রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিনে সন্দেহ বাড়ছেই

প্রতীকী ছবি

কড়চা ডেস্কঃ রাশিয়া বলছে ভ্যাকসিন তৈরি। অথচ তাদের মন্ত্রণালয়েরই এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুপারিশ করলেন, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে। শিশু কিংবা বৃদ্ধদের এই প্রতিষেধক প্রয়োগের জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাশিয়া ঘোষণা করে, ‘স্পুটনিক ভি’ হাজির। তাদের ভ্যাকসিন তৈরি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ-ও জানিয়ে দেন, তাঁর নিজের মেয়ের শরীরে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও পরমুহূর্তেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিরিল দিমিত্রিয়েভের মন্তব্যে জানা যায়, ওই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়নি। অর্থাৎ নিয়ম মেনে ট্রায়াল সম্পূর্ণ না-করেই তারা ভ্যাকসিন প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়ে ফেলেছে।

রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সায়েন্টিফিক সেন্টার ফর এক্সপার্ট ইভালুয়েশন অব মেডিক্যাল প্রোডাক্টস’-এর প্রধান ভ্লাদিমির বন্দারেভ বলেন, ‘‘রাশিয়ায় বয়স অনুযায়ী তিনটি ভাগে পরীক্ষা করা হয়। সদ্যোজাত থেকে ১৮ বছর, ১৮ থেকে ৬০ এবং ৬০-এরও বেশি বয়সি। এখনও পর্যন্ত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে শুধু পরীক্ষা হয়েছে। অতএব এদের উপরেই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা সম্ভব বা উচিত।’’ যদিও গামালিয়া ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর এ-সব কিছুই জানাননি। উল্টো ৬০ ছুঁইছুঁই প্রবীণ বিজ্ঞানী বলেছিলেন, তিনি নিজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং ভাল আছেন।

প্রসংগত রাশিয়ার ঘোষণায় সাড়া পড়ে গিয়েছে পৃথিবী জুড়ে। স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগের খবর জানিয়ে রুশ রাষ্ট্র প্রধানের দাবি, এ বারে জব্দ হবে অতিমারি সৃষ্টিকারী কোভিড ১৯ ভাইরাস। কিন্তু সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমত গবেষণার পর কোনও কার্যকর টিকা প্রয়োগ করার আগে কোনও মেডিক্যাল জার্নালে সেই গবেষণা পত্র প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই টিকার গবেষকরা সেই পথ মাড়াননি। ধরা যাক, মহামারি আটকানোর তাড়ায় গবেষণা পত্র জার্নালে পাঠানোর সময় পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে ফেজ থ্রি ট্রায়াল তো বাধ্যতামূলক। স্পুটনিক ভি-র ক্ষেত্রে ফেজ থ্রি ট্রায়ালও অসম্পূর্ণ। ফেজ থ্রি ট্রায়াল দিতে হয় ৩০০ থেকে ৩০০০ মানুষের ওপর। টিকা দেওয়ার পর কিছু দিন কার্যকারিতার ওপর নজর রাখা হয়। সময় লাগে কয়েক মাস। রাশিয়ার আবিষ্কৃত টিকার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

স্পুটনিক ভি টিকার অ্যান্টিবডি লেভেল এবং সেলুলার রিঅ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও কিছুই জানানো হয়নি। হু-র নির্দেশিকা অনুযায়ী নতুন টিকা সবাইকে দেবার আগে বেশ কয়েকটি ট্রায়াল দিতে হয়। ব্যাপারটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। অ্যানিম্যাল ট্রায়ালের পর প্রথম পর্যায়ে হিউম্যান ট্রায়ালে ২০ থেকে ৮০ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয়। এর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০০ জন বা তারও বেশি মানুষের ওপর ট্রায়াল হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ৩০০০ থেকে ৫০০০ মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়। ফোর্থ স্টেজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক লক্ষ মানুষকে টিকা দিয়ে তাঁদের নজরে রাখতে হয়, কারও কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল কি না দেখা হয়। এ ছাড়াও টিকা কত দিনের জন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করছে তাও দেখতে হয়। রাশিয়ার টিকার ক্ষেত্রে এ সবই অজানা। টিকা কত দিন কার্যকর এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিছুই স্পষ্ট নয়।

তাই স্পুটনিক ভি-র নিরাপত্তা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ণ থেকেই যায়। তবে একমাত্র আশার ব্যাপার, এই ভাইরাসটির নানা রকম স্ট্রেন আছে। বিশেষজ্ঞের মতে, যদি রাশিয়ার মতো অনেকগুলি দেশ স্থানীয় ভাবে কোভিড ১৯ ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে, তা হলে এই অতিমারিকে আটকে দেওয়া সহজ হবে।

Facebook Comments Box
ভাগ