মুরগি আগে না ডিম? নতুন গবেষণায় রহস্যের উত্তর মিলল

কড়চা ওয়েব ডেস্ক : মুরগি আগে, না ডিম আগে? যুগ যুগ ধরে এই তর্ক চলেছে। কিন্তু কোনটি আগে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই গিয়েছে। একটা অংশের দাবি মুরগি আগে এসেছে। আবার একটা অংশ বলেন না, মুরগি নয়, ডিমই আগে।বিতর্কটা মূলত ডিম আর মুরগির আবির্ভাব নিয়ে। ডিম আগে নাকি মুরগি আগে। আবহমান কাল থেকে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন। এই ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বহু বিজ্ঞানী থেকে সমাজতত্ত্ববিদ বিস্তর হিমশিম খেয়েছেন। যুক্তি দিয়ে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর বের করা কার্যত অসম্ভব ছিলো। হ্যারি পটারের সেই ডাইনি লুনা লাভগার্ডের কথা মনে আছে? যে বলেই দিয়েছিল, ‘একটি বৃত্তের কোনও শুরুই আসলে থাকে না।’ ফলে পক্ষে বিপক্ষে বিজ্ঞানীদের এ বিষয়ে নানান মতামত পাওয়া গেছে নানান সময়ে।

১৮২৫ সালে দার্শনিকদের জীবনী নিয়ে লেখা বই Francois Fenelon– এ এরিস্টটল অংশে আছে, “If there has been a first man he must have been born without father or mother – which is repugnant to nature. For there could not have been a first egg to give a beginning to birds, or there should have been a first bird which gave a beginning to eggs; for a bird comes from an egg.”

স্টিফেন হকিং বলতেন তিনি ডিমের পক্ষে। গবেষক রিচার্ড ডকিংস বলেন, “The chicken is only an egg’s way of making another egg.” এটা বলেও কিছু সমাধান হল না।

 অনেক গবেষক বলেন, মানুষের প্রাপ্ত প্রাচীনতম ডিম ১৯ কোটি বছর আগের যা প্রাপ্ত উড্ডয়ন অক্ষম প্রাচীনতম পাখি আর্কিওপ্টেরিক্সের আরও বেশ কয়েক কোটি বছর আগের। তার মানে দাঁড়াচ্ছে পাখির কোন জাতি আসার আগেই অন্য সরীসৃপ প্রজাতিরা ডিম পাড়ত।

এক মার্কিন ওয়েবসাইট দাবি করেছিল মুরগি নয়; ডিম-ই আগে এসেছে। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট ক্রুলউইচ এই জটিল প্রক্রিয়ার সমাধান করতে গিয়ে বহু বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কয়েক সহস্রাব্দ আগে পৃথিবীতে বাস ছিল মুরগি সদৃশ এক ‘পাখি-র। প্রাগৈতিহাসিক সেই পাখি জিনগতভাবে অনেকটাই মুরগিদের কাছাকাছি। তবে তা পুরোমাত্রায় মুরগি ছিল না।

আমেরিকান এস্ট্রো ফিজিসিস্ট ডি গ্রাসি টাইসন পরিষ্কার বলে দেয় যে, ‘Which came first: the chicken or the egg? The egg– laid by a bird that was not a chicken.’ ধারণা করা হচ্ছে যে চিকেনের আগে ‘প্রোটো-চিকেন’  নামের এক পাখি ছিল যেটা প্রোটো এগ নামক ডিম পারত। এটা থেকে মিউটেশন হয়ে একদিন এর প্রোটো এগ ফেটে মুরগি বের হল যে চিকেন ডিম পাড়তে লাগল।

মুরগির সেই প্রাচীনতম পূর্বসূরী এক ডিম পেড়েছিল। পুরুষ সঙ্গী সেই ডিমে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে। এর পর বেশ কিছু মিউটেশনগত পরিবর্তন ঘটে, যা তখনকার সেই পুরুষ কিংবা মহিলা মুরগির জিন থেকে বেশ কিছুটা পৃথক। নতুন প্রজাতির সেই উৎপন্ন পাখিই হলো আজকের মুরগির আদি পূর্বপুরুষ।

এর পর কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মিউটেশনগত রদবদল বহুবার ঘটে। প্রথম যে মুরগি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মুরগির সঙ্গে হয়তো আজকের এই মুরগির প্রচুর অমিল।

মিউটেশনটি ডিমের মধ্যে ঘটে যাওয়ার ফলে সেই আদি মুরগিটির উৎপত্তি হয়েছিল, তার মানে ডিমটির আগে কোনও মুরগি ছিল না।

অর্থাৎ পুরো ঘটনাটি সংক্ষেপে বলতে হলে, প্রাগৌতিহাসিক মুরগি-সদৃশ এক পাখি ভিন্নধর্মী এক ডিম পাড়ার ফলে উদ্ভব ঘটে আদিতম মুরগির। তাই মুরগির আগেই ডিম এসেছে। তাই ডিম-ই আগে আর মুরগি পরে।

এভাবে কোনটি আগে তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চলেছে।সম্প্রতি সেই রহস্যের সমাধান করেছেন এক দল গবেষক। তাঁদের দাবি, ডিম নয়, মুরগিই আগে। এবং সেটা প্রমাণ-সহ প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁরা।

ব্রিটেনের শেফিল্ড এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চালানোর পর সেই ধাঁধার উত্তর খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। গবেষকদের দাবি, ডিমের মধ্যে যে সাদা অংশটি থাকে তাতে ওভোক্লিডিন (ওসি-১৭) নামে প্রোটিন থাকে। ডিমের সৃষ্টিতে এই প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এই ওভোক্লিডিন প্রোটিন মুরগির গর্ভাশয়ে পাওয়া যায়। গবেষকদের দাবি, এর থেকে প্রমাণিত যে, প্রথমে মুরগি এসেছে। তার পর তার গর্ভাশয়ে ওভোক্লিডিন প্রোটিন তৈরি হয়েছে। সেই প্রোটিন থেকেই ডিমের সৃষ্টি।

তবে এ তো না হয় জানা গেল যে মুরগি আগে এসেছে। কিন্তু সেই মুরগি পৃথিবীতে প্রথম কী ভাবে এল তা নিয়ে কোনও জবাব দিতে পারেননি গবেষকরা।

কড়চা/ এস কে

 

 

 

Facebook Comments Box
ভাগ