ফিরে দেখা অতীত, জীবন- পাঁচ/ মধুসূদন সাহা

ফিরে দেখা অতীত, জীবন- পাঁচ

মধুসূদন সাহা

হিন্দুধর্মের অন্যতম গীতা গ্রন্থের বাংলা অনুবাদক ছিলেন জগদীশ চন্দ্র ঘোষ। দেশ বিদেশে এই শাস্ত্রকার বিখ্যাত ছিলেন বিদ্বান ও গুনী মানুষ হিসেবে। অত্যন্ত সুখের কথা যে উনার বাড়িও আমাদের দাশড়া গ্রামে। এটা ভোগ দখল করেছেন মাদারী শেখ। উনার তিন ছেলে। হযরত ভাই, ভেটকু ও হানিফ। হানিফের সাথে আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের উঠানামার কাহিনী পরে উপস্থাপন করব। হযরত ভাই আমাদের পূর্ব দাশড়ার একজন আদর্শ মানুষ। তিনি ছিলেন দাশড়া পল্লীমঙ্গল সমিতির অন্যতম সংগঠক, ভাল ফুটবল প্লেয়ার। রেজিষ্ট্রি অফিসে চাকরি করলেও তিনি সৎ ও নিরীহ মানুষ। স্বাধীনতা যুদ্ধে দাশড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাটের সময় তিনি প্রতিবেশীদের মূল্যবান সামগ্রী রক্ষা করে পরে তাদের পৌঁছে দিয়েছেন। তার ছোটভাই ভেটকু ছিল ঠিক উল্টো। স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকে নিখোঁজ আছে বলে জানি। মাদারী শেখ মাছ বাজারের কাছে কাঠের ব্যবসা করতেন। উনার দোকানের পাশে বটগাছ ঘিরে বাউল ফকিরদের একটা আস্তানা তৈরি করেছিলেন। ওখানে অনেক মানুষের আনাগোনা, গান বাজনা ও গাঁজা তামাকের ব্যবস্থা ছিল। অনেকে এটাকে গাঁজার আড্ডা বললেও আসলে সেটা নিছক গাঁজার আড্ডা ছিল না। এটা উনি কোন ধর্মীয় অনুভূতি থেকে করেছিলেন। সেখানে নিছক গাঁজাখোর বা সমাজ বিরোধীদের আড্ডা কখনো ছিল না।

মাদারী শেখের বাড়ির পর তারা খলিফার বাড়ি। উনিও গীতা শাস্ত্রী শ্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষের বাড়ির অবশিষ্টাংশে থাকতেন। উনারা মনে হয় প্রাচীন কালে পাঠানদের বংশধর। তারা খলিফা সদাই হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। উনার তিন ছেলে। মিনু ভাই, বাদল, আতোয়ার। মিনু ভাইকে দেখেছি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সহ স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রণী সৈনিক। মিছিলে, গণ সঙ্গীতে তিনি ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর উনাকে সেভাবে আর গ্রামে দেখিনি। উনার ছোটভাই বাদল ছিল ট্রেনিং প্রাপ্ত রাজাকার। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। আতোয়ার প্রথম জীবনে ভেটকুর সহগামী ছিল। পরে অবশ্য আমাদের সাথেও ভাল সম্পর্ক ছিল।

তারা খলিফার বাড়ির পশ্চিমে রাস্তা পর্যন্ত বিশাল বাড়ি ছিল অনিল ঘোষ, অখিল ঘোষের বাড়ি। উনারা আসামে কাঠের ব্যবসা করতেন। সপরিবারে যাওয়া আসা করলেও স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই পরিত্যক্ত ছিল। ওটা দখল নিয়েছিল কুমিল্লা অঞ্চলের এক তাঁতি পরিবার। ওখানে তাঁতের কারখানাও তৈরি করেছিল।
তাত কলের উত্তরে দুটি বাড়ি ছিল। দীনেশ সাধু ও হিরু দেওয়ানজীর বাড়ি। দুজনেই সাহা। পুকুর পাড়ে দেওয়ানজী বাড়ির ছেলেদের সাথে খেলাধূলা করলেও স্মৃতি অস্পষ্ট। তবে ছয় ফুটের দীনেশ সাধু মাজার মানুষ ছিলেন। উনার পরিবারের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। দীনেশ সাধু বর্ষার সময় বাজারের খাল থেকে চার হাতপা ছড়িয়ে জলের মধ্যে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া মরা মানুষের মত বাজার থেকে অনেক সময় বাড়িতে যেতেন। মরা মানুষ ভ্রমে খালের পাড়ে লোক জড় হয়ে যেত। উনাকে আমাদের বাড়িতে দেখলে মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যেত। কারণ উনি ছিলেন আমাদের দাশড়া গ্রামের নিমন্ত্রণ কর্তা। বুঝলেন না তো? মানে গ্রামে যে কোন বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ হত। যার বাড়ির অনুষ্ঠান তিনি লিষ্ট করে দীনেশ সাধুর হাতে দিয়ে দিতেন। তিনি বাড়ি বাড়ি যেয়ে নিমন্ত্রণ করতেন। সে এক ছন্দবদ্ধ আহ্বান।

তিনি খাটো করে ধূতি পরতেন। বাকি অংশ গলায় জড়াতেন। যেকোন বাড়িতে যেয়ে বাড়ির বরিষ্ঠ সদস্যের কাছে (কর্তা/কত্রী) হাত জোড় করে বলতেন, মহাশয়/মহাশয়া (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) আমার নিবেদন আগামী অমুকবার, মধ্যাহ্নে দাশড়া বড়বাড়ি শ্রী যোগেশ চন্দ্র সাহা মহাশয়ের দ্বিতীয় কন্যা শ্রীমতী হাসি রানী সাহার শুভ বিবাহ উপলক্ষে আপনাদের অতীত বীতিত সহ নারী পুরুষ ষোলআনা নিমন্ত্রণ। স্থান কাল পাত্র ভেদে ভাষার ভিন্নতা ছিল।

দীনেশ সাধুর বাড়ির দক্ষিণে সুনিল চক্রবর্তীদা’র বাড়ি ছিল। উনার বাবাকেও দেখেছি। উনি বর্তমানে নাই পাড়ায় থাকলেও পরিবারের বাকিরা মনে হয় দেশান্তরী। উনার উল্টোদিকের বিরাট বাড়ি ছিল খোকা সিং এর। জমি, উঠোন, পুকুর সহ এক একরের কম হবে না। ওখানে অনেকবার কৃষ্ণ লীলা গান হয়েছে। ঐ বাড়ির কালীদাস দা জাসদ করতেন। উনি, ছত্তার ভাই, পিন্টু ভাইয়ের জুটি ছিল। অনেক বড় বড় ব্যবসাও করেছেন। এরা প্রয়াত জাসদ নেতা বাদল বিশ্বাসের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন। সন্তোষ কর্মকার তথা সনাদা’র মেয়ে আমাদের ক্লাসমেট বকুলের সাথে বিয়ে হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর সময় উনাদের বাড়ির সামনের খাল থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ারলেস সেট উদ্ধার হয়েছিল। যা আমি নিজেও দেখেছি।

আর একটা বিশাল বাড়ি ছিল পুকুরের কোনায় রায় মোহন সাহার বাড়ি। পর পর দুটো পুরানো দালানের বাজার দিকে যেতে ২য়টা। উনি পাটের বিরাট ব্যবসায়ী ও গন্যমান্য লোক ছিলেন। এটা বাবুর বাড়ি, জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। দাশড়া দালান, মন্দির, পুকুর, বাগান সহ কয়েকটা বড় বাড়ির মধ্যে একটা। রাস্তার সাথে লাগানো ছোট দালানটি ছিল লক্ষ্মী মন্দির। লক্ষ্মী পূজার সময় এখানে যাত্রা গানের আসর বসত। আনাগোনা ছিল নামী দামী শিল্পীদের। উনার ছেলে যজ্ঞেশ্বর সাহা বৃটিশ ভারতে নামী চিত্র শিল্পী ছিলেন। আজও তার শিল্পকর্ম ২-৫ লাখ টাকা দামে নামী দামী আর্ট গ্যালারিতে বিক্রির জন্য শোভা পায়। ছোট বেলায় আমরা এ বাড়িতে শুধু বায় মোহন সাহার বয়স্ক স্ত্রীকে দেখেছি। যাকে পাড়া শুদ্ধ লোক বাবুর বাড়ির গিন্নী হিসেবে চিনত।

উনার মৃত্যুর পর অনেক দিন ফাঁকা পড়েছিল। তারপর এটা বন্দোবস্ত নিয়ে স্বাধীনতার পূর্বে এ বাড়িতে আসেন প্রফেসর আযাহারুল ইসলাম সিদ্দিকী। স্বাধীনতার পর নুতন করে তিনি এখানে উঠে আসেন। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধা বাদল বিশ্বাস সহ অনেক লোক ছিলেন। আমিও দর্শক ছিলাম। বাদল বিশ্বাসের তখন নিজস্ব ঘোড়া ছিল। সেটায়ই তিনি যাতায়াত করতেন। ঐ দিনও তিনি ঘোড়া নিয়েই এসেছিলেন। বড় হুজুর এখানে বেশিদিন বসবাস করেন নি। পরে উনি বর্তমান বাসস্থানে চলে আসেন। পরে তো উনি অর্ধেক দাশড়াই কিনে নিয়েছেন। বড় পীর সাহেবকে আমরা কাছে থেকে দেখেছি। সুপুরুষ, হাস্যজ্জ্বল একজন নির্বিবাদী মানুষ হিসেবে। উনাকে যন্ত্র চালিত সাইকেলে যাতায়াত করতে দেখেছি। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের উল্টো দিকে উনার একটা পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। সেখানে উনার নিজের লেখা বই, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দাও ছিল। ছোট হুজুর মঞ্জু সাহেব আমাদের খেলার সাথী ছিলেন। তিনি ও আমি একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি। বড় হুজুরের কাছে আপেলের (আওয়ামী লীগের নেতা) সাথে গিয়ে দুজনে সরাসরি দেখা করেছিলাম। উনি ওদের পূর্ব পরিচিত ও আপেলকে খুবভালবাসতেন। হিন্দু অধ্যুষিত আমাদের পাড়ায় বড় হুজুরের মহীরুহে পরিনত হওয়ায়, দরবার শরীফের বিশাল বিস্তৃতি হওয়ায় কোন হিন্দু বা হিন্দু পরিবারের কোন অভিযোগ কোন দিন শুনিনি। তিনি ও তার পরিবার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক। বরং উনার বাড়ির কাছে বলে পরিচয় দিয়ে অনেক জায়গায় অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছি।

এই বাড়ির একটু এগিয়ে উকিল বাড়ি। সারা দাশড়ায় এই বাড়ি পরিচিত। আমাদের পাড়ার ও বংশগত মুরব্বী ছিলেন বেনীমাধব সাহা। পাড়ায় দ্বন্দ্ব কলহের মীমাংসাও এখানে হত। আমার ঠাকুরদা ও বেনী উকিল ছিলেন মামাতো পিসতুতো ভাই। সে হিসেবে রক্তের সম্পর্ক। দাশড়া আমাদের পাড়ায় উনার বাড়িও বিশাল। পাকা রাস্তা থেকে খালপাড় পর্যন্ত। ওপারে পশ্চিম দাশড়া। এর মধ্যে বাঁশঝাড়, অসংখ্য গাছগাছালি, ডোবা, চাষের জমি ও বেশ দুষ্প্রাপ্য গাছ ছিল। কাঁচা মিষ্টি আম, আমলকি, গাব, বেল, অসংখ্য আম কাঁঠাল সহ আরও কত কি। বাড়ির পিছনের দিকের অংশ আমাদের কাছে পরিচিত ছিল মনি বাড়ির ভিটা নামে। বেশ নির্জন ও জঙ্গলাকীর্ণ। সেখান কার গাছ গাছালিতে আমি, আমার ভাইয়ের নিয়মিত বিচরন ছিল নানা কারণে। শিয়াল সাপখোপের বাসাও ছিল। উনারা তিন পুরুষ উকিল। বেনীমাধব সাহা, বিজয় সাহা, বাসুদেব সাহা, রিনা সাহা। উনার ছেলে আমাদের বিজয় কাকা দুর্দান্ত প্রতাপশালী ও সাহসী লোক ছিলেন। উনি বিয়ে করেন আটিগ্রাম দালাল বাড়ি। বিয়ের কথা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে আমার দেখা পালকী চেপে বিয়ে করতে যাওয়া বিজয় কাকাই একমাত্র। সেই রঙচঙে পালকি, বেহারা সব কিছু স্থায়ী স্মৃতি হয়ে আছে। উনি শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার পেয়েছিলেন তৎকালীন সময়ে টেলিভিশনের দামের কাছাকাছি বিশেষ রেডিও। যা আমরাও শুনতে যেতাম। আর পাকস্পর্শে (বৌভাত) উনিই প্রথম ভাতের জায়গায় পোলাও করেছিলেন।

এই বাড়ির পর নন্দ সাহা, যশোদা সাহার বাড়ি। এরা আমাদের আত্মীয়ের সূত্রে বাধা। এদের দুজনেরই ঘোড়া  ছিল ভাল বহনের জন্য। এরা জেল খানায় খাদ্য সরবরাহ করতেন। নন্দ সাহা পরে টিউশনি ও বাজারে ব্যবসা করতেন। উনার ছেলে মদন, মধুসূদন ভাল ফুটবল খেলতেন। মধুসূদন আবার এল এল বি ডিগ্রীধারী ছিলেন। আর যশোদা সাহার ছেলে জগদীশ কর্মঠ মানুষ ছিলেন। ভাল ফুটবল প্লেয়ার, ক্লাব সংগঠক, পূজা কমিটির নেতা। এদের বাড়িতে বাৎসরিক কালীপূজা হয়। আর এরা অনেক গরুও পালতেন। নন্দ বাবু খুবই রাগী মানুষ ছিলেন। উনার শাশুড়ি এই বাড়িতেই থাকতেন। তো একদিন শ্বাশুড়ির সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শ্বাশুড়ির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। এরকম ঘটনা আর জীবনে দেখিনি।

এদের উল্টো দিকের বাড়ি ছিল পুকুর পাড়ে রায়মোহন কর্মকারের বাড়ি। তার উত্তরে বিদু সাহার বাড়ি। তারপর উপেন্দ্র কর্মকারের বাড়ি। এ সমস্ত বাড়ির মরন, তপন, স্বপন আমাদের ছোটবেলার খেলার সাথী। তাদের কারুর খোঁজ জানি না। বিদু সাহার বাড়ি ক্রয় করে স্বাধীনতার আগে এপাড়ায় এসেছিলেন মোতালেব পাঠান, পেস্কার চাচা। উনার ছেলে মেয়ে সবার সাথে আমাদের আত্বিক সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে চাচী ছিলেন মাটির মানুষ। এখানে উল্লেখ্য যে আমাদের হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় ক্রয় সূত্রে আগমন তিনিই প্রথম। এর আগে যারা ছিলেন পরিত্যাক্ত বাড়ি দখল বা বন্দোবস্ত সূত্রে।

এদের বাড়ির উল্টোদিকে ছিল পচা সাহা, রসিক সাহার প্রায় এক একরের বাড়ি। পচা সাহার ছেলে কার্তিকদা’ ভাল মানুষ হলেও জীবনের অব্যবস্থাপনায় এক চিলতে জমি ছাড়া সব নষ্ট করে দিয়েছেন।

এর পরই এক চিলতে লম্বা গলিপথ আমাদের বাড়ি পর্যন্ত গেছে। রসিক জনেরা সেটাকে বর্তমানে ভূতের গলি বলে। সেটাতে পরে আসছি।

পচা সাহার বাড়ির উল্টোদিকে রাস্তার পাশে ছিল বিশাল বাড়ি মাধব আচার্যের। পূজা পার্বণ ও কুষ্ঠি (ঠিকুজি) দেখে দরিদ্রের জীবন যাপন করতেন। উনার স্ত্রী আমার পরমশ্রদ্ধেয় জেঠির কাছে আমার প্রথম হাতেখড়ি। উঠানে ছালা (চট) পেতে আমাদের বসতে দিতেন। গোল কাঁচের চশমা দড়ি দিয়ে মাথায় বাধা থাকত। বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াতেন। বাড়ি থেকে দিদিদের ভাঙা শ্লেটের একটা ছোট খন্ড, একটা বাল্যশিক্ষা বই, শ্লেট পেন্সিল আর জল ত্যানা (ভিজে নেকড়া) সাথে থাকত। যা দিয়ে শ্লেট মোছার কাজ হত। শ্লেটে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জন বর্ণ লিখে দিতেন। হাত ঘোরানোর কাজ ছিল আমার। আর মুখে মুখে পড়াতেন। বাস একটু পরেই ছুটি। মাসে আট আনা বেতন, (পঞ্চাশ পয়সা)। উনাদের তিন ছেলে। চীনাদা’, চিত্তদা’, মুক্তিদা’। চীনাদা’ই একমাত্র সংসার করেছেন। মুক্তি যুবক বয়সে মৃত। চিত্তদা আমাকে খুব ভালবাসতেন। ভাই বলতে অজ্ঞান ছিল। আমার প্রথম সিনেমা দেখাও উনার সাথে হলে। আমার এই দাদা নেশা করে শেষ হয়ে গেল। পড়ে দুই ভাই বাড়ি বিক্রি করে করে খেয়েছে। শুধু চীনাদা’র ছেলেদের কাছে এক চিলতে জায়গা আছে। চীনাদার বড় ছেলে চন্দন আমার ছোটবেলার বন্ধু ও খেলার সাথী। একদম ছোট বেলায় রাস্তার ধারে এই বাড়ির উঠোনে চীনাদার নেতৃত্বে আমরা সরস্বতী পূজা করতাম। গঠন করেছিলাম একটা ক্লাব। নাম ছিল দাশড়া শান্তি কামনা বালক সংঘ। চীনাদা’ মাটির পাহাড় বানিয়ে দিয়েছিলেন মন্ডবে। হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে মন্ডব আলো হত। নগর প্রদক্ষিণও করতাম। ছিল ঢাক ও প্রসাদ বিতরণ। সারারাত জাগা। দোকানে দোকানে চাঁদা তোলা। প্রথমবার আমাদের পূজার যাবতীয় খরচ ছিল মোট ৮০ টাকা।

কড়চা/ এম এস

Facebook Comments Box
ভাগ