ফিরে দেখা অতীত, জীবন- তিন
মধুসূদন সাহা
আমার মনে হয় আমি অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধ থেকে শুরু করেছিলাম। আজকে বিশ শতকের প্রথম দিককার ভাবনা। তৃতীয় পর্বে আমার জানা পূর্ব পুরুষদের তৃতীয় জনের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব, সেই সাথে ঐ সময়। তিনি আমার ঠাকুরদা উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের মানুষ জলধর সাহা। রুয়াইল, মত্ত হয়ে আজকে মানিকগঞ্জের পূর্ব দাশড়ায়। এ হচ্ছে প্রবাহমান জীবন। উৎস থেকে উৎসে ফিরে যাওয়া। আর কাটিয়ে যাওয়া মাঝখানের কিছু সময়। সেই সময়ের উৎকর্ষতার জন্য যাবতীয় কার্যকলাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার কবি বন্ধু উচ্চারণ করেছিল, জীবন-এযেন বৃক্ষ শাখা, পাখি আসে বাসা বাঁধে চলে যায়। এবার শুরু করি এই বাসা বাঁধার গল্প।
সাংসারিক জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাতে আমার ঠাকুরদা ছিলেন সফল পুরুষ। মানিকগঞ্জের মত্তের বাড়ি থেকে বিশ শতকের গোড়ায় তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে পূর্ব দাশড়া খাল পাড়ে চলে আসেন। মানিকগঞ্জের খালের পুরোনো নৌকা/লঞ্চ ঘাটার ঠিক উল্টো দিকে ছিল প্রায় এক একরের ঠাকুরদার বাড়ি। গাছ গাছালি এদো পুকুর (আমরা বলতাম মাইঠ্যাল) সহ একখন্ড নির্জন প্রান্তর। এখানে আসার কিছু দিন পরে উনার পত্নী বিয়োগ হয়। পত্নী বললাম কারণ উনি ছিলেন ঠাকুরদার প্রথম পক্ষের স্ত্রী। যে একছেলে ও দুই মেয়ে যথাক্রমে ক্ষেত্র মোহন সাহা, প্রেমদাসী সাহা ও ননী বালা সাহা যাদের নিয়ে তিনি এখানে এসেছিলেন তাদের গর্ভধারিনী। গ্রামীণ ভাষায় এটা আগ পক্ষ। শ্বশুর বাড়ি ছিল সিঙ্গাইর। ঠাকুরদা পরে আবার বেতিলা বিয়ে করেন, যা শেষ পক্ষ নামে পরিচিত। এই পক্ষে তিন ছেলে তিন মেয়ে। যথাক্রমে যোগেশ চন্দ্র সাহা, রাধা রানী সাহা, জগন্নাথ সাহা, সরস্বতী সাহা, মনিন্দ্র মোহন সাহা, অঞ্জলী সাহা। দুই পক্ষ মিলিয়ে বাবার চার ভাই পাঁচ বোন। আমার ঠাকুমা যুতেশ্বরী সাহা ঝড়ে খুব ভয় পেতেন। তাই ঠাকুরদা ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাসের জন্য বেশ নীচু, প্রায় চল্লিশ হাত লম্বা বিশাল এক টিনের চারচালা ঘরে বসবাস করতেন। ঝড় ঝঞ্চা থেকে বাঁচতে এরকম টিনের ঘর গ্রাম শহরে আমরা অনেক দেখেছি।
ঠাকুরদা জলধর সাহার পরিচিতির ব্যাপ্তি ছিল বিশাল। গ্রাম শহর মিলিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ছোটবেলায় আমরা মানিকগঞ্জ শহর বা গ্রাম যেখানেই গেছি জলধর সার (উচ্চারণ এমনই ছিল) নাতি বলে সম্বোধন পেয়েছি। আমার মতে এর পিছনে কারণ বলতে ব্যবসা, জোতদারি, আর বন্ধকী কারবার। উনার সুতা, হার্ডওয়ার ও কাপড়ের ব্যবসা ছিল। প্রথমে বাড়িতে ও হাটে হাটে এই ব্যবসা চলত। বায়রা, নিমবাড়ি , বেতিলা, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি। বর্ষাকালে নৌকায় যাতায়াত ছিল। আর উন্যাকালে (বর্ষা কাল বাদে) হেঁটে হাটে যেতে হত। তারপর ছেলেরা পাশে দাঁড়ানোর পর মানিকগঞ্জ বাজারে আস্তে আস্তে চারটি দোকানের মালিক হন। যা পরবর্তীতে তার ছেলেদের মধ্যে বন্টন করে দেন । যাদের বর্তমানে কেউ আর বেঁচে নেই। সুতা বেচাকেনা বেশীরভাগ দাশড়ার বাড়িতেই হত।
ঠাকুরদার দাশড়ার আশেপাশে চকে প্রায় ৬০/৭০ বিঘা চাষের জমি ছিল । এর মধ্যে বেশি ছিল সরন্ডী, বেউথার চক, পটল বিলের চকে। এছাড়া ১০/১৫ বিঘা জমি ছিল গোশতা, বারইলের চকে। এই জমির দেখা শোনা ও ফসল দেওয়া নেওয়ার কাজটা করতেন ঠাকুরদা’র বিশ্বস্ত চন্দন বেপারী ও নুজগর বেপারী।
ছোটবেলায় বর্ষা কালে আমাদের বাড়ির নিকট নৌকা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে আমিও বড় জেঠা মশাই ক্ষেত্র মোহন সাহা সাথে রাখালদের নিয়ে দুই একবার গোশতা বারইলের ফসল আনতে গেছি কালীগঙ্গা পার হয়ে। এটা উনিশশো সত্তর সনের আগের কথা। ভয়ঙ্কর রোমাঞ্চকর সফর বলে সে কাহিনীর অনেকটাই আমার মনে আছে। সে এক ভালবাসার জন ছিলেন আমাদের বড় জেঠা মশাই। ধুতি পাঞ্জাবি, গলায় তুলসীর মালায় সাদা মাটা একজন মানুষ। আমাদের পরিবারে ঠাকুরদার পরেই উনার স্থান ছিল। পরিবার ও পরিজনদের কাছে বড় কর্তা নামে পরিচিত ছিলেন। অসম্ভব হুঁকো টানতেন। যা আমাদের ঠাকুরদার পরম্পরায় উনি পেয়েছিলেন। উনার ঘরে পিতলের হাতলে বেশ কয়টা হুঁকো সাজানো থাকতো। ব্যক্তি বিশেষদের জন্য আলাদা আলাদা। লুকিয়ে বেশ কয়েকবার আমরা মুখ রেখেছি হুকোয়। উনার তিন ছেলে ও কয়েক মেয়ে। দুই ছেলে আসাম স্থায়ী। আর একজন শেষ জীবনে পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরেছেন মানিকগঞ্জে। উনার কাপড়ের দোকান ছিল আমাদের দোকানের পাশেরটা। বর্তমানে আমাদের পিন্টুর দোকান। পিন্টুর মায়ের বাবা ও মামা মজিবর উকিল এটা যথার্থ মূল্যে ক্রয় করেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে সাত আট হাজার হবে। জেঠা মশাইয়ের বড় ছেলে বিশ্বনাথ সাহাকে আমরা বড়দা বলতাম। তবে বয়সে উনি আমার বাবার বড়। শুনেছি আমাদের ঠাকুরমা ও জেঠিদের সন্তান প্রসবের জন্য একসাথে আইধ্যা (আঁতুর ঘর) ঘর বান্ধা হইত। পাগল বিশ্বনাথদা’র চার ছেলের মাঝের দুইজন আসাম প্রবাসী। বড় ছোট মানিকগঞ্জে। বড় জন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বয়সে বড় সম্পর্কে আমার ভাইপো নিখিল চন্দ্র সাহা ছিলেন ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভাতাও পান।
যা বলছিলাম। চলেছি গোশতা বারইল জমির ফসল আনতে। বাড়ির সীমানা সংলগ্ন মানিকগঞ্জের নৌকা ঘাঁটা থেকে সকালে আমরা রওনা হলাম পরিচিত মাঝির একমাল্লা নৌকায় (যে নৌকা সাইজে ছোট, উপরে ছই, সুন্দর ঢাকনা বিশেষ দেওয়া)। খুব সম্ভবত আমরা বাগদী পাড়ার কাছাকাছি খালে, হাতের ডানদিকে একটা শাখা দিয়ে কালী গঙ্গার মূল ধারায় প্রবেশ করেছিলাম। এটা এখন নেই। ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কালীগঙ্গা বেউথার একটু ভাটিতে, পশ্চিম দাশড়ার ভিতর দিয়ে বাবর আলী চান দরবেশের (পরান কমিশনারের বাবার নাম, যে বাড়ি থেকে এখনো মহরমের তাজিয়া বের হয়) বাড়ির পাশ দিয়ে দাশড়ার খালে মিলিত হয়েছিল।
ধলেশ্বরীর শাখার সাথে মিলিত হয়ে বিংশ শতাব্দীর পাঁচের দশকে কালীগঙ্গা ভরা যৌবন প্রাপ্ত হয়। তখন আমি নিতান্তই বালক। জেদের বশে আর বড় কর্তার প্রশ্রয়ে নৌকায় জায়গা পাওয়া। সেই আমার প্রথম বড় ও খরস্রোতা নদীর সাথে পরিচয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে নদীর একটা ডাক(শব্দ) ছিল। রঙবেরঙের ছোট বড় পাল তোলা, গুন টানা নৌকার সমাহার। তবে শিহরণ থাকলেও ভয় তত ছিল না। সে এক রোমাঞ্চকর সফর। বরগাদার নূজগর বেপারীর বাড়িতে জাতপাতের বালাইয়ে কাঁচা দুধ, আখের গুড় ও মুড়ি। তখন তো যাতায়াতে জল বহনের বোতল বিলাস ছিল না। আমরা নদীর জলই তখন পান করেছি। নৌকায় ধান বোঝাই করে ফেরার স্মৃতি আমার আর মনে নেই। বেশ রাতে আমাকে যখন ঘুম থেকে ডেকে তুললো তখন নৌকা আমাদের বাড়ির ঘাটে। জেঠামশাইরা ও আমারা যার যার নিজস্ব জমির ফসল যার যার ঘরে তুললাম। দুই বস্তা ফসল ছিল বড়কর্তাদের বারান্দায় রাখা। ওটা চার ভাগ হবে। এজমালি (শরিকি সম্পত্তি) জমির শস্য বলে।
দাশড়া গ্রামঃ
মানিকগঞ্জ পৌরসভার অন্যতম বৃহত্তম গ্রাম এই ঐতিহ্যবাহী দাশড়া। উত্তর দক্ষিণে আওলাদ হোসেন কলেজ থেকে ঋষিপাড়া পাড় হয়ে বকজুড়ি ব্রীজ পর্যন্ত। পূবে পশ্চিমে প্রাক্তন ইকবাল কমিশনারের বাড়ি থেকে খাল পার হয়ে বেউথার চকের কিয়দংশ পর্যন্ত। বিশালতার কারণে দাশড়া দুই ভাগে বিভক্ত। পূর্ব দাশড়া ও পশ্চিম দাশড়া। পশ্চিম দাশড়া মেথর পট্টি থেকে সরন্ডী কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বিস্তৃত ছিল। মানিকগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল দাশড়া গ্রামকে বিভাজিত করে পূর্ব ও পশ্চিম দাশড়া নামে পরিচিত।
মানিকগঞ্জ মহকুমা সদরও ধলেশ্বরীর ভাঙ্গনে সরে এসে এই দাশড়া মৌজায় অবস্থিত ছিল। পরে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের প্রাচীন বাজারও দাশড়ার বাজার নামে সবাই চেনে। শুধু তাই নয় এই বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও দোকানদার দাশড়ার ছিল। ধনী গরীব ও প্রান্তিক মানুষের বসবাস এখানে। অন্যান্য প্রাচীন গ্রামের মত এই গ্রামেও পেশাভিত্তিক অনেক পাড়ার উপস্থিতি ছিল। গ্রামের একপ্রান্তে ছিল শতাধিক পরিবার নিয়ে ঋষিপাড়া। অত্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এরা। দিনমজুর, বাদ্যকর, গৃহ পরিচারক ও পরিচারিকা এদের মূল পেশা ছিল। পরবর্তীতে কেউ কেউ রিক্সাও চালাত। তবে এটা ছিল দাশড়ার কুটির শিল্পের গ্রাম। আমরা ব্যবহার করেছি এদের তৈরি বাঁশ ও বেতের নানান জিনিস। যা এরা নিপুণ হাতে তৈরি করতে সিদ্ধ হস্ত ছিল। মানিকগঞ্জের হাটসহ আশেপাশের সমস্ত হাটে এরা এগুলো বিক্রি করে ক্ষূধা নিবারনের চেষ্টা করত। এই সমস্ত জিনিসের মধ্যে ছিল বেতের ধামা, কাঠা সহ নানান জিনিস। আর ছিল বাঁশের তৈরি কুলা, ডালা চানুই, ধামা, সাজি, ঝাঁকা, ডোল (এগুলো ছিল মূলত শস্যাদি প্রক্রিয়া ও সংরক্ষণ করার উপকরণ বিশেষ) বাঁশের ঝাড়ু, টেপা, উচা, দোয়াইল, পল (মাছ ধরার উপকরণ), খালুই(বাজার থেকে মাছ আনার পাত্র), গরুর মুখের টোপা ইত্যাদি নানান উপকরণ। মানে বাঁশ ও বেতের যাবতীয় উপকরণ এরা তৈরি করতে পারত। আবার গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে বাঁশ নিয়ে বিনিময়ে ঐ সমস্ত জিনিস তৈরি করে দিত বাঁশের মূল্যমানের বিপরীতে। তবে অভাব এদের পিছু ছাড়েনি। শহরের ভিক্ষা জীবির একাংশও এই পাড়ার দেখা যেত। শেষ বয়স এদের কষ্টেই কাটতো। রোগ, মহামারী, অপুষ্টি ছিল নিত্য। এই গ্রামে গুটি বসন্তের প্রকোপের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের বাড়ির যাবতীয় কাজের মাদবর হিসেবে রূপচানকে আমরা ছোট থেকেই চিনি। আমরাও না বুঝে রূপচান বলেই ডাকতাম। অনেকগুলো মেয়ের পর একটা ছেলে হয়েছিল। গুটি বসন্তে মারা গেল। আমরাও খুব শোক পেয়েছিলাম। রূপচানের বোনের বাড়িতে সবাই আক্রান্ত হল। বোনের জামাই ছিল বাদ্যকর যজ্ঞেশ্বর। দুই তিন ভাগ্নে ছিল। একজনকে অনেকেই চেনেন। গুটি বসন্তে অন্ধ হয়ে আজীবন শহরে ভিক্ষা করেছে। সম্প্রতি প্রয়াত। কান্ত একজন কর্মঠ মানুষ ছিল। আমাদের বাড়িতেও দিনমজুরের কাজ করেছে। ভাল ঢাক বাজাতে পারত।
বিনোদনের ব্যবস্থাও এদের যথেষ্ট ছিল। এরা কালীকাঁচ পালা করতে জানত। শিবের গাজনে এরা পাড়ায় পাড়ায় শিব খাটনা নিয়ে বের হত। এদের পাড়ার পাশে বেতিলা রাস্তায় বকজুড়ি ব্রীজের কাছে দুটো বড় বড় গাছ ছিল। যা বুড়ি বটগাছ নামে পরিচিত। সেখানে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে মেলা বসত, গাছের পূজা হত, মানতের কবুতর উড়ত, ভড় আসত। এই মেলায় অন্য সাধারণ মেলার মত হলেও দুটো বিষয় ছিল আলাদা। শুধু এই মেলাতেই বেন্তুল নামে বনজ ফল লালকালো ছোট, গোলাকার খেতে সুস্বাদু পাওয়া যেত। এর মালা বিক্রি করা হত। এটা কিন্তু বেতফল নয়। উৎস জানি না। আর এখানে অসংখ্য ঘুড়ি উড়ত ও ক্রয় বিক্রয় হত। যা আমাদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। আমাদের পরিবারের সাথে এদের আত্বিক সম্পর্ক ছিল। আমাদের থেকে বাঁশ নিয়ে পন্য বিনিময় করত। পুরুষরা বাড়ির কাজ, ফসল আনা নেওয়া, মাড়াই এর কাজ করত। মহিলারা ঝাড়াই বাছাই সহ যাবতীয় গৃহকাজ করত। ছেলে মেয়েরা বাড়িতে স্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করত থাকা খাওয়া ও বেতনের বিনিময়ে। পুরুষদের সারাদিন কাজের রোজ ছিল দেড় টাকা। তখন চালের দাম ছিল চৌদ্দ আনা থেকে একটাকা।
আমি তখন ছাত্র রাজনীতি করি। বছর চল্লিশের আগের কথা। এদের একজন মাদবর ছিল। রবীন্দ্র মনি দাস। তার সাথে কথা বলে তাদের অভাব অভিযোগ জাসদ নেতবৃন্দকে অবহিত করেছিলাম। যাতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি করা যায়। তো জাসদ নেতা আনিসুর রহমান, ইকবাল হোসেন খান ও আমরা কয়েকজন একদিন রাত্রিতে মাদবরের বাড়িতে ঐ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বসলাম হ্যাজাক জ¦ালিয়ে। অনেক কথা ও মত বিনিময় হল। এক পক্ষে রাজনীতির কথা অন্যপক্ষে ক্ষূধার কথা। মতবিনিময়ে ফিরে আসলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না। জাসদের সম্পদের অপ্রতুলতা থাকলেও একটা সৃষ্টিশীল উদ্যোগ নেওয়াই যেত। দুঃখ জনক হলেও সত্য এর কোন পুনরুদ্যোগ হয়নি। এ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির বাম ডানের গতিপথ। যে জন্য মুখ থুবড়ে গতি হারিয়ে এরা গতানুগতিকতার স্রোতে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের সম্পৃক্ততা আর থাকে না। রাজনৈতিক দলগুলো মত পথের আলোচনার ঝড় তুলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে, একদল জড় পিন্ডের সমাহার হয়ে নিয়ে অলিক স্বপ্নে বিভোর হয়ে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সাথে চেষ্টা থাকে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের। আর ঋষিপাড়ায় কবি সুকান্তের ক্ষূধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। (চলবে)
কড়চা/ এম এস