ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর খনন কাজ শুরু, ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে ৩ ইউনিয়নবাসী

আব্দুর রাজ্জাক : ‘এখন একটা কাজের কাজ হইছে। ধলেশ্বরী নদী খনন করছে সরকার। প্রতিবছর মাঘ মাসেই নদী শুকিয়ে যায়। হাইটা হেঁটে হেঁটে মানুষ নদী পাড় হয়। খনন শেষ হলে নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচবে ৩ টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ। বন্যার হাত থেকে কৃষকের ফসল বাঁচবে, ঠিক থাকবে প্রকৃতির ভারসাম্য’ ধলেশ্বরী নদী খনন করা বা ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার পর এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানালেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক সোবান খান। কেবল সোবান খানই নয়, নদীর আশপাশের এলাকার সব মানুষই সরকারের এই উদ্যোগে জানিয়েছেন সন্তুষ্টির কথা। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর পুন:খনন কাজ শুরু হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর কাজ শেষে হলে নদীর পার্শবর্তী কুস্তা, শ্রীধরনগর, মাইলাগী, পূর্বপাড়া ও বালিয়াখোড়া এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার ফসলী জমি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

জানা গেছে, ৮৮ সালের ভয়াবহ ভাঙ্গনের পর থেকে ভাঙ্গন এলাকার লোকজনের সাথে ঘিওর-খলসী, বিনোদপুর, চরকাটারী, জিয়নপুর এলাকার লোকজনের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। বিভিন্ন সময়ে ভাঙ্গন রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বন্যা মৌসুমে এসব এলাকার হাজার হাজার একর জমি, বাড়ি-ঘর সহ সমস্ত কিছু নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর হারিয়ে বহু লোকজন গৃহহীন হয়ে পরে। অনেক পরিবার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে আশ্রায়ন প্রকল্প এবং রাস্তার পাশে কোন মতো জীবন যাপন করছে। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খনন না করায় কার্যত মরা খালে পরিণত হয়েছে পুরাতন ধলেশ্বরী। বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। বেদখল হয়ে গেছে শুকিয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর শত শত একর জমি। অপর দিকে নদীটি পানি শূন্য হয়ে ধুধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীতে বিশাল চর পড়ায় স্থানীয় একটি বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রাতের অন্ধকারে নদী থেকে লাখ লাখ ঘন ফুট বালু চুরি করে বিক্রি করছে। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়ে বালু চুরি করে বিক্রি করলেও রহস্যজনক কারণে তারা কোন ভুমিকা রাখছেনা বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। পানির অভাবে ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রায় ১০/১২ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হয়ে পরেছে। এলাকার সাধারণ কৃষকদের চাষাবাদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। নদী ভরাটের কারণে চরম অস্বিত্ব সংকটে থাকায় ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলার বিরাট অংশের লোকজনের মাছের চাহিদাও জোগান হতো ধলেশ্বরী নদী থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হবার কারণে এবং ড্রেজিং না করার কারণে দেশীয় মাছ সংকট দেখা দিয়েছে।

জানুয়ারি মাসে পানি উন্নয়ন বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা ধলেশ্বরী নদী পরিদর্শন করেন। ভাঙ্গনরোধে বিভিন্ন প্রকল্পর তৈরি করে ট্রেন্ডারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়। তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদী পুন:খনন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে নদীর গতি পথ ও সঠিকভাবে পানি প্রবাহিত হলে ভাঙ্গনের হাত থেকে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ রক্ষা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুস্তা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ ইকরামূল ইসলাম খবির জানান, ধলেশ্বরী নদীর খনন কাজ শেষ হলে আমাদের এলাকার নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং শুস্ক মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার লোকজন উপকৃত হবে।

কুস্তা গ্রামের ব্যবসায়ী ফিরোজ বলেন, ধলেশ^রী নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। ছোট বেলায় আমার বাবার সঙ্গে গোসল করতে আমরা নদীতে যেতাম। হাত দিয়ে মাছ ধরতাম। আমাদের বসত বাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর উপর দিয়ে ঘোরার গাড়ি মালামাল নিয়ে চলাচল করে। তবে নদীটি খনন হলে এলাকার লোকজনের অনেক উপকার হবে বলে তিনি জানান।

গত মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেলে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডেও পরিচালক এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় ঘিওর-কুস্তা এলাকায় পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ৯.৫০০ কিঃ মিঃ হতে ১১.২০০ এর মধ্যে ০.৫০০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত নদী পুন:খননের কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও শিবালয় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহিম খান, পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম মিন্টু প্রমুখ। উল্লেখ্য, ধলেশ্বরী নদী পুন:খননের জন্য মেসার্স আল মামুন ট্রেডার্স ১ কোটি ৭৮ লাখ ব্যয়ে এবং বালিয়াখোড়া ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি কাজ পেয়েছে। গত ৪ এপ্রিল থেকে ধলেশ্বরী নদীর পুন:খনন কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কড়চা/ এ আর

Facebook Comments Box
ভাগ