ছোটপাখি
কল্যাণী রমা
(১)
“ও ছোটপাখি ছোটপাখি সর্বনাশ হয়ে গেছে
পৃথিবীর পরে আর
তোমার-আমার
ভালোবাসার কেউ নেই, কিছু নেই।
ও ছোটপাখি ছোটপাখি
ভাংচুর হয়ে গেছে
শিশুদের খেলনায়, আমাদের দোলনায়, ডাকবাক্সের ঢাকনায়
রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে আলো নেই।”
ছোটপাখি শব্দটা শোনামাত্র এ গানটার কথা মনে হয় আমার। অসাধারণ এক গান। আমার বিমর্ষ, বিষণ্ণ জীবনেও পাহাড়টা সরে যায়, সাগরটা মরে যায়…
(২)
আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে আমি সাভারে চাকরি করতাম আর ঢাকায় থাকতাম। অফিসের মাইক্রোবাসে যাওয়া আসার পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ত। প্রায়ই বাস থেকে নেমে আমরা জাহাঙ্গীরনগরে পরিযায়ী পাখি দেখতে যেতাম। কেমন একটা যেন লাগত। কোথাকার পাখি কোথায় এসে গেছে শীতটুকু কাটাতে! ছোট ছোট ডানা মেলে।
আর আজকাল তো নিজেকেও পরিযায়ী পাখি বলেই মনে হয়। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে যাই। বুকে দেশের গন্ধ মেখে ফিরে আসি। তারপর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বালিশের ওয়ারে নাক গুঁজে, স্বপ্নের ভিতর দেশের গন্ধ খুঁজি।
তবে এখন বরফ গলে গেছে বলে আমার পৃথিবী জুড়ে অনেক পাখির গান। নীল পাখি, হলুদ পাখি, ময়ূরকণ্ঠী রঙ পাখি…উইস্কনসিনে বসন্ত এসেছে। পিওনিফুলের ভারে গাছ নুয়ে পড়েছে। আপেল আর নাসপাতি গাছে ফুল। আমি উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখি ডালের ফাঁকে নানা পাখির বাসা। ব্লু-জে, রেড কার্ডিনাল, রবিন, চিকাডি…
(৩)
ঢাকার খবরে পড়লাম বনের পাখি আর পরিযায়ী পাখি শিকার আইনত দন্ডনীয়। তবু রেস্টুরেন্টগুলোয় নাকি পাখির মাংস পাওয়া যায়।
আমরা তো পুরো পৃথিবীটাই খেয়ে ফেলছি। ছোট পাখিগুলো নাহয় থাক।
কড়চা/ কে আর
Facebook Comments Box