মালালা’র জন্মদিন এবং আমার শ্রেয়া

মালালা, ছবি সংগৃহীত

রুহুল ইসলাম টিপু

১২ জুলাই, মালালা ইউসুফ জাই এর জন্মদিন। জন্ম সাল ১৯৯৭। ০৯ অক্টোবর ২০১২ সালে স্কুল ফেরত মালালাকে গুলি করেছিল তালেবান। অপরাধ মালালা প্রতিবাদ করেছিলেন। নারী শিক্ষার প্রসারে মালালা ছিলেন সোচ্চার। তিনি ব্লগে নারী শিক্ষা এবং জঙ্গী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। জীবন ফিরে পাওয়া মালালা সারা পৃথিবীর শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক। মালালার আহ্বানে পাকিস্তানে ২ মিলিয়ন মানুষ স্বাক্ষর করেছিল শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য; ফলশ্রুতিতে জাতীয় এসেম্বলীতে প্রথম রাইট টু ফ্রি এবং কমপালসরি শিক্ষা বিল অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়। শিক্ষা আন্দোলনের অসাধারণ এ অর্জনটি তার দেশ পাকিস্তানের সকল নাগরিক, বিশেষ করে সকল শিক্ষার্থী, বলাই বাহুল্য নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এ বিলটি এখন সেদেশে বড় অবদান রাখছে। এতো অল্প বয়সে এতো বড় নেতৃত্ব এবং অর্জন পৃথিবীর ইতিহাসে অবশ্যই বিরল ঘটনা। ২০১৩ সালে মালালা এবং তার পিতা মিলে তৈরী করেন দি মালালা ফান্ড, যেটি নারী শিক্ষার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন এবং নারীর ক্ষমতায়নের উপর সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মালালা অর্জন করেন পৃথিবীর সবচেয়ে কনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ীর অনন্য সম্মান। মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরাস ২০১৭ সালে মালালাকে মনোনীত করেন জাতিসংঘের শান্তির দূত, যিনি নারী শিক্ষার গুরুত্বের উপর সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশ্বকে সহায়তা করবেন।

শ্রেয়া

বৈশশ্বক পৃথিবীর একজন নাগরিক হিসেবে মালালাকে আমি স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! মালালা এখন ২৩ বছর বয়সী একজন নারী। আমার মেয়েদের বয়স বিবেচনায়, মালালা আমার সন্তান তুল্য। আমার বড় মেয়ে। নাম শ্রেয়া। মালালা হতে ১ বছর ২ দিনের ছোট। এটি বয়সের যোগ বিয়োগের হিসাব। জন্ম ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই। জন্মের পর সব বাবা মা’ই তার সন্তান নিয়ে উচ্চ আকাঙ্খা করেন, এটি স্বাভাবিক। আমার শ্রেয়া স্কুলে যাবে, পড়বে, শিখবে, জানবে, বড় হবে, সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করবে। এটি হলো না। কারণ শ্রেয়া অটিজম-এ আক্রান্ত। আজ ২২ টি বছর তাকে নিয়ে আছি। অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারই জানেন, তাদের লালন পালন, শিক্ষা দীক্ষা, তাদের দিয়ে কিছু করানো এবং তাদের পুনর্বাসন, ইত্যাদি নানাবিধ জটিল কার্যক্রম। তারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। বিশেষ এ শব্দটি দ্বারা আমি সুনির্দিষ্ট কিছু বের করতে পারিনি। এ আমার ব্যর্থতা। মালালা’র জন্ম দিনের সাথে আমার মেয়ে বা অটিজমের সম্পর্ক হয়তো বেমানান। আবার মানানও বটে। এটি আমার দৃষ্টিভঙ্গি। মালালা শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃত। একই বয়সী শ্রেয়া। শিক্ষা বঞ্চিত আর একজন নারী। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এ ব্যক্তিরা প্রতিবাদ করতে পারেন না, আন্দোলন করতে পারেন না, কিছু বলতে পারেন না, সমাজে মিশতে পারেন না, দেশ কি সেটি জানেন না, কিভাবে চলতে হবে, বুঝতে পারেন না। তাদের ব্যবস্থাগুলো কোথায়? সংবিধানে নাগরিক হিসেবে প্রাপ্ত অধিকারটুকু থেকে তারা অনেক দূরে।

একজন শ্রেয়া তো আর পূর্ণ দেশ নয়। তবে শ্রেয়া’রা দেশের বাইরেও নয়। আজ মালালা’র জন্মদিনে বাংলাদেশের ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারছেন না করোনা ভাইরাসের কারণে। এটি আগামী দিনের শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের অনেক সাফল্য রয়েছে। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-এমডিজি’তে বাংলাদেশ ৬ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। বাংলাদেশকে এমডিজি’র রোল মডেল বলা হয়। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের ৪ নম্বরে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা এবং ৫ নম্বরে নারী-পুরুষের সমতা। এ দুই ক্ষেত্রে মালালা’র অর্জনগুলোকে স্মরণ করি। একইসাথে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের সকল লক্ষ্য মাত্রা বাংলাদেশ অর্জন করবে, এটি আমার প্রত্যাশা। প্রকারান্তে, শ্রেয়ারা পাবে শিক্ষার আলো। শ্রেয়াদের শিক্ষা বড় প্রয়োজন, মালালার জন্মদিনের আশীর্বাদটুকু প্রতিবিম্ব হোক সকল শ্রেয়াদের প্রতি।

কড়চা/ আর আই টি

Facebook Comments Box
ভাগ