সুরেশ চন্দ্র রায় : সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের সাতুরিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে কেটে নেয়া হচ্ছে বালু। এই বালু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ষাটঘর তেওতা এলাকার বাচ্চু মিয়া ও মোশারফ চেয়ারম্যানের ভাগিনা টিপু। টিপুর ড্রেজার বাণিজ্যের অংশীদার হিসেবে রয়েছে কাঞ্চন ও সোহেল। এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও পার্শ্ববর্তী ফসলি জমির ক্ষতি সাধন করে তারা দিনের পর দিন ড্রেজার চালিয়ে মাটি কেটে উপার্জন করছে লাখ লাখ টাকা।
তেওতা বাসেট গ্রামের মনিরুজ্জামান জানান, যমুনায় ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দাপটে এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শত অনুরোধ করেও তাদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি।
মালুচি গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, ড্রেজারের তাণ্ডবে আমার ১০০ ডেসিমাল ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ফসলি জমির পাশাপাশি আমাদের বাড়িঘর পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাবে।
ঢালা গ্রামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ড্রেজারের কারণে আমাদের ২৭ ডেসিমাল ফসলি জমি ভেঙে গেছে। এ বিষয়ে কথা বললে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করে। এ কারণে এখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে নীরবে সব অত্যাচার সহ্য করছি।
এছাড়া এলাকার কয়েকজন সচেতন মানুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দাপটে সাধারণ মানুষ অসহায়। কোনো লোক ড্রেজার বন্ধের বিষয়ে তাদের অনুরোধ করলে তারা নানা রকম ভয়ভীতি দেখায়। তাদের চালচলন, আচার-ব্যবহার ও কথাবার্তায় মনে হয় তারা যেন ড্রেজার ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স পেয়েছে।
গত সোমবার (৪ জুলাই) তেওতা ইউনিয়নের যমুনা নদীর পাড় এবং শিমুলিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সাতুরিয়া পেয়ারা বাগানের পাশের যমুনা নদীতে বাচ্চু, টিপু, কাঞ্চন ও সোহেল রানা দুটি ড্রেজার বসিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবাধে বালু বিক্রি করছে।
বাচ্চু জানায়, আমি আমার চাচার জমি ভরাটের জন্য যমুনা নদীতে ড্রেজার বসিয়েছি। আমার আর মাত্র কয়েকটা দিন সময় লাগবে। আমাকে একটু সুযোগ দিন।
টিপু জানায়, কাঞ্চন ও সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে আমি ড্রেজার ব্যবসা শুরু করেছি। তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন আমাদের ড্রেজারের বিষয়ে কিছু জানেন না।
অপর একটি ড্রেজার চালানো হচ্ছে শিমুলিয়া ইউনিয়নের কোঠাধারা মসজিদের পেছনে সোহরাব হোসেনের পুকুরে। দাপটের সঙ্গে এ বালু ব্যবসা পরিচালনা করছে লুৎফর রহমান নামক এক ব্যক্তি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে লুৎফর রহমানের ড্রেজার তাণ্ডবে আব্দুল্লাহ নামক এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অনেক ফসলি জমি ভেঙে পুকুরে চলে গেছে। ওই ব্যক্তি প্রতিবাদ করলে লুৎফর রহমান তাকে নানাবিধ ভয়ভীতি দেখায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ফসলি জমি ভাঙনে ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী আব্দুল্লাহ বালু ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন।
শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিছুর রহমান খান বলেন, ড্রেজার ও ভেকুর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ড্রেজার ও ভেকু ব্যবসায়ী যারাই হোক- কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত অভিযান চালিয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কড়চা/ এস সি আর