মাসুম বাদশাহ : সারাদেশের অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ও তালেবপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর সাড়ে ৮ কিলোমিটারের অধিক পুনঃখনন শুরু হয় অনিয়মের মধ্য দিয়ে। ১৬ টি প্যাকেজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কখনো দেশীয় ড্রেজার আবার কখনো ভেকু দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করে। ফলে ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে তীরবর্তী ফসলি জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কাটার ফলে গোলড়া এলাকার উত্তর-পশ্চিম তীরের ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়া শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি নজরে আসায় উপজেলা প্রশাসন ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। অভিযোগ ওঠেছে নিয়ম অনুযায়ী নদী খনন কাজে কাটার মেশিন ব্যবহার না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কাশিমনগর গ্রামের মুফতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গনের কবল থেকে নদী তীরবর্তী আমার জমি রক্ষা করতে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বিনোদপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদী খননের কথা থাকলেও এখানে সেটা মানা হচ্ছে না।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে কাশিমনগর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীটির প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় ওই স্থানগুলোতে চলছে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। হায়দার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রশিদের মাধ্যমে প্রতিদিন শতশত ট্রলি মাটি বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে দায়িত্বে থাকা মোঃ রিপন হোসেন জানান, নিলামপ্রাপ্ত ব্যাক্তির কাছ থেকে ক্রয় করে খননকৃত মাটির মূল্যসহ ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। হায়দার এন্টারপ্রাইজের মতো ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও মাটি বিক্রি করছে।
এদিকে, উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাই নিলামের মাধ্যমে মোঃ আমজাদ হোসেন, আবু নঈন মোঃ বাশার, দেওয়ান মাহবুবুল আলম ও আবুল কালাম আজাদকে ২ কোটি ১১ লক্ষাধিক ঘনফুট মাটি/বালু ড্যাম্পিং স্পটের ও নদী খননকৃত মাটি সরবরাহের অনুমতি পায়। এ সুযোগে নিলামপ্রাপ্ত ব্যাক্তির বাইরে একাধিক প্রতিষ্ঠান অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
মাটি বিক্রির সাথে জড়িতরা জানান, নিলাম প্রাপ্ত ব্যাক্তিদের কাছ থেকে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কিনে নিয়ে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এসব মাটি সবই খননকৃত । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিলামপ্রাপ্ত একাধিক ব্যাক্তি জানান, আমরা নিলামপ্রাপ্ত হলেও ক্ষমতাসীন স্থানীয় প্রভাবশালীরা এটা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা বলেন, বিষয়টি সরেজমিন দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও রুনা লায়লা বলেন, কৃষি জমি রক্ষার্থে ও ভাঙ্গন রোধে ড্রেজার দিয়ে নদী তীরবর্তী খনন কাজ বন্ধ করা হয়েছে। নিলামকৃত মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিতে বাধা নেই। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটির উপস্থিতিতে লাল নিশানের বাইরে থেকে মাটি কেটে নেয়ার সুযোগ নেই।
কড়চা/ এম বি