আব্দুর রাজ্জাক : পৃথিবীর বুকে আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল ‘মা’। যত আবদার যত অভিযোগ সবই মায়ের কাছে। নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানের জন্য ১০ মাস ১০ দিন শুধু নয়, মায়ের সারাটা জীবন উৎসর্গ করেও যেন মায়ের তৃপ্তি নেই। মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য পথ চলার পাথেয়। পৃথিবীর সব সফলতা একমাত্র মায়ের দোয়া এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতেই আসতে পারে।
শহর-গ্রামগঞ্জে এখনো এমন অনেক মা আছেন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সন্তানরা প্রকৃত শিক্ষায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনই একজন অনুকরণীয়-অনুসরণীয় মা নাজমা আলম। বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওরের গোলাপনগর গ্রামে। ৮ মে দুপুরে এই প্রতিবেদক হাজির হয়েছিল আদর্শ এই মায়ের বাড়িতে।
নাজমা আলম একজন সফল ও আদর্শ মা। যার তিনটি মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। তিন মেয়েকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বড় মেয়ে শাহনাজ পারভীন রুনা সরকারি স্কুলের শিক্ষক, মেঝো মেয়ে রুকসানা পারভীন নূপুর সহকারী জজ ও ছোট মেয়ে রাওফিন নাহার মুন এমবিবিএস ডাক্তার।
ছেলের অভাব পূরণ করে বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এ তিন মেয়ে। গ্রামের একজন সাধারণ পরিবারের মানুষ হিসেবে তিন মেয়েকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সফল মা নাজমা আলম।
আলাপকালে নাজমা আলম বলেন, ১৯৮৫ সালে বিয়ের সময় আমি ছিলাম ঘিওর সরকারি কলেজের বিএ পরীক্ষার্থী। নিজে মেধাবী ছাত্রী ছিলাম। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত কষ্ট হোক সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করার পর তাদের বিয়ে দেবো। একে একে ঘরে এলো শাহনাজ পারভীন রুনা, রুকসানা পারভীন নূপুর ও রাওফিন নাহার মুন। একটি ছেলে সন্তানের আশা ছিল। কিন্তু তিন মেয়ে নিয়ে আমি হতাশ হইনি বরং আমার আফসোস হয়, যদি আমার আরো একটি মেয়ে থাকত তাহলে তাকে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাতাম।
তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত সংসারে আমার স্বামী রওশন আলম ছিলেন মানিকগঞ্জ কোর্টের আইনজীবী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অসম্ভব সৎ মানুষ। আমার তিন মেয়ের সবাই ছিল মেধাবী। ঘিওর ডিএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও ঘিওর সরকারি ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করার সময় তারা বরাবরই ভালো রেজাল্ট করত। তিন মেয়ের মধ্যে সবার বড় রুনা সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে। পরে সে নারচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। দ্বিতীয় মেয়ে রুকসানা পারভীন নূপুর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এলএলএম বিষয়ে ল অনার্স-মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছে। বর্তমানে সে সহকারী জজ। তৃতীয় মেয়ে ডা: রাওফিন নাহার মুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে।
আলাপকালে তিনি আরো বলেন, মেয়েদের সাথে বান্ধবীর মতো খোলাখুলি সবকিছু শেয়ার করতাম আমি। তাদের কোথায় কী সমস্যা, কোন বিষয়ে কোন শিক্ষক দরকার, কষ্ট হলেও তাদের লেখপাড়ায় আমরা কোনো ছাড় দেইনি।
প্রতিক্রিয়ায় বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন রুনা বলেন, একজন মা তাদের সন্তানদের জীবন গড়তে যে কী ভূমিকা রাখেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মা। তিনি আমাদের সাথে সবসময় বান্ধবীর মতো আচরণ করতেন। কোনো সমস্যা হলে আমরা মায়ের সাথেই শেয়ার করতাম। তিনি নিজে কষ্ট করে আমাদের তিন বোনকে লেখাপাড়া করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমন মায়ের জন্য আমরা গর্বিত।
সন্তানকে গড়ে তুলতে অন্য মায়েদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমা আলম বলেন, সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক সৎ জীবনযাপনের মাধ্যমে ধৈর্য, কষ্ট, পরিশ্রম করে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। খেলাধুলা-বিনোদন করতে দিন। তাদের মনের ওপর জোর খাটাবেন না। সন্তানদের সাথে বন্ধুর মতো মিশে বোঝার চেষ্টা করুন সে কী চায়। তার কোনো সমস্যা আছে কি না। সব জেনে সে অনুযায়ী তাদের সুযোগ করে দিন।
কড়চা/ এ আর