দীপক কুমার ঘোষ
মৃনাল কান্তি বসাক ডাক নাম বাচ্চু। সবাই বাচ্চু বসাক নামেই চিনতো। আমি এবং বাচ্চু কৈশোর থেকে এবয়স অবধি একসাথে বেড়ে উঠেছি। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় বাচ্চু সকলকে ফাঁকি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপুরে নাফেরার দেশে চলে গেলো।
সুখেদুখে জীবনের দীর্ঘপথ একসাথে চলেছি। একদিনের জন্যও বিরোধ বা ভুলবুঝাবুঝি হয়নি। কখনো কোনো কাজে প্রতিপক্ষ হইনি। তুইতুকাড়ি সম্পর্ক।
মডেল হাই স্কুলে একক্লাশে পড়া,স্কুল ফাঁকি দিয়ে মন্জু-কার্তিকদা-হজাভাইর বিস্কুট ফ্যাক্টারীতে আড্ডা দেয়া। মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রয়াত বাদলের নেতৃত্বে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে আমি-বাচ্চুসহ অনেকে প্রগতিশীল বিপ্লবী দেশগড়ার কারিগর নামে কৃষিকাজে যুক্তথাকা। সাবিস প্রতিষ্ঠা,লঙ্গরখানায় যুদ্ধশেষে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন,কালীবাড়ী মাঠে বাতার স্ট্যাম্প আর কাঠদিয়ে ব্যাট বানিয়ে টেনিসবলে ক্রিকেট খেলা। গুলতি দিয়ে পাখি মারা(এখন পাখি রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন করছি পালক নামক সংগঠনের মাধ্যমে), একসাথে ক্যারাম খেলা, রাতে চকি সংসদে আড্ডা দেয়া,তর্ককরা কতকিছু মনে পড়ছে আজ।
দেবেন্দ্র কলেজে ছাত্র সংসদে জোর করে সমাজ কল্যান সম্পাদক পদে দাঁড় করিয়ে বিজয়ী করা। আজকের মেয়র সেলিম ভাইর ঘড়ি মার্কা নির্বাচনে রাতদিন পরিশ্রম করে বাচ্চুর অসুস্থ হওয়ায় সেলিম ভাইর নির্বাচনী কর্মসূচি স্থগিত করে ডাক্তার এনে চিকিৎসা করা এবং ভালো হয়ে আবার নির্বাচনী কাজে নেমে পড়া। এগুলো এখন মনে পড়ছে,চোখের সামনে ছবিরমত ভেসে উঠছে।
বাচ্চু খুব ভালো ক্যারাম-ব্যাডমিন্টন খেলতো। কয়েক বছর আগে বাচ্চুর মেয়ে বিয়ে হলো। আমিসহ বন্ধুরা প্রচন্ড বৃস্টিতে কাজ করলাম আবার বৌভাতে আমরা সবাই একসাথে পাথরাইল গেলাম। শুধু তাই নয় বাচ্চুর বিয়াই খুব ভালোলোক এবং ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন। তার আন্তরিক আতিথিয়তার কারণে বিয়ের অনেকদিন পড়ে আমি সেলিম ভাই মন্টুদাসহ অনেকেই বেড়াতে গেলাম টাংগাইল পাথরাইলে। সেকি আনন্দ-আপ্যায়ন।
সেই বাচ্চু আজ চিকিৎসা করতে গিয়ে ভালোও হয়েছিলো, কিহলো হঠাৎ সংবাদ এলো বাচচু নেই। বাদল,জসু,রোম,লিটা এবং বাচ্চু অসময়ে চলেগেলো।
ইকবাল, বাবুল চৌধুরী,পরেশ,হায়দার,সেন্টু এমনিকরে খুব আপনজনেরা চলে যাচ্ছে। মৃত্যুর এ মিছিলের কঠিন বেদনার ভার বহন করা খুব কঠিন। বিশ্বাস আর আস্থার মানুষগুলো কেনোজানি দ্রুত চলে যাচ্ছে।
জীবনের সবলেনদেন চুকিয়ে দিয়ে বাচ্চু চলে গেলো। রেখে গেলো সুখ-দু:খভরা বহমান জীবনের স্মৃতিগুলো।
“ওপাড়ে ভালো থাকিস বাচ্চু”।