তিন শতকের জীবিত কিংবদন্তি/ মধুসূদন সাহা

তিন শতকের জীবিত কিংবদন্তি

মধুসূদন সাহা

শিরোনাম সঠিক। আকাশ থেকে না পরে শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। কারণ পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির শ্রবনে ও দর্শনে আমরা বধির প্রায়। তার প্রেক্ষিতে আমাদের সৃষ্টিশীল কিছু দর্শনে ও শ্রবনে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। এই কাহিনী হয়ত অনেকে জানেন, অনেকেই জানেন না। কারণ এই অধঃপতিত সমাজে সৃজনশীলতার এই কাহিনী সর্বজনের কাছে পৌঁছায় না। আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি তথাকথিত ভাইরাল হ‌ওয়া রানু মন্ডল ও কাচা বাদামের ভুবন বাদ্য করের নষ্ট সুরে।
যোগী স্বামী শিবান্দের জন্ম ১৮৯৬ এর আটই আগস্ট দরিদ্রতম এক পরিবারে। বাংলাদেশের সিলেটের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে। মাত্র ছয় বছরে পিতা মাতাকে হারানোর পর আত্মীয় স্বজনেরা নবদ্বীপের গোস্বামী আশ্রমের গুরু ওঙ্কারনাথ গোস্বামীর হাতে তুলে দেন। সেখানে পড়াশোনার সাথে সাথে অনগ্রসরদের সাহায্য করাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। কলকাতা মেডিক্যাল থেকে ডাক্তারি ডিগ্রীর পর ১৯২৫ সনে ২৯ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেন। পরে অনেক দেশ‌ও ভ্রমন করে তিনি ভারতের নবম প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশে ফেরেন। তারপর তিনি মানব কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ভারতের উড়িষ্যার রাজধানী পুরীতে অর্ধ শতক ধরে কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করেছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ও নিজের কুঁড়েঘরে চিকিৎসা দিয়েছেন।
তার কথায়, এই বিশ্ব‌ই আমার ঘর, বিশ্ববাসী আমার বাবা মা। তাদের ভালবাসাই আমার জীবনের পরম ধর্ম। দীর্ঘ জীবনের রহস্য সম্পর্কে তার বক্তব্য, নিয়মিত যোগ চর্চা। তেল মশলা ছাড়া স্বল্প আহার, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও ব্রহ্মচর্য।
মানবকল্যাণের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে দৃষ্টি আকর্ষন করে। এর আগে তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ভারতের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন মাননীয় রাস্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে। ১৯২২ এর ২১মার্চ সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের উপস্থিতিতে অধর্মের সাহায্য ছাড়াই খালিপায়ে হেঁটে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। ১২৬ বছরের বিজ্ঞান মনস্ক এই মহামানব নিজে করোনার টীকা নিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন।
বর্তমানে তিনি বেনারসের আসি ঘাটের কাছে কবীর নগর আশ্রমে অবস্থান করে সচৃ ভাবে সেবাব্রত চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিখ্যাত উক্তি, অল্পে সনন্তুষ্ট থাকাই সুখের রাস্তা।
পদ্মশ্রী’র সুবাদে তিনি প্রচারের আলোয় এসেছেন সম্প্রতি। উল্লেখিত তথ্যাবলী সমসাময়িক বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। কোন প্রকাশনা পাওয়া যায়নি। ইচ্ছে আছে সচক্ষে দেখার। সেই সৌভাগ্য হলে আপনাদের বলব। বয়স উনার ব্যক্তিগত পাসপোর্ট, আধার ও সচিত্র পরিচয় পত্রে উল্লেখ আছে। তিন শতাব্দীই সঠিক। জন্ম উনবিংশ শতাব্দীতে, বিংশ শতাব্দীতে কর্ম শুরু, একবিংশ শতাব্দীতে পদ্মশ্রী ও চলমান।
কড়চ/ এম এস
Facebook Comments Box
ভাগ