কবিতা, “উৎসর্গ” লিখেছেন, কবি প্রতিমা রায়বিশ্বাস

প্রতিমা রায়বিশ্বাস

উৎসর্গ
প্রতিমা রায়বিশ্বাস

এ চোখ এক জমি।
এখানে অঙ্কুরিত হয় এক মনরঙা বীজ।
অন্ত:করণে আর ঈশ্বর টানে বৃদ্ধি হয় রোহিনী এক গাছ।
ভিতরেও তার ফোটে ফুল।নাম স্বপ্নকলি।
ওখানেও ফুলের উপরে বাতাস বয়, আকাশ, রাত্রি।
ঈশ্বর পাওয়া অত কী সহজ?
তাহলে স্নেহ কুরবান চাইত না নিরাকার।
না না প্রেম নয়, শ্রদ্ধা নয়। সুতরাং স্নেহে জাগ্রত থাকেন মহাশক্তিধর।

ইব্রাহিম এবং আল্লাহ।
এখানে স্বপ্ন। স্বপ্ন। এবং স্বপ্ন সেই না ফোটা কলি।
ঘুমের ভিতরে জিইয়ে থাকে এ কলি একটি অধরা অন্তর্যামী।
পাঁচটি পাপড়ি তার, একটি ঈশ্বর অধিকার।
বৃন্ত আর লেগে থাকে মানুষের মনে।
রোহিনী সেই মন, সবুজ পাতায় পাতায় প্রেম রাখে জমা, ডালপালা আর লতিয়ে লতিয়ে চোখ-জমিতে শিকড় পুতে, শূন্যে
ছড়ায় মূলরোম।
যেখানে নিঃশ্বাস ফেলি, যেখান থেকে তুলি প্রশ্বাসও।

এখানে তাই জলের বদলে শিকড় শুষে নেয় প্রথমা বাস্তব, দর্শন।
সবুজ পাতায় পাতায় ফলানো থাকে প্রেম,
মূলরোমে চেয়ে থাকে আঁকুতি আমার, সন্ধান তোমার।
হয়ত তুমি কাছে, হয়ত তুমি দূর…
চোখ বলে ‘চলো চোখ খুলে শিকড় মেলো তুমিও,
স্বর্গপুরের আলিঙ্গন হোক।’
তাহলেই তোমার ভিতরে মেলে থাকা সেই পাতা, আরও হবে দীর্ঘ সবুজ….
এভাবেই রোহিনী খোঁজে সন্তানেও অন্তরতম স্নেহ।

এছাড়া এখানে জলের বদলে শিকড় শুষে নেয় আলো।
এত যে পরীর মত সেজেছে মানুষ,
ওই যে নীলকন্ঠ ফুল… ফুটেছে দেখো, ঈষাণ কোণে।
উপরে তার আকাশ। তারপর দেখা যায় কি মহাকাশ?
মনের গহনে যে ফুল নীল তার উপরেও আকাশ, মহাকাশ।
নিমেষে অনন্তে তাই ছড়িয়ে যেতে জানে মন।

চোখে যদি ভিতর-গাছের শিকড় পোতা থাকে,
এ বাতাস তবে পাতাল প্রমাণিত।
আমরা তবে পাতাল-শ্বাস নিয়ে পৃথিবীর হই।
ফুল তুলি। যে ফুল ফুটে থাকে ঘুমের ভিতরে
সে তো এক যোগাযোগ মাধ্যম। নীলরঙ।

যেভাবে বীজ আর গাছের মধ্যিখানে ফুল,
ফ্রয়েড শোনো, ঘুম থেকে স্বপ্ন ঝরে গেলে মৃত্তিকায়, গাছের মতই অঙ্কুরিত হয় বাস্তব।
যেভাবে মোবাইল থেকে ভেসে আসে দূর…দূর…হতে মানুষের স্বর, সুর ও অবয়ব।
সেভাবেই ঠিক স্বপ্ন একটি পথ।
এখানে ঈশ্বর আর মানুষের অবচেতন যাতায়াত। কথোপকথন।
ইসমাইল “তুই পরম স্নেহ আমার, তুই যদি সত্যি হোস
তবে শুনে রাখ্। স্বপ্নও আমার তবে সত্যি।
কেননা কিছুটা সময় সেখানে থাকতে বাধ্য আমি। ঘুমন্ত আমি স্বপ্নের ইশারায় চলি।
তাই তো জেনেছি “আল্লাহ-সন্তান।”
তোর নিবেদিত রক্তে রক্তে যদি পৃথিবীতে আল্লাহ আসে। ইসমাইল আন, মানুষ প্রজন্ম…. শেষ হোক।
ক্ষমা কর্ হে প্রবল স্নেহ আমার।”

কেননা এই তো জেনেছি স্বপ্নচর।
নিয়ান্ডারথাল
এভাবেই পুতে গেছে মাটিতে সভ্যতা। একটি ভ্রুণ।
বেদ, কোরান, বাইবেলে ডালপালা জাঁকিয়ে এখন এরাও দেখে ফুলে ফুলে সেই আকাশ, বাতাস…হাতের পাতায় মহাকাশ ডাকে।

স্বপ্নে এসে জিরোন যখন কিছুটা সময়, ক্লান্ত শক্তিধর।
তখনই বলেন কিছু কথা ‘শোন পৃথিবীজ তোরা ভালো থাক। এভাবেই থাক।
শিখে নে কিছু পদ্ধতির আবাদ। সময় সহজ হবে।’

মানুষ এবং ঈশ্বর এখানেই আলাদা।
মননে নয়, মননের নয়।
দূরত্ব আর দূরত্বে শুধু নির্বাক।
নাহলে মানুষও প্রার্থনায় বলে “আমিন”আল্লাহ।
দেহহীন তবু ভালো থাকো,
ভালো রাখো আকাশ, মহাকাশ, ব্রহ্মাণ্ড,
পৃথিবীর জীবন এবং সন্তান, স্নেহ।

ঐশ্বরিক জেদে উদ্ধত হয়েছে যে তরবারি, নিশ্চিত না ফেরা যে তরবারি।
জেদে, হুঙ্কারে মরিয়া যখন ইব্রাহিম ‘ আল্লাহ চাস উত্তরাধিকার? নে তবে সন্তান?
দিলাম। দান।
ঈশ্বর এবার তুমি আমার প্রজন্ম হও।’
আল্লাহ পারে নি, পারে না। নেয় নি সন্তান ।
এও এক মনুষ্য উৎসর্গ। এও এক কুরবান।

Facebook Comments Box
ভাগ