মাসুম বাদশাহঃ মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা শতাধিক ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে দিনদিন কমছে চাষাবাদের জমি। ফলে হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটা গ্রাস করে নিয়েছে ফসলি জমি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটাগুলো কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় ভাটার আশপাশে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। মাটি খেঁকোদের খপ্পরে পড়ে জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়, পুড়ছে আগুনে। ফলে উজাড় হচ্ছে কৃষি জমি।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি)সকালে ভূমদক্ষিণ ও রায়দক্ষিণের মাঝখানের চকে গিয়ে দেখা যায় মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। চকটিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসএফডি’র পশ্চিম পাশে রায়দক্ষিণ গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। জয়মন্টপ গ্রামের জনৈক সজিব এ মাটি কাটার সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ঢালিপাড়া-রিফায়েতপুর চকে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। জমিগুলো পরিণত হচ্ছে ডোবা ও নালায়। দিনে মাটি কাটা বন্ধ রাখলেও রাতে কিংবা সরকারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসব ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হয়ে থাকে বলে ওই এলাকার মৃত জুরানের পুত্র ইমরান হোসেন (৩২) অভিযোগ করে বলেন। তিনি আরো বলেন, এ মাটি ব্যবসার সাথে ঢালীপাড়া গ্রামের শাহ মিস্ত্রির পুত্র আব্দুল মালেক(৪০) জড়িত। প্রথমে তিনি কৃষকদের টোপ দিয়ে মাটি ক্রয় করেন। পরে এই চকের ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে বিক্রি করে দেন। আব্দুল মালেকের পাশাপাশি শামসুল ও আব্দুল মান্নান এ মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত। মাটি ব্যবসায়ী অভিযুক্ত আব্দুল মালেক মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি নিচু এলাকার এক ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করে থাকি। যা পরবর্তীতে মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি নিজেও মাছ চাষের সাথে জড়িত।
এদিকে, ওই ইউনিয়নের বাঘুলী চকে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার একই দৃশ্য। এ চকটিতে মাটি ব্যবসার মূল হোতা বাঘুলী গ্রামের ইয়াকুবের পুত্র রাজু (৩৫)। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে রতন মোল্লার পুত্র রুবেল (৩০) ও শামীম মোল্লার পুত্র বিল্লাল (৩২)। তারা প্রথমে কৃষকদের লোভ ও পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে। এতে আশপাশের ফসলি জমি ভেঁঙ্গে পড়ে। ওই এলাকার মাটি কাটার মূল হোতা রাজুর সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। পার্শ্ববর্তী মাধবপুর চকে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটায় গাড়ি চলাচলের জন্য ফসলি জমি নষ্ট করে বানানো হয়েছে রাস্তা। স্থানীয় কৃষক মজিদ, বশির ও ইয়াকুব আলী অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভাটা মালিকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি। পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় আমাদের জমিগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। গত বছরের জমি ভাঙ্গনের ক্ষত না শুকাতেই এবারও নতুন করে শুরু হয়েছে জমির মাটি কাটা। ভুক্তভোগী ফসলি জমির মালিকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।
চান্দহর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হোসেন বাদল চকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, আমিতো মাটি কাটা বন্ধ করার কেউ নই। আমাকে জানানো হলে আমি ইউএনও স্যারের কাছে পাঠাই। এছাড়া আমার এলাকায় মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, কৃষি জমির টপ সয়েল চলে গেলে এটা মারাত্মক ক্ষতি। এতে কৃষিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। আইনগতভাবে এ বিষয়ে তার কিছু করার নেই বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ যেখান থেকেই আসছে সেখানেই আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি। পাশাপাশি ওসি সাহেবকে বলা হয়েছে।
কড়চা/ এম বি