সম্মানিত সহকর্মীবৃন্দ
বর্ষার শুভেচ্ছা নেবেন। আশা করি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। আর মানসিকভাবে কেমন আছেন তা অনেকটাই বুঝতে পারি। এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন ব্যানারে আপনারা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ২৮ বছর (১৯৯৪ হতে) ধরে আপনারা প্রায় বিনা অথবা সামান্য সম্মানীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। আপনারা আর পেরে না উঠাতে এবার বেতন ভাতার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন। আপনাদের অবগত করতে চাই যে, আমার প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস-১৯৮৪) সবার আগে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি লিখিতভাবে সরকারকে জানায়। পরে অন্যরাও এমন দাবি তুলেছেন। বর্তমানে নন-এমপিও শিক্ষকদের মধ্যে একাধিক সংগঠন তৈরি হয়েছে। দু’একটি সংগঠনের সাথে লিংক থাকায় আমার মেসেঞ্জারে অনেক বিষয়ই চলে আসে। আপনাদেরই একজন হিসেবে দু’একটি কথা বলছি। আপনাদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক। আমি আপনাদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে দৈনিক সংবাদ, দৈনিক শিক্ষা এবং সাপ্তাহিক কড়চায় লিখেছি। আজ লিখছি এবং কালও লিখব। কিন্তু আপনাদের কারো কারো কার্যকলাপ নিয়ে কিছু কথা বলা আবশ্যক মনে করছি।
আপনাদের কেউ কেউ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ স্যার সম্পর্কে অশোভন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি স্যারের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন। এসব কাজ কতটা গ্রহণযোগ্য তা আরেকবার ভেবে দেখবেন। আপনাদের কথা শুনে আন্তর্জার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টার্মের মাননীয় ভিসি স্যারকে মহামান্য রাস্ট্রপতি দায়িত্ব হতে সরিয়ে দেবেন এমনটি ভাবার তেমন কোনো অবকাশ নেই। কারণ, স্যারের প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা সম্পর্কে আপনাদের অনেকের সন্দেহ থাকলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মোটেও তা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল। ভিসি স্যারের নেতৃত্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বীর দর্পে এগিয়ে চলছে। কাজেই আপনাদের অনুরোধ করবো যা করার দু’বার ভেবে করুন। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য। আমাদেরই অভিভাবককে অসম্মান করে দাবি আদায় কতটা সম্ভব তা অন্তত একবার ভেবে দেখবেন। আর ‘‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে” জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি স্যার আর আমাদের অবস্থানটাও আরেকবার দেখে নেবেন। আপনাদের অনুরোধ করি গুজবে কান না দিয়ে আর গলার আওয়াজে বিভ্রান্ত না হয়ে আপনারা এক জোট হয়ে ভিসি স্যারের সাথে দেখা করুন।
আপনারা অবগত আছেন ভিসি স্যারের নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে দেশের ২ হাজার ২৬০ টি অধিভুক্ত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে পেয়েছেন। এসব লক্ষণ অত্যন্ত শুভ বলেই আমি মনে করি। এখন দরকার আপনাদের একতা। কাজেই গ্রুপ ভিত্তিক নেতা না হয়ে এক জোটের নেতা হলেই ফল ভালো হবে। এ ব্যাপারে আপনারা ভেবে দেখবেন।
ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনাদের নিকট হতে বিদায় নেব। একজন লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে দেশের একটি জেলার কয়েকটি কলেজের নন-এমপিও অনার্স শিক্ষকদের মৌখিক ও লিখিতভাবে একাধিকবার চা-চক্রে বসার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। একজন মোসলেম মোল্লা ছাড়া কারোর সাড়া পাইনি। এজন্য মোসলেম মোল্লাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীদের কাছ হতে তাদের কথা শোনার। জেলার নাম সবাই জানলে সেসব শিক্ষক লজ্জা না পেলেও আমি লাজে মরে যাব। তাই জানালাম না। সারা দেশেই হয়তো এরা আছেন। এরা নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পান। নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে নারাজ। এরা সারা জীবনই হয়তোবা অন্যের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খেয়ে এসেছেন। আলোচনায় যাবেন না। মিছিলে যাবেন না। এরা অন্যের ফলানো টসটসে আঙ্গুর খেতেই অভ্যস্ত। এরা কি এমপিওভুক্তির যোগ্য? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও কিন্তু বিরোধীরা ছিল। এ ব্যাপারটাও ভেবে দেখবেন। দ্রুত আপনাদের জয় হোক। আপনাদের মনে শান্তি আসুক। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
তারিখঃ ১৪ জুলাই ২০২০
শ্যামল কুমার সরকারঃ লেখক ও কলামিষ্ট