প্রয়াত বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান

সরোজ খানের সঙ্গে মাধুরী দীক্ষিত

৭১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বলিউডের প্রখ্যাত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। শেষ হয়ে গেল বলিউডের এক সোনালি যুগ। পিছনে থেকে গেল এক উজ্জ্বল কর্ম ইতিহাস। বলিউডে ইন্দ্রপতন বললেও অত্যুক্তি হবে না মোটেই। স্বপ্নের দুনিয়ার স্বর্ণালী যুগের একাংশ হারিয়ে গেল কিংবদন্তী কোরিওগ্রাফার সরোজ খানের মৃত্যুতে। শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন গোটা ফিল্ম জগত…

কড়চা ডেস্ক: প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে গত ১৭ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলিউডের নামজাদা কোরিয়োগ্রাফার সরোজ খান। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল ৭১ বছরের এই কিংবদন্তী কোরিওগ্রাফারের। সরোজ খান (Saroj Khan) ভর্তি ছিলেন মুম্বইয়ের গুরু নানক হাসপাতালে। সরোজ খানের পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্বামী, ছেলে এবং দুই মেয়ে।

১৯৪৮ সালের ২২ নভেম্বর মুম্বই শহরে জন্ম তাঁর। তাঁর আসল নামছিল নির্মলা নাগপাল। মাত্র তিন বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে বলিউডে তাঁর কেরিয়ারের সূচনা। ১৯৫০-এর দশকে তিনি যোগ দেন ব্যাক আপ ডান্সার হিসেবে। দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন তৎকালীন প্রখ্যাত কোরিওগ্রাফার বি সোহনলালের সঙ্গেই। তাঁকেই তিনি আজীবন নিজের মাস্টারজি মেনে এসেছেন।

সরোজ খান

স্বাধীন কোরিওগ্রাফার হিসেবে তাঁর কাজ শুরু ১৯৭৪ সালে গীতা মেরা নাম ছবি দিয়ে। তবে তাঁর কেরিয়ার উড়ান নেয় শ্রীদেবী এবং মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে কাজের পরই। ১৯৮৭ সালে মিস্টার ইন্ডিয়া, ১৯৮৬ সালের নাগিনা, ১৯৮৯ সালে চাঁদনি, ১৯৮৮ সালে তেজাব এবং ১৯৯০ সালে থানেদার ছবি তাঁকে বলিউডে প্রতিষ্ঠা দেয়। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, হাম দিল দে চুকে সনম, দেবদাস, জব উই মেট, মণি কর্নিকার মতো ছবির নাচের দৃশ্যও উজ্জ্বল তাঁর অবদানের জন্যেই। বহু বছরের বিরতির পর ফের তিনি তাঁর পছন্দের অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে কাজ করেন Kalank ছবিতে। সেই তাঁর শেষ কাজ।

তাঁর অনন্য সব নাচের স্টেপ আজও সমান জনপ্রিয় বলিউড এবং সাধারণ মানুষের কাছে। তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে এমন একটা সময় ছিল যখন নায়িকারা তিনি ছাঁড়া আর কারও সঙ্গে কাজ করতেও রাজি হতেন না। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সরোজ খান একটি টিভি রিয়ালিটি শো-এর বিচারকও ছিলেন।

‘সরোজজির মৃত্যুতে আমি মর্মাহত,’ ট্যুইট করলেন মাধুরী দীক্ষিত
বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ছিল তাপস পালের বিপরীতে অবোধ। কিন্তু বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই ছবি। তাপস পাল সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পরিচিত মুখ হলেও, মাধুরী দীক্ষিতকে প্রায় খারিজের খাতায় ফেলে দিয়েছিল বলিউড। তার পর তাঁর ঘুরে দাঁড়ানো ১৯৮৮ সালের তেজাব ছবি দিয়ে। আর সেই ছবিতে এক দো তিন গানে আসমুদ্রহিমাচলে ঢেউ তুলেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। সেই গান তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেই খ্যাতির কারিগর ছিলেন কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। সরোজ খানের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত তাঁর প্রিয় নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত।

সরোজ খানকে নিজের গুরু বলেই মানতেন মাধুরী দীক্ষিত। সব সময়ে স্বীকার করেছেন তাঁর থেকে জীবনে অনেক কিছুই শিখেছেন বলে। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর জেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানালেন কিংবদন্তী কোরিওগ্রাফারকে। এদিন মাধুরী লেখেন, ‘আমার গুরু এবং বন্ধু সরোজ খানের মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে বিধ্বস্ত। আমি সারা জীবন ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। ওঁর জন্যেই নাচের দিক থেকে আমি শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। এই দুনিয়া এক অসাধারণ প্রতিভাকে হারাল। আপনাকে খুব মিস করব। ওঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।

মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন সরোজ খান। তাঁর সঙ্গে অভিনেত্রীর শেষ কাজ করণ জোহরের ছবি কলঙ্ক।

Facebook Comments Box
ভাগ