কড়চা রিপোর্টঃ পদ্মা , যমুনা এবং আভ্যন্তরীণ নদী কালিগঙ্গা, ইছামতি ও ধলেশ্বরীর পানি বাড়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় ভেঙ্গে গেছে বহু বসত ঘর আর আবাদি জমি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় হরিরামপুর-মানিকগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে পদ্মা নদীতে অব্যাহত পানি বাড়ায় হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, আজিমনগর, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ওই সব ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের বসতভিটাতেও পানি প্রবেশ করেছে।
যমুনায় পানি বাড়ার কারণে দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে। এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
এছাড়া শিবালয়, দৌলতপুর এবং ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি প্রবেশ করছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এর ফলে এসব এলাকার নিন্মাচলের বাড়িঘর এবং ফসলি জমিও তলিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার সকালে শিবালয় উপজেলার আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১০ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার ছিল, যা বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হরিরামপুরের পদ্মা নদীতেও বিপদ সীমার প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মানিকগঞ্জ পানি বিজ্ঞান শাখার পানির স্তর পরিমাপক মো. ফারুক আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বন্যার পানি থেকে রক্ষায় কোনো কোনো এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। পানিতে চারদিক তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এদের চাল, ডালসহ শুকনো খাবার দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সবকটিতে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি পানিবন্দী মানুষ রয়েছে লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়নে পানিবন্দী যেসব মানুষের খাবার সংকট রয়েছে তাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’এ পর্যন্ত ৬০০ পরিবারকে খাবার দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত ২৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ৭ হাজার ৯ হাজার ১৯৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৭২৯ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুত রয়েছে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, মানিকগঞ্জের প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল এখন পানির নিচে। পানি বাড়তে থাকলে আরও বেশ কিছু এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, হরিরামপুর উপজেলার পদ্দা নদীর তীরবর্তী ৫৯৫ মিটার, দৌলতপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ২৩৫০ মিটার, সাটুরিয়া উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী ১১০০ মিটার, ঘিওরে ২০০ মিটার এবং শিবালয়ে ১৭৫০ মিটার এলাকা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।