সিকি শতাব্দী নেই সায়েদুর ভাই : কাছ থেকে দেখা এক জননেতার প্রতিকৃতি
মধুসূদন সাহা
বড় সাদামাটা শিরোনাম দিলাম কোন বিশেষণ ছাড়া। যদিও তিনি অনেক বিশেষণের অধিকারী। সে সব পরে দেখা যাবে। আসলে মানুষ যদি গণ চরিত্রের অধিকারী হন, গণ মানুষের নেতা হন তবে তার সম্বোধনটা সংক্ষিপ্ত হয়ে যায় মানুষের কাছে। মানিকগঞ্জের প্রেক্ষিতে যেমন কামাল ভাই, ইকবাল ভাই তেমনি সায়েদুর ভাই। একে বলে রাজনীতিবিদদের গণ চরিত্র অর্জন। তিনি তার অধিকারী ছিলেন।
আমি উনার রাজনৈতিক মতাদর্শের সহযোদ্ধা ছিলাম না, কিন্তু উনার পারিবারিক বলয়ের একজন সদস্য ছিলাম অনেক কাল। ভিন্ন রাজনৈতিক বলয়ের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি জননেতা সায়েদুর ভাইকে কাছ থেকে দেখেছি এবং এখানেও সেভাবেই দেখার চেষ্টা করব।
এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুর ভাইয়ের ছোট ভাই সাবেক ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক আবু মোঃ তায়েবুর রহমান টিপু আমার স্কুল জীবনের সহপাঠী ছিলেন। সেই সাথে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। গোল দালানের কাছে সায়েদুর ভাইয়ের বাসায় রাস্তার সাথে দেয়ালঘেরা ছোট একটা টিন শেড ছিল। সেই ঘরে টিপু থাকলেও আমি/আমরা ও সায়েদুর ভাইয়ের নির্বাচনী এলাকার লোকে সবসময় ভরপুর থাকত। থাকা খাওয়ার কোন বাধা ছিল না। দিন রাত্রির পার্থক্য ছিল না আমাদের কাছে। কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে আমাদের তখন জম্পেশ আড্ডা। মধ্যমনি ছিল টিপু। আমার কাছে আমাদের বাড়ি অনেকটা পার্টটাইম হয়ে গেল। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে শহরে বন্ধুদের বলয়ে নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম। প্রায় অনেক দিন স্থায়ী এই সময়েই সায়েদুর ভাইকে কাছ থেকে দেখা।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে চলুন একটু ঘুরে আসি মানিকগঞ্জের অদূরে কালীগঙ্গার ওপারে ঘিওর উপজেলার সিংজুরি ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রাম থেকে। সিংজুরি ইউনিয়ন ঘিওর উপজেলার হলেও মানিকগঞ্জ, সাটুরিয়া ও দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী। নদী বেষ্টিত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে বাস করতেন বৃটিশ আমলে মানিকগঞ্জ মহকুমার রাজনীতি ও মুসলিম নবজাগরণের অন্যতম প্রাণ পুরুষ আবু মোঃ মোসলেম উদ্দিন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে মানিকগঞ্জ মহকুমার মুসলিম লীগের সতের জনের একজন। এদের মধ্যে ছিলেন মসিহউদ্দিন রাজা মিয়া, সাবেক চীফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বাবা খন্দকার নূরুল হোসেন, আব্দুর রহমান উকিল (বাবুল স্যারের বাবা), আনোয়ার শিকদার প্রমুখেরা। এরাই মানিকগঞ্জে দ্বিজাতি তত্ত্বের বিজয় পতাকা উড়িয়ে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। খর্ব হয় কংগ্রেসের একচেটিয়া বিস্তারে। এটাকেই মানিকগঞ্জের মুসলিম রেনেসাঁ বলা যেতে পারে। আর এর অগ্রদূত ছিলেন অনেকের সাথে সিংজুরির বৈকন্ঠপুরের আবু মোঃ মোসলেম উদ্দিন। এছাড়া তার আরও কিছু পরিচয় আছে। তিনি সিংজুরি ইউনিয়নে প্রায় তিরিশ বছর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। আর কর্মজীবনে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক ও সমাজসেবী। এই ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত মানুষের কয়েকজন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ছিলেন আমাদের আবু মোঃ সায়েদুর রহমান, সায়েদুর ভাই। তার গ্রামের মানুষ ও নিকটাত্মীয়রা বলত সোনা মিয়া। সোনা-ই বটে। একদম খাঁটি। বর্তমান মানিকগঞ্জের নষ্ট রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রেক্ষিতে তো বটেই। সুতরাং একথা বলা যেতেই পারে যে, সায়েদুর ভাইয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে। যেখান থেকে তিনি রাজনৈতিক উত্তরাধিকার পেয়েছিলেন। বৃটিশ ভারতে চারের দশকে মানিকগঞ্জের সিংজুরি ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রামে সায়েদুর ভাইয়ের জন্ম। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার পর মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর দেবেন্দ্র কলেজে। সেখান থেকে বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন।
সায়েদুর ভাই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। যা তাকে একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মানিকগঞ্জে অপরাপর রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যা বিরল। এর মধ্যে তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক,সাহিত্যিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, আদর্শ রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী সহ আরও অনেক কিছু। যার জন্য একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি মানিকগঞ্জে স্মরণীয়। এমনকি মৃত্যুর পঁচিশ বছর পর তিনি হারিয়ে যাননি মানুষের চিন্তা, মেধা ও মনন থেকে।
ছাত্র জীবন থেকেই সাংবাদিকতায় তার হাতে খড়ি। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি দৈনিক নাজাত ও মিল্লাত পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৬৩ সনে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি মানিকগঞ্জ শাখা গঠিত হয়। তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মানিকগঞ্জের প্রবীন সাংবাদিক মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ তাঁরা মিয়া। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সায়েদুর ভাই। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সনে কামাল ভাইয়ের প্রকাশনায় সাপ্তাহিক মানিকগঞ্জ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তার সম্পাদক ছিলেন সায়েদুর ভাই। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ১৯৮০ সনের দিকে ‘মুক্তির ডাক’ নামে আর একটি সাপ্তাহিক প্রকাশিত হয় মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগের পৃষ্টপোষকতায়, তারও সম্পাদক ছিলেন সায়েদুর ভাই। এছাড়া তার নিজের দুটি বইয়ের প্রকাশনা আছে। একটা পত্রপোন্যাস আর একটা কবিতার বই।
শিক্ষাবিদ হিসেবে ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবন। মানিকগঞ্জের বাইরে অধ্যাপনা শুরু করলেও তিনি মানিকগঞ্জ মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। ছিলেন ঘিওর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময়ের অধ্যাপনা সায়েদুর ভাইকে জেলার একজন আদর্শ শিক্ষাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রাজনীতিতে তার প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তার ছিল সাহসী পদচারণা। বিংশ শতাব্দীর সাতের দশক ছিল বাংলাদেশের সৃষ্টির অগ্নি ঝড়া দশক। এই দশকে ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, সিলেবাস থেকে বিকৃত ইতিহাস অপসারণের দেশ ও কৃষ্টির আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচনে প্রতিটি স্তরে সায়েদুর ভাই ছিলেন আন্দোলনের অগ্রপথিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জি এস)। সংযোগ ছিল স্বাধীনতা আন্দোলন কালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে, বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদের সাথে। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারত ফেরত মুক্তিযোদ্ধা না হলেও আরও অনেকের মত দেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রাম নদীবেষ্টিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় সেখান থেকেই মুক্তি যুদ্ধের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেছেন। যোগাযোগ ছিল নাগরপুরের বাতেন বাহিনীর সাথে। ১৯৭৩ সনের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু মনোনীত তিনশ’ জন এমপি প্রার্থীর একজন। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় এলাকার প্রভূত উন্নতি সাধনও করেছিলেন। তার জন্য আজও তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে স্মরণীয়। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের যাবতীয় কেন্দ্রবিন্দু ছিল সায়েদুর ভাইয়ের বাসায়। উনাদের বাড়িতে নেতাকর্মীদের যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল যা আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। উনার বাড়ির ছোট্ট গ্রন্থাগারে অনেক রাজনৈতিক বইয়ের মধ্যে বামধারার অনেক বই দেখেছি, উনি ডানপন্থী রাজনীতি করলেও। এ হচ্ছে একজন আদর্শ নেতার অন্যতম দিক। আজকালের নেতারা তো নিজের রাজনীতিই বুঝে কিনা সন্দেহ। আদর্শের থেকে অর্থ ও নেতৃত্বের প্রতি মোহই তাদের শেষ কথা। সমাজ বিজ্ঞান ও নৈতিকতার নিয়মানুযায়ী অবশ্যই তাদের ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে, তার কোন বিকল্প নেই। শুধু ভোগান্তি হবে জনগণের আর ব্যহত হবে জাতীয় অগ্রগতির ধারা।
সায়েদুর ভাই ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলার ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি অলংকৃত করেছেন মানিকগঞ্জ মহকুমার ক্রীড়া সংস্থার পদ। মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ। সব মিলিয়ে তার বার্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন ছিল। সেই সাথে ছিল প্রশ্নাতীত সততা। তার জন্যে মানিকগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি স্মরণীয়। স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে। মৃত্যু মানুষকে মহান ও স্মরণীয় করে তোলে না। মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকতে পারে তার কর্মে। তার গর্বিত অধিকারী তিনি ছিলেন। তাই তিনি জনমানুষের কাছে স্মরণীয়।
না বললেই নয় আর একজনের কথা। তিনি ভাবী নীনা রহমান। একজন রাজনৈতিক নেতার সহধর্মিনী হলেও তিনি নিজের যোগ্যতা ও গুনে আলোকিত। তিনি ঢাকা হলিক্রস স্কুল ও লালমাটিয়া কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। পিতা সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পদে ছিলেন। আর উনার ভাই বাংলাদেশের জাতীয় ব্যক্তিত্ব। সর্বকালের সেরা শ্রদ্ধেয় ফুটবলার টিপু ভাই। না চিনে থাকলে আপনার ফুটবল জ্ঞান প্রশ্নবোধক। ভাবী আধুনিক চিন্তা ধারার মানুষ। সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রাজনীতি, সমাজ সেবা, নারী উন্নয়ন, আতিথেয়তা সামলেও সায়েদুর ভাইয়ের রাজনৈতিক জীবনে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও জানতাম ভাবী মানিকগঞ্জ জেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আজীবন একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার উপলদ্ধি এটা দয়ার দান ছিল না। কিন্তু অতীব দুঃখিত হলাম যখন শুনলাম নিকট অতীতে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পদচ্যূত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিহীন ভূঁইফোড়েরা। যা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার আদর্শের পরিপন্থী। স্বাক্ষী আমি নিজে। জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের সময় আলোচনার জন্য মহীউদ্দীন ভাই জাসদের নেতাদের সাথে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে একটা সাক্ষাৎ এর ব্যবস্থা করেছিলেন। অনেকের মধ্যে আমিও ছিলাম। নুতন পুরাতনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, যদি যথার্থ ভাবে কাজ করে থাকেন তবে পুরাতন কখনও অপসারণ হবে না। আর কাজ করে নুতন কেউ উঠে আসলে তাকেও জায়গা করে দিতে হবে। এই কথায় খুশি হয়ে আমরা নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। এর কোন কথারই মান্যতা বর্তমানে মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগে নেই। যেমন দেখা যায়নি সম্প্রতি মহিলা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে। তাতে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ হলেও ভবিষ্যত রাজনীতি ও সংগঠনে সংকট সৃষ্টি করবেই করবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
একটু আমাগো মুরব্বী দুর্জয়ের কথা বলি।ওরা তিন ভাই বোন। সিমি, দুর্বার, দুর্জয়। ওরা আমার কাছে সমান ভালবাসার। তবে প্রাসঙ্গিক কারণেই আজকে একটুখানি দুর্জয়ের কথা বলব। দুর্জয়ের মানিকগঞ্জে ওর বাবার আসনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ায় অনেকের মত আমিও খুশি। যেমন খুশি হয়েছিলাম ওর ক্রিকেট সাফল্যে। ওকে চিনি আমি ওর হাফপ্যান্ট পরা না পরা অবস্থা থেকে। ওর কথা বলার ও খেলার সাথীও ছিলাম। সায়েদুর ভাইয়ের বাড়িতে বড় উঠান ছিল। সেখানে প্রায় দিনই আমার ওর সাথে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে হত। (ভাববেন না আবার আমি ওর প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলাম। ও খেলা তো আমি জানিই না)! ছোটবেলায় ও ডানপিঠে, মনযোগী ও জেদী ছিল। অন্য ভাই বোনের তুলনায়। এটা অনেকের ক্ষেত্রে বাল্য কালের ইতিবাচক দিক। যা ওকে জীবনে প্রতিষ্ঠা, সাফল্যে সহায়তা করেছে। ক্রিকেটার দুর্জয়ের কথা লেখার যোগ্যতা আমার নেই। ওটা আমার বন্ধু নান্নু পারবে। ওর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে ‘ক্রিকেটার দুর্জয়’ নামে একটা পূর্ণাঙ্গ লেখার জন্য।
দুর্জয়ের রাজনৈতিক উত্থানে আমি অনেক খুশি ও কোন দিন অবাক হইনি। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে সব রাজনৈতিক শক্তি চায় Young and Energetic Leadership. জননেত্রীও তাই চান। সে হিসেবে মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নে দুর্জয় কাক্সিক্ষত। মানিকগঞ্জে আমার মনে হয় দুর্জয়েরই আছে একমাত্র স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি। দুর্জয়ের তিন পুরুষের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। ওর দাদা মোঃ মোসলেম উদ্দিন মানিকগঞ্জে মুসলিম নবজাগরণের প্রাণ পুরুষ ঘিওরের সিংজুরি ইউনিয়নের প্রায় তিরিশ বছরের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এটা মানিকগঞ্জের ইতিহাস বইতে উল্লেখ আছে। এরপর বাবা সায়েদুর রহমান এবং ও নিজে। তিন পুরুষের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তো একেই বলে। সুতরাং মানিকগঞ্জে ও ভূঁইফোড় রাজনৈতিক নেতা নয়। একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির উওরাধিকার। রাজনৈতিক নষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে এখনও প্রদীপের শিখা নিভে যায়নি প্রমাণিত হয় দুর্জয়ের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে। এটা আমার বিশ্বাস। এর জন্য একজন মানিকগঞ্জবাসী হিসেবে আমি গর্বিত।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচিত এমপি, রাজনৈতিক নেতা তাকে বাৎসল্য ভাষায় অনেক আবেগ মাথিত কথা বলে ফেললাম। আসলে ব্যক্তির ক্ষমতায়ন হলে তিনি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন। তখন ছোট বড় সম্পর্কের মধ্যে যাচাই চলে না। তাই, অনেক অনেক শুভকামনা বিসিবি’র চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে।
প্রার্থনা করি সায়েদুর ভাইয়ের আত্মার সদগতির জন্য।
কড়চা/ এম এস