নজরুল চর্চা : এপার বাংলা-ওপার বাংলা/ শ্যামল কুমার সরকার

নজরুল চর্চা : এপার বাংলা-ওপার বাংলা

শ্যামল কুমার সরকার

সারসংক্ষেপ
[ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম (দুখু মিঞা) বাংলাদেশের জাতীয় কবি (১৯৮৭)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে নিজে সম্বিৎহারা কবি নজরুলকে কলকাতা হতে ঢাকায় এনে ধানমন্ডির একটি ভবনের নাম ‘কবি ভবন’ দিয়ে সেখানে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পাশাপাশি কবি ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবন ধারণের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করেন। চলতে থাকে কবির জীবন। অবশেষে পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সেখানে (সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে) কবির অন্তিম যাত্রা। সেদিন বিকেলেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। অবশ্য ১৯৪২ সাল হতেই কবি ছিলেন নির্বাক। ফুলের জলসায় কবি ছিলেন নীরব। যাহোক, মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে আয়ুকালের উপর ভর করে নয়। অর্থাৎ জীবদ্দশায় কৃত কর্মের মাধ্যমেই একজন মানুষ সমকাল এবং আগামীকালের জনজীবনে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে থাকেন। সোজা কথা, কৃর্তিমানের মৃত্যু নেই। প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামও তাই। জীবিত নজরুলের চেয়ে মৃত নজরুল কোনো অংশেই কম প্রভাবশালী নন। তাইতো নজরুলকে নিয়ে চর্চাও অনেক। এ প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে নজরুল চর্চার ব্যাপারে একটি ধারণা লাভের চেষ্টা করা হবে। আলোচনার মধ্যে একাডেমিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত নজরুল-অধ্যয়ন অন্তর্ভূক্ত থাকবে।]

আমাদের দেশে বেসরকারি ভাবে নজরুল একাডেমি (১৯৬৮) স্থাপিত হয় ঢাকায়। মিন্টু রহমান এর সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠানটি নজরুল বিষয়ক গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় স্থাপিত হয় নজরুল ইনস্টিটিউট (বর্তমানে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট)। এটি নজরুল বিষয়ক একটি এপেক্স প্রতিষ্ঠান। নজরুলের হারিয়ে যাওয়া গান ও বিশুদ্ধ নজরুল স্বরলিপি তৈরী ছাড়াও নজরুলের বিভিন্ন লেখনি নিয়মিত প্রকাশ ও গবেষণা হচ্ছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট হতে। এছাড়া একই জায়গা হতে প্রকাশিত হচ্ছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট পত্রিকা (গবেষণা পত্রিকা)। বস্তুুত নজরুল বিষয়ক গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানটি অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিষ্ঠা কাল হতে এপর্যন্ত কবি নজরুল ইনষ্ট্রিটিউট ৩৯ টি গবেষাণা পত্রিকা প্রকাশ করেছে (জুন, ২০২১)। কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে রয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের শাখা। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার প্রমিলা-নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত তেওতায় একই প্রতিষ্ঠানের শাখা নির্মাণের কাজ চলমান। ‘‘বাঁশরী’’ (২০১৪) নামক ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কবি নজরুলের উপর নিয়মিত অনুকরণীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ড. ইঞ্জিনিয়ার মোঃ খালেকুজ্জামান এর প্রতিষ্ঠাতা। ‘‘নজরুল কেন্দ্র’’ নামে ঢাকায় আছে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। মানিকগঞ্জ শহরের ৪৭, গঙ্গাধরপট্টি ব্লক-বি তে রয়েছে ‘‘নজরুল গবেষণা কেন্দ্র’’ (২০১৯)। শ্যামল কুমার সরকার এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক। ইতোমধ্যে অত্র গবেষণা কেন্দ্রের একাধিক গবেষণা-প্রবন্ধ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) এবং মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সম্পাদিত ‘‘নজরুল জীবনের যত কথা’’ পুস্তক (একুশে বই মেলা, ২০২১) সহ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, মানিকগঞ্জ নজরুলের অভিভাষণের ইংরেজি অনুবাদ দদঝঢ়ববপযবং ড়ভ কধুর ঘধুৎঁষ ওংষধস’’ সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি নজরুল একাডেমি, চুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, ভারতের সাথে সম্পৃক্ত থেকে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার মানসম্পন্ন ব্যক্তিকেন্দ্রিক গবেষণা কার্যক্রমও চলছে। লেখক ও নজরুল-গবেষক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন (নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইস্টিটিউট, ঢাকা) তেমনি একজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নজরুল গবেষণা কেন্দ্র। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ তো রয়েছেই। ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নজরুল অধ্যাপকের চেয়ার। ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্থাপিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়। সেখানে নজরুলের উপর একটি ইনস্টিটিউট আছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার উপর উচ্চতর একাডেমিক কার্যক্রম ও গবেষণা চলছে। বাংলায় বি এ (অনার্স), এম এ, এম ফিল, পিএইচ ডি ডিগ্রি এর অন্তর্গত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসব উচ্চতর ডিগ্রির জন্য গবেষণা করছেন। এর বেশির ভাগই হচ্ছে ডিগ্রি লাভের জন্য, চাকুরি পাওয়ার জন্য অথবা পদোন্নতির জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে ৩৮৫০ (৩০০০+৮৫০) নম্বরের মধ্যে মাত্র ৫০ নম্বরের নজরুল-সাহিত্য পাঠ করানো হয়। এ ৫০ নম্বর অনার্সের জন্য বরাদ্দ। আর এম এ ক্লাশের জন্য নজরুল-সাহিত্যে বরাদ্দ শূন্য (০) নম্বর। প্রতিষ্ঠাকাল অর্থাৎ ১৯২১ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৮০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে নজরুলের উপর পিএইচ. ডি. গবেষণা হয়েছে মাত্র দুটো (১৯৭৭ সালে মোঃ রফিকুল ইসলাম ও ১৯৮৮ সালে করুণাময় গোস্বামী)। এছাড়া ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ৪০০০ নম্বরের মধ্যে (মৌখিক পরীক্ষ ছাড়া) নজরুল-সাহিত্য পড়ানো হয় ৪০০ নম্বরের। এছাড়া একই বিভাগের বিশ্ব সাহিত্য শিরোনামে নজরুল সম্পাদিত রুবাইয়াৎ-ঈ-ওমর খৈয়াম (২৫ নম্বরের) বরাদ্দ থাকায় বাংলা বিভাগের অনার্সে নজরুলের উপর নম্বর আরো বেড়ে যায়। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নজরুলের উপর সবচেয়ে বেশি নম্বর বরাদ্দ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অনার্সে ৩৩০০ নম্বরের মধ্যে নজরুল পড়ানো হয় ৫৫ নম্বরের। জগন্নথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সে ১২৫ নম্বরের নজরুল-সাহিত্য পড়ানো হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পর্যায়েও নজরুল-সাহিত্য পাঠ সীমিত ও হতাশাজনক।

রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে নজরুল সঙ্গীত ও আবৃত্তি শেখার অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসবের সবই বেসরকারি এবং ব্যবসা কেন্দ্রিক (জীবিকা কেন্দ্রিক)। টাকার লেনদেন সেখানে মুখ্য। নজরুল সঙ্গীত এবং আবৃত্তি শেখানোর অনেক গৃহশিক্ষকও এদেশে কাজ করছেন। এরাও পেশাজীবি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সরকারি প্রতিষ্ঠান দু’টি দেশের শিশুদের নজরুল চর্চার জন্য সীমিত আকারে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় সারা দেশেই এদের শাখা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যানারে নজরুল চর্চার আয়োজন। দেশের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব সংগঠন। এর বেশির ভাগই ক্লাব বা সংগঠন ভিত্তিক। বিভিন্ন সংগঠনে যারা কাজ করছেন তাঁদের অনেকেরই নজরুলের উপর কোনো পড়াশোনা নেই। নিছক খেয়াল বা নজরুলের নামের সাথে নিজেকে জড়িয়ে একটি প্রশান্তি লাভ করার চেষ্টা। সাথে সামাজিক মর্যাদার প্রাপ্তিটা বোনাস। নিজেদের সংগঠনের নাম, নিজেদের নাম ও ছবি সম্বলিত ফেসবুক আপলোডই এ ধরনের নজরুল-সংগঠনের অন্যতম কাজ (আমার নিজের জেলা মানিকগঞ্জে নজরুল-প্রমীলা বিষয়ক ১১ সংগঠন আছে বলে জানা যায়)। মূলত নজরুলের জন্মদিন ও মৃত্যুদিবস পালনের মধ্যেই এদের কাজ নিহিত। বাংলাদেশে তথাকথিত নজরুল চর্চার নামে ভুইফোঁড় সংগঠনসমূহ কার্যত জাতীয় কবি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাই সৃষ্টি করে যাচ্ছে। নিজেদের কর্ম ও নামকে অক্ষয় করে রাখতে কেউ কেউ প্রকাশ করছে নজরুল বিষয়ক স্মরণিকা। মানিকগঞ্জ হতে ২০১৮ সালে প্রকাশিত এমনই একটি প্রকাশনায় দেখা যায় প্রমীলার মায়ের নাম বিজয়া সুন্দরী আর প্রমীলার মাসী হচ্ছেন গীরিজাবালা (বাস্তবে প্রমীলার মা হচ্ছেন গিরিবালা দেবী এবং প্রমীলার কাকীমা হচ্ছেন বিরজাসুন্দরী দেবী)। একই প্রকাশনায় দেখা যায় নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখেছেন জেলে বসে। বাস্তবে নজরুল ‘বিদ্রেহী’ কবিতাটি লিখেছিলেন মুক্ত অবস্থায় কলকাতায় (তালতলা লেন, ডিসেম্বর, ১৯২১)। নজরুলের অন্যতম সুহৃদ ও অভিভাবক মুজফ্ফর আহ্মদ এর স্বাক্ষী। উল্লিখিত প্রকাশনায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের ছেলে বীরেন সেনগুপ্তের আহ্বানে নজরুল প্রথম কলকাতা হতে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে বেড়াতে এসেছিলেন। এ তথ্যটিও শতভাগ ভুল। নজরুল প্রথমবার কুমিল্লায় বেড়াতে এসেছিলেন কলকাতার পুস্তক ব্যবসায়ী কুমিল্লার আলী আকবর খানের ডাকে এবং তার সাথে। আলোচিত প্রকাশনায় বলা হয়েছে কুমিল্লায় প্রমীলাকে না পেয়ে নজরুল মানিকগঞ্জের তেওতায় চলে আসেন এবং প্রমীলার সাথে তার একান্ত সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়। কুমিল্লার কান্দির পাড়ের ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের বাড়িতেই প্রমীলার সাথে নজরুলের প্রথম দেখা ও পরবর্তীতে হৃদয়ের আদান-প্রদান হয় (তৃতীয় ও চতুর্থবার কুমিল্লায় অবস্থানকালে)। বাংলাদেশে প্রমীলা-নজরুল সম্পর্কের অনেক কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। ২০১৮ সালের উক্ত প্রকাশনাতে একটি কবিতার মাধ্যমে নজরুল-প্রমীলার সম্পর্কের ভিত্তিহীন তথ্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। এভাবেই বিভ্রান্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। জাতীয় কবিকে এভাবে অসম্মান করার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? যেখানে সেখানে নজরুল-প্রমীলা সম্পর্কে যা খুশি তাই লিখে বা বলে আমরা কি বড় হতে পারব? পারব কি নজরুলকে ছাড়িয়ে যেতে (নজরুলকে নিয়ে এপর্যন্ত হাজার খানেক বই লেখা হয়েছে)? যা জানিনা যা বুঝিনা সেসব কেন লিখতে যাই? সব জায়গা আমাকে দখল করতে হবে কেন? নজরুল নিজেই তো নাম, যশ, প্রতিপত্তি কিছুই চাননি। তিনি চেয়েছিলেন ভালোবাসা পেতে ও দিতে। চলুন, আমরা নজরুলকে অনুসরণ করি। আগে তাঁকে জানি। নিজেকে তৈরী করি। তার পরে বক্তব্য দেই-লেখালেখি করি। তবেই হবে নজরুলকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা।

ওপার বাংলাতেও (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) নজরুল অবহেলিত। নজরুলের জন্মস্থান পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়ায় অবস্থিত নজরুল একাডেমিতে (১৯৫৮) যাতায়াতের (মার্চ, ২০১৯) পথে দেখেছি নজরুলের নাম অধিকাংশ মানুষেরই অজানা। ২০২১ সালে আসানসোলের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমিকে আত্মীকরণ করেছে। সময়ই বলে দেবে এতে নজরুল-চর্চার মান বাড়বে না কমবে। এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা চলছে। তবে বর্তমানে চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি, আসাসোলের দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন ও কলকাতার ছায়ানট নজরুল চর্চায় গরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এক্ষেত্রে নজরুল একাডেমির সংস্কৃতিক সম্পাদক, দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও কবি-নাতনী সোনালী কাজী’র নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। এছাড়া কলকাতার ড. বুদ্ধদেব বন্দোপাধ্যায় নজরুল চর্চার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য নাম। নজরুল যে সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন সে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পেই তিনি আজও জর্জরিত। এপার বাংলা (বাংলাদেশ) ও ওপার বাংলা (পশ্চিম বঙ্গ) দু’ জায়গাতেই নজরুল সাম্প্রদায়িক ভাবে কোনঠাসা হয়ে আছেন। এ মহারোগ থেকে মুক্তি না পেলে আর যাই হোক নজরুল-চর্চা হবে না। কারণ, জাতের নামে বজ্জাতি নজরুল কোনোদিন মেনে নেননি। তবে তুলনামূলক ভাবে জন্মস্থানের চেয়ে নজরুল বাংলাদেশে বেশী সমাদৃত। একাডেমিক চর্চায় নজরুল সাহিত্যের উপর আরো নম্বর বরাদ্দ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে নজরুল-গবেষণার জন্য অর্থ মঞ্জুরীর ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

আসুন, নজরুল চর্চা করি। চলুন, নজরুলময় জীবন গড়ি। নজরুলকে মূল্যায়ন করি ও সম্প্রীতির সমাজ বিনির্মাণে সহযোগিতা করি।
তথ্য সূত্র ঃ

১। নজরুল : আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শিল্পীর বোধ, সৌমিত্র শেখর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট,
ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।
২। বাংলাদেশে নজরুল, সম্পাদনা : রশীদ হায়দার, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।

শ্যামল কুমার সরকার : উপাধ্যক্ষ, এম. এ. রউফ কলেজ, কৌড়ী, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
এবং
প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক
নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, মানিকগঞ্জ-১৮০০।

 

কড়চা/ এস তে এস

Facebook Comments Box
ভাগ