আব্দুর রাজ্জাক : বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) রাত থেকে মানিকগঞ্জে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর অবিরাম। কখনও হালকা, মাঝারি এবং কখনও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
মাঘের শীতে যেন আষাঢ়ের বৃষ্টি। বিপত্তিতে পড়েন পথচারী, রাস্তার ধারের ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষজন । এছাড়াও শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা জনিত রোগের আশঙ্কায় উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে অনেক পরিবারের মাঝে।
সকালে বৃষ্টির তীব্রতায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি। ফলে রাস্তাঘাটে যানবাহন এবং জনচলাচল ছিল না বললেই চলে। এ অবস্থায় কর্মজীবী মানুষেরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।
শুক্রবার রাত অবধি চলছিল এ বৃষ্টিধারা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ডিউটি শেষে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে নামেন বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস কর্মী। বাড়ি ফেরার পথে বাঁধে বিপত্তি। রাস্তায় নেই কোন অটো কিংবা রিকশা। এদের মধ্যে সীমা আক্তার, লতিফা ও আঁখি আক্তারের বাড়ি এই বাসষ্টান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। তারা জানান, এমন বৃষ্টিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। গাড়ি নাই, সন্ধ্যা নেমে আসছে। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজেই।
এদিকে, পরিপক্ক পেঁয়াজ, আলু, সরিষাসহ অন্যান্য রবিশস্য কৃষকরা ঘরে তুলছেন। মাঘের শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে এসব শস্যাদি ক্ষেত থেকে তুলতে পারেননি কৃষকরা। ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
বালিয়াখোড়া গ্রামের কৃষক শমসের আলী জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি আলু উত্তোলন করা হয়েছে। আজকে আলু উত্তোলন করার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তিনি আলেু তুলতে পারেননি। এরকম বৃষ্টি আরো দুই তিন দিন থাকলে, ক্ষেতের পরিপক্ক আলুতে পঁচন ধরার সম্ভাবনা আছে।
বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, এবার আমি ৭০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সব সরিষা পেকে গেছে। দুয়েকের মধ্যে সরিষা তোলার কথা, কিন্তু আজকের এই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে পাকা সরিষার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এছাড়াও অনেক নাবি ভূমিতে ইরি বোরোর চারা রোপন কাজ বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা ঠিকমতো করতে পারেননি।
ঘিওর বাজারে রিক্সা রেখে পাশেই যাত্রী ছাউনিতে জুবুথুবু হয়ে বসে আছেন রিকশাচালক আমজাদ মিয়া। তিনি বলেন, পলিথিন মুড়ি দিয়ে সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এখনো বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই, সেই সাথে অনেক ঠান্ডা বাতাস। তাই যাত্রী থাকলেও কোথাও যাচ্ছি না।
মাঘের এ বৃষ্টিতে আছে অসুখে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও। ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুজিত কুমার রায় বলেন, এই বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দিজ্বরের আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে শীতল বাতাসে শিশু ও বৃদ্ধদের সাবধানে রাখতে হবে।
ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে এই মুহূর্তে কৃষকদের সরিষা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও আলু উত্তোলনে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও জানান, কনকনে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে মেঘ চলে আসায় বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টি আরও একদিন স্থায়ী হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
কড়চা/ এ আর
Facebook Comments Box