মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

কড়চা রিপোর্টঃ মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪ বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার শাখা নদীর পানি দ্রুত হারে বেড়ে চলছে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে সিংগাইর উপজেলা ব্যতীত বাকি ছয়টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার বাসিন্দারা। এখানকার বানভাসি মানুষজন গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবিলত এলাকায় ত্রান বিতরণ অব্যাহত থাকলেও অনেকেই এখনো কোন ত্রান পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট রয়েছে। তলিয়ে গেছে ওই উপজেলাগুলোর বেশির ভাগ রাস্তা ঘাট।

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষজন। গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে তারা। কোরবানী ঈদকে লক্ষ রেখে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজাকরণ গরুসমূহের ক্রেতা না থাকায় হতাশায় দিন কাটছে এসব এলাকার খামারিদের।

জেলার দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের করিম উদ্দিন বলেন, শুনেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিকট কয়েকবার গিয়েও তিনি কোন ত্রান পাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ তাদের পরিচিত একই ব্যক্তিকেই বার বার ত্রান দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরকাটারি এলাকার এক স্কুল শিক্ষক বলেন, চরকাটারি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ। অধিকাংশ ব্যক্তির বাড়িতেই এখন বন্যার পানি। টাকা থাকলেও খাবার পাওয়া কঠিন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল বলে জানান তিনি।

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, পদ্মার পানিতে নাকাল উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। পদ্মা নদীর পানি উপজেলা পরিষদ চত্তরে প্রবেশ করেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক। বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে এলাকার বহু রাস্তাঘাট। খাদ্য সংকটে রয়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।

এদিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গত দুই দিনে বন্যার পানি ঢুকে পরেছে। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক রাস্তাঘাট।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার ২৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। আর পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। আর ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে পুরো জেলায়।

বন্যা কবলিত এলাকার জনসাধারণের জন্য ১৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১৭’শ শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রান বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য জেলায় ১০৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে সরকারি হিসাবে পানিবন্ধী মানুষের সংখ্যা সাত হাজারের ওপরে দেখালেও জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

Facebook Comments Box
ভাগ