কড়চা রিপোর্ট : মানিকগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে আয়োজিত প্রশিক্ষণে বনফুলের স্যান্ডউইচ খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, প্রশিক্ষক, আয়োজক, সহযোগি কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা ঢাকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৮ মে প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বনফুলের স্যান্ডউইচ খেয়েই অসুস্থ হয়েছেন বলে জানান তাঁরা।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারি শিক্ষককে ‘একীভূতকরণের কৌশল শিখন শেখানো এবং মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব ও সেওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার আঁখি। প্রশিক্ষণের তত্বাবধানে ছিলেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইইন্সট্রাক্টর কল্পনা রাণী মন্ডল। এই কাজে সহযোগিতা করেন সেন্টারের কর্মচারিরা। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সকালে ও বিকেলে খাবার নাস্তা দেওয়া হয়। এই নাস্তা কেনাটাকার দায়িত্বও পালন করেন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। গত ৪ মে শুরু হওয়া ৫ম ব্যাচের প্রশিক্ষণের সমাপনী দিন ৮ মে বিকেলে নাস্তা হিসেবে সন্দেশ, কলা ও বনফুলের কেক দেওয়া হয়। যারা স্যান্ডউইচ খেয়েছেন তাঁরা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁরা ঢাকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রবিবার (১২ মে) সকালে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া যায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বিশ্বাস, সেওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার আঁখি, মত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রীণা মন্ডল, পশ্চিম দাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সামছুন নাহার ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে। তাঁদের সকলকে বিছানায় কাতর অবস্থায় দেখা গেছে।
৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বিশ্বাস বলেন, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নিজে স্যান্ডউইচ না খেয়ে বাড়ির লোকজনকে খাইয়েছেন। এতে তাঁরা অনুস্থ না হয়ে বাড়ির লোকজন অসুস্থ হয়েছেন। এতে প্রমাণ হয় যে স্যান্ডউইচ খেয়েই সবাই অসুস্থ হয়েছেন। বনফুলে মতো এতো নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা এরকম আশা করি না।
প্রশিক্ষকের দায়িত্বে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব বলেন, প্রশিক্ষের জন্য আনা স্যান্ডউইচ আমি বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী আয়েশা আক্তার খেয়ে রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বাসায় রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে ভর্তি করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর কল্পনা রাণী মন্ডল ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি এখনও সুস্থ হননি।
৯০ নং জাহিদ মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন বিশ্বাস বলেন, আমাকে দেওয়া স্যান্ডউইচটি আমি না খেয়ে আমার বাসায় নিয়ে যাই। সেই স্যান্ডউইচটি আমার মেয়ে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ বিনা ঘোষ এবং নাতি-নাতনী খায়। এরপর তাঁরা সবাই অসুস্থ হয়ে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীরন রয়েছেন।
দক্ষিণ চৈল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলেয়া বেগম বাসায় নিয়ে তাঁর মা ও ছেলেকে খাওয়ানোর পর তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটের জ্যেষ্ঠ নার্সিং কর্মকর্তা রেশমী আক্তার বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন পাঁচজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তাঁরাও পর্যায়ক্রমে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। স্যালআইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ আমরা সাধ্যমত তাঁদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাঁদের সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।
বনফুল মানিকগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, ৮ মে শিক্ষকরা আমাদের কাছ থেকে ৫০ টি স্যান্ডউইচ নিয়েছিলেন। সেই স্যান্ডউইচ খেয়ে সকলেই অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমিও আমাদের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের এবিষয়ে অবহিত করেছি। বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।
এদিকে, মানিকগঞ্জের শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিকেরা এব্যাপারে বনফুল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রোজিনা মাহমুদ বলেন, অসুস্থ সকলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বনফুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যেই আজ এতোগুলো মানুষ অনুস্থ হয়ে পড়েছে। অবশ্যই বনফুল কর্তৃপক্ষকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।
কড়চা/ জেড এ বি