কড়চা রিপোর্টঃ মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনার পানি কিছুটা কমলেও আভ্যন্তরীন শাখা নদী কালিগঙ্গা, ইছামতি ও ধলেশ্বরীর পানি অব্যাহত হারে বেড়েই চলছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার বহু মানুষ। শিবালয়, ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেই সাথে জেলা শহরের আশে পাশের আরো নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। চরাঞ্চলে গবাদিপশু নিয়ে বানিভাসি মানুষজন নিদারুন কষ্টে দিন যাপন করছেন। এখানে বিশুদ্ধ পানি ও রান্না করা খাবারের পাশাপাশি গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষের মধ্যে অনেকেই নিজদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উচুস্থানে অথবা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপরি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে আভ্যন্তরীন নদী কালিগঙ্গার পানি ৫৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, আজিমনগর, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ওই সব ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের বসতভিটাতেও পানি প্রবেশ করেছে।
যমুনায় পানি বাড়ার কারণে দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে। এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
এছাড়া শিবালয়, দৌলতপুর এবং ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি প্রবেশ করছে হুড়-হুড়িয়ে। এর ফলে এসব এলাকার নিন্মাচলের বাড়িঘর এবং ফসলি জমিও তলিয়ে যাচ্ছে।
বন্যার পানি থেকে রক্ষায় কোনো কোনো এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। পানিতে চারদিক তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এদের চাল, ডালসহ শুকনো খাবার দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী মানিকগঞ্জে প্রায় ২৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যার কারনে এ পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। এ অঞ্চলের পাচটি উপজেলার প্রায় ৯২৪ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
অপরদিকে বন্যার ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ১৩ হাজার ৫৩৯ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে সম্পুর্ন তলিয়ে গেছে। ৫,৯৯৫ মিটার জমি ভাঙ্গনের বিলিন হয়েছে। তন্মধ্যে দৌলতপুরে যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকায় ২৩৫০ মিটার, শিবালয়ে পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী এলাকায় ১৭৫০ মিটার, হরিরামপুরে পদ্মা নদী তীরবর্তী ৫৯৫ মিটার, সাটুরিয়ায় ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী ১১০০ মিটার ও ঘিওর উপজেলায় প্রায় ২০০ মিটার এলাকা রয়েছে।
এপর্যন্ত গৃহিত ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে ১৩০ মে:টন চাল, ১৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার শিশুখাদ্য এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গবাদি পশুর খাদ্য ।