পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলবাসী

বসন্তপুরের আব্দুল জলিলের পরিবার কোনদিন পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কাউকে পাননি

কড়চা রিপোর্ট: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। এ উপজেলার সুতালড়ী, আজিমনগর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মচারিদের কাজ করতে অনীহার ফলে এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলবাসী। এছাড়া চরাঞ্চলে সাধারণ মানুষদের সেবায় দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে নিয়ম মাফিক সেবা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সেবায় দায়িত্বরতরা প্রতি মাসে স্যাটালাইট প্রোগ্রাম, সপ্তাহে ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিক, পাক্ষিক ও মাসিক বৈঠক এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও চরাঞ্চলের কোন ইউনিয়নে এ ধরনের সেবা না পাওযার অভিযোগ স্থানীয়দের । তবে পরিবার পরিকল্পনা সেবায় দায়িত্বরতদের দাবি জনবল সংকটের কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে ।

জানা গেছে, আজিমনগর ইউনিয়নে ১ জন স্যাকমো ও ১ জন ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) কর্মরত রয়েছেন। এ ইউনিয়নে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও ভবনটিই খোলা হয় না।

বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ১৪ বছরের মেয়ে জুই, ১২ বছরের ছেলে রাকিব, ৬ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ও ১ বছরের জিয়ানকে নিয়ে আমার সংসার। পরিবার পরিকল্পনার কথা মানুষের মুখে শুনলেও এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কোন কর্মী আমাকে কোনদিন কিছু বলেনি। এছাড়া কোন মহিলা কর্মী আমার স্ত্রীর কাছেও আসেনি।

একই এলাকার কাকলী বেগম বলেন, বছরে দুই একবার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মহিলারা এসে নাম ঠিকানা নিয়ে যান। তাছাড়া আর কোন সেবা বা পরামর্শ দেন না। আমাদের কোন সমস্যা হলে বেশিরভাগ মহিলারা কবিরাজের কাছে যাই।

আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নষ্ট হচ্ছে

আজিমনগর এলাকার উজ্জ্বল মিয়া বলেন, এ এলাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেড় দুই মাস পর পর ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ নেওয়ার জন্য মসজিদে মাইকিং করে। তবে কখনো পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কোন আলোচনা বা সেবা পাইনি। চরাঞ্চলে যাদের পোস্টিং তারা কেউ নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনার সেবা দেন না। ঠিকমতো সেবা প্রদান করলে এ এলাকার মানুষের ছেলেমেয়েরা আরো ভালো কিছু করতে পারতো। এমিনতেই শুনেছি এসব এলাকায় জনবল সংকট রয়েছে। তারমধ্যে যারা কর্মরত আছেন তারাও নিয়মমাফিক কাজ করেন না।

এ ইউনিয়নে কর্মরত ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) মাসুদুর রহমান বলেন, আমার কাজ কর্মীদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া। মহিলা কর্মী না থাকার পরও স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

জানা যায়, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে মৌসুমী আক্তার নামে ১ জন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) ও মো. বরকত আলী নামে ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফডব্লিউআই) কর্মরত রয়েছেন।

এ এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, শুনেছি জন্মবিরতিকরন পদ্ধতি নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা লোকজন কাজ করে। তবে এ এলাকায় যারা দায়িত্বে আছেন তারা কোন সেবা দেন না। ফলে যে যার মতো বাজার থেকে গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।

এ বিষয়ে মৌসুমী আক্তারের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।

ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর মো. বরকত আলী জানান, মাত্র ১ জনকে সাথে নিয়ে এতো বড় ইউনিয়নে সেবা কষ্টসাধ্য। তারপরেও চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

সুতালড়ী ইউনিয়নে শাহ আলম নামে ১ জন ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) ও হাসনা মমতাজ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) থাকলেও সেবা পান না সাধারণ মানুষ ।

লিয়াকত মৃধা বলেন, এ ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনার কোন অফিস নেই বলে জানি। আর কেউ কাজ করে কিনা তা কেও বলতে পারবে না। কারণ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের এলাকায় কোন উঠান বৈঠক বা স্যাটালাইট ক্লিনিক সেবা হয়নি। এছাড়া মা-বোনদের কাছে কোন মহিলাকর্মী পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে কখনও আসেননি।

হাসনা মমতাজ বলেন, মাত্র ১মাস আগে সুতালড়ী ইউনিয়নে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও এখনো ওষুধ সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই কাজ শুরু করতে পারিনি।

ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর শাহ আলম জানান, জনবল সংকট থাকার পরেও ভিজিটরকে নিয়ে তিনি সাধ্ যঅনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন।

চরাঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চরাঞ্চলে কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা অফিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারিরাই নিয়মমাফিক সেবা প্রদান করেন না। ফলে এ এলাকার মানুষেরা পরিবার পরিকল্পনা সস্পর্কে তেমন সচেতন না। দরিদ্র পরিবার হয়েও একাধিক সন্তান হওযায় অনেকেই স্ংসার চালাতে হিমশিমে পড়েন। চরাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনার কোন সেবা নেই বল্লেই চলে। যারা দায়িত্বে আছেন তারা মাসে মাসে শুধু বেতন তোলেন।

সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক মো. গোলাম নবী বলেন, চরাঞ্চলের পরিবার পরিকল্পনার সেবা পৌছে দিতে জনবল নিয়োগের বিষয় প্রক্রিয়াধীন। আর যারা দায়িত্বরত থাকার পরও ঠিকমতো সেবা দিচ্ছেন না তাদের সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

কড়চা/ জেড এইচ

Facebook Comments Box
ভাগ