২৬ মার্চ ২০২১, স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে নাগরিকের ভাবনা
রুহুল ইসলাম টিপু
২৬ মার্চ ২০২১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর। সুবর্ণ জয়ন্তী। ১৭ কোটি মানুষের আনন্দের দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। পৃথিবীও উদযাপন করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, আজ আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল। বিশ্ব জানে ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ ২৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। দারিদ্র্যতা, তলাবিহীন ঝুড়ি, অক্ষমতার নানাবিধ সীমাবদ্ধতার স্তর পেরিয়ে আজকের ঈর্ষনীয় অর্জন উদযাপন করছে আমাদের দেশ। সকল নাগরিকের গৌরব এবং অহংকারের বাংলাদেশ। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি মহান মুক্তিযোদ্ধাদের। ’৭১ এর ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর ২৬৬ দিনে ৩ মিলিয়ন যেটি সময়ের হিসেবে প্রতি মিনিটে ৭ জন মানুষকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা হত্যা করে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অল্প সময়ে এতো হত্যাজজ্ঞের নজির সম্ভবত: নেই।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে অর্জনের তথ্যগুলো উপস্থাপন করতে আমি বেশি আগ্রহী। বিবিএস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৭৩-৭৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল মাত্র ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; ২০২০ সালের হিসেবে যা ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে মাথা পিছু আয় ছিল মাত্র ১২৯ ডলার; সেটি এখন ২ হাজার ৬৪ ডলার। দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ এবং সেটি কমে হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। এখন সাড়ে ৩ কোটি মানুষ দরিদ্র। সরকারের নিকট নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের দারিদ্র্যের বর্তমান চিত্র আনন্দ উৎসবে স্থবিরতা এনে দেয়। জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশবাসীর সক্ষমতার পরিসীমা আকাশসম। স্বাধীনতার ৫০ বছরের পূর্ণতার দিনে দারিদ্র্য চিরতরে নির্মূলের বাস্তবায়ন দেশবাসী প্রত্যাশা করছে। সাড়ে ৩ কোটি নয়, একজন মানুষও দরিদ্র থাকতে পারে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এক সময় ছিল বিদেশী ঋণ নির্ভর। সেখানে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে ৩০ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট পদ্মাসেতু। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এটি আমাদের অর্জনের বড় সাফল্যের চিত্র।
আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নেপথ্যে সকলের সাথে মোটা দাগে তিন শ্রেণি পেশার মানুষকে আজ সম্মান জানাতে চাই। তারা হলেন আমার দেশের কৃষাণী বোন এবং কৃষক ভাইয়েরা। কৃষিকে যারা ধরে রেখেছেন। ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখছেন। কষ্ট এখানেই দারিদ্র্যের ২০.৫ শতাংশের একটি অংশ কৃষক এবং কৃষিজীবী মানুষ। রপ্তানী আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোষাক খাত হতে। এখানে নিয়োজিত প্রায় ৪০ লক্ষ পোশাকশ্রমিক, যার ৮০ ভাগ আমার বোন নারী। তৈরি পোশাক খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকসহ সকল শ্রমজীবী মানুষকে সম্মান জানাই। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিদায়ী অর্থ বছরে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানী আয় পেয়েছে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার ৪ হাজার ৪০০ শত কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি এখন দক্ষিণ এশিয়ায় (ভারতের পরে) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক রিজার্ভের অধিকারী। তৈরি পোশাক ছাড়াও এ খাতকে সমৃদ্ধি করেছে সোয়া ১ কোটি বাংলাদেশী শ্রমিক বোন এবং ভাইয়েরা। যাদের কষ্টার্জিত অর্থে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ। অথচ তারা হন নির্যাতনের শিকার, চক্র কর্তৃক প্রতারিত, কেউ কেউ হন লাশ। এ লজ্জা দূর করতে হবে। কারণ আইএমএফের মতে, আমাদের জিডিপি ৩১৭ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রবাসী শ্রমিক বোন-ভাইদেরও অভিনন্দন। ভালো তথ্যের সাথে নেতিবাচক দিক নিয়ে আরো সতর্ক থাকতে হবে; যেমন আমাদের পাচারকৃত অর্থের পরিমাণও অনেক বেশি। এটি বন্ধ করতে হবে।
স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হোক ১৭ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্খা সুখ প্রশান্তি এবং পরম তৃপ্তির মধ্য দিয়ে; বাংলাদেশ জেগে উঠুক রঙিন পাখায়; পৃথিবীর মানুষ দেখুক সুখী মানুষের আনন্দোৎসব। আমরা বাংলাদেশী জানি সুখী হওয়ার মন্ত্র। তাই আমরা সকলেই সুখী। পৃথিবীকে শিখাতে চাই। সুখ বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই পরম আনন্দ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সফল হোক।