকডাউনে গাড়ি চালানো বন্ধ। হাতে টাকাপয়সা নাই। ঘরে থাকা চাল-ডাল যা আছিল সপ্তাহখানেক চলছে। এরপর থেইক্যা ধারদেনা করে বাজারসদাই করছি। এহন তো আর পারতাছি না। ঈদের আগে এই ত্রাণ খুবই দরকার আছিল।’
জেলা সদরের দিঘী গ্রামের রিকশাচালক তারা মিয়ার (৬২) অভাব-অনটনের সংসার। প্রায় তিন মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি অসুস্থ। সংসারে উপার্জনের আর কেউ নেই। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে ছেলের কামাই (উপার্জন) বন্ধ। আমিও রিকশা চালাইতে পারি না। আমাগো মতো মানুষের পাশে আপনারা দাঁড়াইছেন, আল্লাহ আপনাগো মঙ্গল করুক।’
কড়চা/ এম এম