স্মৃতিতে অম্লান মানিকগঞ্জের আব্দুস সাঈদ
আব্দুর রাজ্জাক
মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া একটি ছায়া সুনিবির ছোট্ট গ্রাম। ঐ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুন্সী বাড়ির আব্দুস সাত্তার মুন্সী গ্রামের পরিচিত নাম। তার পিতা আব্দুস সালাম মুন্সী ব্রিটিশ সরকারের চাকুরি করতেন। একজন সদালোপী, পরহেজগার এবং ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে তৎকালীন মানিকগঞ্জে তিনি খুবই শ্রদ্ধাভাজন ও মান্যবর ছিলেন। আব্দুস সাত্তার মুন্সী ছিলেন মানিকগঞ্জ টাউন কমিটি (বর্তমানে মানিকগঞ্জ পৌরসভা) এর সেক্রেটারী। তার নয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন আব্দুস সাঈদ। তার জন্ম ১৯৫৩ সালে।
আব্দুস সাঈদ এর ছোট বেলা কাটে এই গ্রামের ছায়ায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বন্ধুসুলভ ও শান্ত প্রকৃতির। তিনি ১৯৬৮ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি., ১৯৭০ সালে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ১৯৭২ বিএ এবং ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এম.এ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কিছুদিন খাদ্য অধিদপ্তরে চাকুরির পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এর অধীনে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির মানিকগঞ্জ মহকুমার যুব সংগঠন হিসেবে যোগদান করেন। সে সময়ে মন্ত্রী, যুদ্ধকালীন সময়ে ২২ টি থানার সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা সদর ও গাজীপুরের এরিয়া কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হালিম চৌধুরী তার “১৯৮০ যোগ্যতায় অনুপ্রাণীত হয়ে জাপানে OISCA International প্রতিষ্ঠানে দুই বছর স্কলারশীপের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে তা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ১৯৮৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুদক) পরিদর্শক পদে যোগদান করেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজে মনোনিবেশ করেন। কোন সময় অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ১৯৯২ সালে তিনি জেলা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। স্ট্রোক-এ আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা রেখে যান। তার স্ত্রী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছেলে-মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তাদের বাড়িতে গোপন মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ছিল। তার মাতা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখাশুনা করেছেন, তাদের রান্না করে খাইয়েছেন। তিনি ও তার বাবা বান্দুটিয়া কাপালিপাড়ায় (হিন্দুপল্লী) সব সময় তাদের সহায়তা করেছেন।
তার বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা চিত্র রঞ্জন সিংহ বলেন, সাঈদ জীবনের ঝুকি নিয়ে সব সময় আমাদের কাপালিপাড়ায় (হিন্দুপল্লী) এসে খবর ও সাহস দিতেন। তিনি একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন।
বান্দুটিয়া গ্রামের মন্টু মাস্টার বলেন, সাঈদ এর মতো মানুষ আর আসবে না। তার ধ্যান ধারণা মানুষের সাথে মেশার যোগ্যতা ছিল অতুলনীয়, সে একজন পরোপকারী ছিলেন। আব্দুস সাঈদ বান্দুটিয়া গ্রামের বেশ কিছু মানুষকে চাকুনি দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ। তার জীবন যাপন ছিলো অত্যন্ত সাধারণ।
এই স্বল্প জীবদ্দশায় মানুষের জন্য কাজ করেছেন ক্ষণজন্মা মানুষটি। পৃথিবীতে মানুষের রয়ে যায় স্মৃতি। এখনো স্মৃতিতে অম্লান রয়েছেন আব্দুস সাঈদ।
কড়চা/এ আর
Facebook Comments Box