মানিকগঞ্জ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ায় উত্তেজনা

কড়চা রিপোর্ট : মানিকগঞ্জ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট এবং স্টাফদের কর্তব্যে অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বিকেল তিনটার দিকে রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত হাসপাতালে যান স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

নিহত ব্যক্তির নাম সোহেল রানা সোহাগ (৩০)। জেলার হরিরামপুর উপজেলার ধুলসুরা ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র। তিনি ওই উপজেলার ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে চাকুরী করতেন। গৃহিনী স্ত্রী এবং ছয় বছরের এক কন্যা রয়েছে তার। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সোহেল রানা গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিজবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আগে থেকেই তার ফুসফুসের সমস্যা ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি আমাকে ফোন করে জানান যে, তার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। সকাল ১১ টার দিকে তাকে হাসপাতালে আনা হয় এবং ৭১০ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু আধাঘন্টা পর অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে চিকিৎসক বা নার্সদের কাউকে ডেকে পাওয়া যায়নি। তখন তার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন রোগীর পরিবারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে রোগী মারা যায়। রোগীর স্বজনরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানালে ঘটনাস্থলে দ্রুত প্রশাসনের লোকজন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নিহত সোহের রানার মামা আব্দুল মান্নান বলেন, রোগী ভর্তি করার পর যে অক্সিজেন দেওয়া হয় তাতে অক্সিজেন ছিলো না। দায়িত্বরত চিকিৎসককে আমরা বললাম, চিকিৎসা দিতে না পারলে আমাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তিনি কোন ধরনের সহায়তা করেননি। তার কারণেই আমার ভাগ্নে মারা গেছে। আর মহিলা নার্সও আমাদের সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেছে। ঘটনার পর আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে ডিসি, সিভিল সার্জন, ইউএনও ও ওসি সাহেব ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এবিষয়ে ১০০-শয্যাবিশিষ্ট কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মানবেন্দ্র সরকার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। হাসপাতালে আনার পর দ্রুত তাকে ভর্তি করে অক্সিজেনসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে আমরা অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করি। কিন্তু যদি অক্সিজেন এর সংকট থাকে, তাহলেতো আমাদের একটু সময় দিতে হবে। আমাদের তরফ থেকে কোন গাফিলতি ছিল না।

তিনি বলেন, আমাদের সিট আছে ১০০ জনের। রোগী ভর্তি আছে ২৩০ জন। ১৪ টি হাইফ্লো অক্সিজেনের মধ্যে সচল আছে ১২টি। এছাড়া, সাধারণ অক্সিজেন আছে ৭০ টি এবং সিলিন্ডার আছে ১৫৬ টি। সিটের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। তারপরেও আমরা আন্তরিকভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, রোগীর অবস্থা সংকটাপূর্ণ থাকায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. কামাল হোসেন রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা তার কথা শুনেননি। রোগীর অবস্থা খারাপ শুনে চিকিৎসক ও নার্সরা গিয়ে দেখেন রোগী মারা গেছে। তারা চিকিৎসককে মারধর করেছে। নার্সরা ভয়ে পালিয়ে রুমের ভেতর গিয়ে প্রবেশ পথ আটকিয়ে দেয়। আমরাতো সাধ্যমত চেষ্টা করছি। আমাদেরতো কোন গাফিলতি নাই।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ার খবরে আমিসহ আমাদের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ দ্রুত হাসপাতালে যাই এবং রোগীর লোকজনকে শান্ত করি। রোগী মারা গেলে রোগীর লোকজন উত্তেজিত হতেই পারে। কিন্তু, সেখানেতো ডাক্তারের কোন গাফিলতি ছিলো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষতো আন্তরিকতা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তাদের কোন গাফিলতি নাই। রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিলো।

কড়চা/ জেড এ বি

Facebook Comments Box
ভাগ