বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণঃ আমার প্রত্যাশা
রুহুল ইসলাম টিপু
বিশ্ব পরিমন্ডলে এখন বাংলাদেশ বেশ পরিচিত একটি দেশ। পরিচিতির সঙ্গে ‘সু’ যোগ করে সুপরিচিত বলা বেশি ন্যায় সঙ্গত। কারণ এখন আমাদের গৌরব এবং অহংকারের অনেক কিছু আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের শ্রম শক্তি। এখানে শুধু কায়িক শ্রম বিনিময়ের নাগরিকবৃন্দ রয়েছেন এমন নয়; বিশ্ব মেধার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের মেধাবীরাও দেশকে উচ্চ আসনে নিয়ে গিয়েছেন। প্রবাসী আয় এখন ১৫ বিলিয়ন ডলার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছেছে। ২০১৮ পর্যন্ত আমাদের মোট রপ্তানী আয় ৩৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাত হতে। আমাদের স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাত, বিদ্যুৎখাত সহ অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়েছে; টেলি ডেনসিটি হয়েছে ৯৩ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বে ৫৭ তম দেশ হিসেবে স্যালেলাইট সম্বলিত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশ আমাদের বাংলাদেশ।
সবচেয়ে বড় গর্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের ১৯৭১। একটি বাংলাদেশ। সুবিশাল ত্যাগ ও তিতিক্ষার ফসল। শ্রদ্ধা জানাই শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি; বিনীত শ্রদ্ধা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। আমরা উদযাপন করছি মুজিব জন্ম শত বর্ষ। এটিও বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দিবস। আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সাথে আমাদের প্রত্যাশা ৫০ বছরের বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অহংকারের একটি দেশ।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) তে আমাদের অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে; যেটি বিশ্ববাসী দেখেছেন যে বাংলাদেশ ৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। এত বেশি সংখ্যক পুরস্কার আর কোনো দেশ অর্জন করতে পারেনি।
১৭ টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের ১ ও ২ নং এ রয়েছে দারিদ্র বিলোপ এবং ক্ষুধামুক্তি। তৃতীয় নম্বরে আছে সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ। বাংলাদেশ সরকার ৭ ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬- ২০২০) এবং ২০১৬-১৭ হতে বার্ষিক বাজেটে এসডিজিকে বিশেষ গুরুত্বসহ স্থান দিয়েছে।
এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত অভীষ্টসমূহের দুটি হচ্ছেঃ এসডিজি-১ দারিদ্র্য বিলোপ: মাথাপিছু দারিদ্র্যের হার ২৪.৮ শতাংশ থেকে ৬.২ শতাংশে কমিয়ে ১৮.৬ শতাংশে নামিয়ে আনা; অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস করা (২০২০ সালে ৮% এ নামিয়ে আনা)। এসডিজি-২ ক্ষুধামুক্তি: অনুর্ধ¦ ৫ বছর বয়সি শিশুদের বিকাশের বাধাসমূহ ৩৬.১ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা; অনুর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি শিশুদের কম ওজনের মাত্রা ৩২.৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা।
একজন সাধারন সংবাদপত্র পাঠক হিসেবে আমি জানি বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দেশের ৬৪ টি জেলায় একরকম নয়। সম্ভবত: কুড়িগ্রামে দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ। সবচেয়ে কম নারায়ণগঞ্জে ২ শতাংশ। এর পরে ভালো অবস্থানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ এবং মাদারীপুর; শতাংশের হিসেবে সম্ভবত:৬ বা ৭ শতাংশ হবে অথবা এর কম। এ হিসেব গ্রহণ করে জেলা ভিত্তিক, উপজেলা, ইউনিয়ন বা পৌরসভা কেন্দ্রিক দারিদ্র্যের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর্মসূচি গ্রহণ করলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। যেটি প্রকারান্তে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নির্মূলে ভূমিকা রাখবে।
যেমন কুড়িগ্রামের এখনকার ৭০ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কয়েক বছর পূর্বে ছিল ৬৪ শতাংশ। এই যে ৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়া এর কারণ সমূহ অবশ্যই খুঁজতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বলা যায়, অতি বন্যা এবং তিস্তার নাব্যতা ও পানি প্রবাহ বাধা হিসেবে আসবে। যদিও কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের মঙ্গা এখন আর নেই। এটি সুখবর। দারিদ্র্যের হার নারায়নগঞ্জ. মুন্সীগঞ্জ এবং মাদারীপুর এর ন্যায় সকল জেলা পর্য্যায়ে এক অংকে এবং পরবর্তীতে শূণ্যে নামিয়ে আনতে হবে। এ আলোকেই কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আগামী দিনের এটিই আমাদের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা। বাংলাদেশ সরকারের স্বপ্নসোপান হচ্ছে: ভিশন ২০২১ : মধ্যম আয়ের দেশ; এসডিজি ২০৩০ : উন্নয়ন জংশন; ২০৪১ উন্নত দেশ: সোনার বাংলা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ১৯৭১; ২০৭১ স্বাধীনতার শতবর্ষ: রূপকল্প বা ভিশন অর্জন- দক্ষতা ও সামর্থ্যরে ওপর নির্ভরশীল; ২১০০ ডেলটা প্ল্যান : নিরাপদ বদ্বীপ। এ মহাপরিকল্পনার উপর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক করোনা, প্রাকৃতিক আম্ফান এবং বন্যার তান্ডবে দেশ দিশেহারা। বাধাসমূহ দারিদ্র্য দূরীকরণে কঠিন থেকে কঠিনতম রূপ ধারণ করছে। এই অপ্রিয় সত্যকে মাথায় নিয়েই এগুতে হবে।
আমার বাংলাদেশ, আমাদের সকলের বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধার বাংলাদেশ, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। এ প্রত্যাশার সকল দেশবাসির।
কড়চা/ আর আই টি