ঈদ উল আজহা’র উৎসব হোক সার্বজনীন
রুহুল ইসলাম টিপু
ঈদ উল আজহা। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব। পাঞ্জাবি টুপি জায়নামাজ। ঈদগাহ খোলা মাঠে নামাজ। কোলাকুলি-কদমবুছি, ভক্তি-শ্রদ্ধা, স্নেহ-ভালেবাসার বর্ণিল আনন্দ। পশু কোরবানী এবং মাংস বিলানো। মুসলিম ধর্মাবলম্বীর অন্য উৎসব হচ্ছে ঈদ উল ফিতর। এক মাস রোজার পর হাজির হয়। দুই উৎসবকে নিয়ে বাংলাদেশ আনন্দে মেতে উঠে। বিশ্ব সম্প্রদায়ও এ আনন্দে নিমজ্জমান। ফরজ হজ্জ্ব সম্পর্কিত ঈদুল আজহার সাথে। ধর্মীয় উৎসব সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝেই রয়েছে। উৎসবের আনন্দের ঝলকানি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীতে দুটি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। আমরাই সেটি ভেঙ্গে বিনির্মাণ করেছি স্বাতন্ত্র্য বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। বিশ্ব পরিমন্ডলের আখ্যান বাংলাদেশের মুসলমান ধর্মপ্রাণ এবং আধুনিক মুসলিম। বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে মিলিত হয়ে আমরা জড়াজড়ি গলায়-গলায় মিলিত হয়ে বসবাস করি। আমাদের অর্থনীতির আজকের আয়তন ৫০ বছরের কষ্টার্জিত সংগ্রামের ফসল। কৃষি হচ্ছে আদি সমাজ ব্যবস্থা। জমি, হালের বলদ, গরু-মহিষ-ছাগল আমাদের প্রাণ ও সম্পদ। গৃহপালিত প্রাণি সংসারের লক্ষ্মী, আশীর্বাদ। বসতবাড়ির সৌন্দর্য। গরু, ঘোড়া, বিড়াল, কুকুর, ইত্যাদি পশুর উপস্থিতিতে বাড়ি পূর্ণতা পায়। গোয়ালে গরু, গোলা ভরা ধান। বাংলাদেশের গ্রামীণ চিত্রপট ও অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য।
কোরবানির গরু ছাগল এখন এক টেকসই বাণিজ্য সম্ভার। ঈদ হচ্ছে এ ব্যবসার বড় বাজার। সারা বছরের পশু ক্রয় বিক্রয়ের বড় অংশ থাকে কোরবানিকে ঘিরে। এর সাথে সম্পর্কিত থাকে চামড়া শিল্পও। প্রতিবেশি দেশসমূহ থেকে গরু আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে এক্ষেত্রে ঘটে গেল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। চাহিদা মেটাতে উদ্যোগী মানুষগুলো নেমে পড়লেন গবাদি প্রাণি পালনে। সাফল্য ধরা পড়লো। একসময় বেকার জীবন বেকারত্ব নিয়ে এদেশের মানুষ ছিলেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রবাসী কর্মসংস্থান, তৈরি পোশাক খাতসহ উৎসবসমূহকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সমারোহ আজ দেশে দৃশ্যমান। বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নারীর অবদান সকল ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। পশুপালন শিল্পেও মা বোনরা করছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। উপহার দিচ্ছেন দেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিশালী এক অর্থনীতি।
বাংলাদেশ আমাদের সকলের। মুসলিম প্রধান জন অধ্যুষিত দেশ হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন উপজাতি, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এখানে বাস করেন। পহেলা বৈশাখ সার্বজনীন একটি উৎসব। সকল ধর্মের মানুষ এখানে সামিল হোন। শারদীয়া দুর্গা উৎসব, খ্রিস্টানদের বড়দিন, বৌদ্ধ পুর্ণিমাসহ সকল আয়োজনের সাথে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঈদ উল আজহা কোরবানির ঈদ। ত্যাগ এ ঈদের মহিমা। প্রাণি কোরবানির মধ্য দিয়ে অন্তরের পশুত্ব বিসর্জন দেওয়া হয়। সুন্দর পরিপাটি প্রিয় পশুকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবান করে দেওয়া। ঘটে বান্দার বাসনা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছেলে হযরত ইসমাইলকে (আঃ) কোরবান করেছিলেন। হাজার বছরের পূর্বের পথ মুসলিম ধর্মাবলম্বীগণ অনুসরন করে আসছেন। কোরবানির মাংস বিতরণের মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে সাম্য ও সম্প্রীতির বন্ধন। অর্থহীন ব্যক্তির ধনীর বাড়িতে এদিন প্রবেশাধিকার কোন আকুতি বা দয়া নয়। এটি তাঁর অধিকার। ধর্মীয় বিধান। ধনীর কোরবানির মাংস এবং খাদ্যের হক অর্থহীন মানুষের। ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ অধিকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন।
সকল ধর্মের অনুশাসন রীতি-নীতিতে একই রকম খাদ্যাভ্যাস পরিলক্ষিত হয় না। ধর্মের ভিন্নতা অনুসারে মান্যতার পৃথকীকরন রয়েছে। উৎসবের সার্বজনীনতার সাথে পৃথকীকরন খাদ্য তালিকাকে স্মরণ রাখা আবশ্যক। একা আনন্দ উপভোগ করা যায় না। সকলকে নিয়ে উৎসবে সামিল হতে হয়। বাংলাদেশ আমার আপনার সকলের। সকল ধর্মের মানুষের। মানুষের কল্যাণ, সাম্য এবং অধিকার নিশ্চিত করার দিন ঈদুল আজহা। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এ মর্মবাণী স্মরণ করে দিবসের তাৎপর্য অক্ষুন্ন রাখবো। ২০২০ থেকে অদৃশ্য শত্রু করোনাকে মোকাবেলা করছি আমরা সকলে। কোটি মানুষ আক্রান্ত। লক্ষাধিক মৃত মানুষের স্মৃতি নিয়ে ঈদ উদযাপন। আনন্দের সংবাদ নয়। মানুষের অসহায়ত্ব দেখছি হাসপাতালে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজনদের আহাজারিতে। করবস্থান, চিতার ব্যস্ততায় আমরা হয়ে পড়ছি আরো হতাশাগ্রস্ত। আসুন, যারা বেঁচে আছি। করোনা বিধি অনুসরন করি। স্বাস্থ্য বিধি মান্য করি। সামাজিক দূরত্ব পালন করি। মুখোশ ব্যবহার করি।
ঈদুল আজহার উৎসব হোক সকলের এবং সার্বজনীন। ঈদ মোবারক। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে। পৃথিবীতে শান্তি ও সুখ বিরাজ করুক। সার্থক হোক ঈদুল আজহা।
কড়চা/ আর ই টি