বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে নাগরিকের ভাবনা
রুহুল ইসলাম টিপু
বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। মহান নেতা ডাক দিলেন স্বাধীনতার। শুরু হয় অপারেশন সার্চ লাইট, ২৫ মার্চ। গণহত্যা সংঘটিত হয় নির্বিচারে। হত্যার শিকার হন লক্ষ হাজার বাঙালি। বঙ্গবন্ধুকে করা হলো গ্রেপ্তার। নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু’র মহান নেতৃত্বে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, পেশাজীবী, নারী-পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ, আপামর জনসাধারণ সর্বস্তরের নাগরিক সকল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। লক্ষ কোটি ত্যাগ তিতিক্ষার পর আসে বিজয়ের শুভক্ষণ। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। অভ্যুদয় ঘটে বিশ্বে স্বাধীন সার্বভৌম আর একটি দেশ। মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ। আমাদের বাংলাদেশ। বাঙালিদের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ২০২১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর অতি উৎসাহ আবেগ এবং উচ্ছ্বাসের সাথে পালন করছে।
৫০ বছরের বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের রয়েছে স্মৃতি বিজরিত অগণিত আবেগ আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশা। আমার সুযোগ ঘটে ২০০৫ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববাসী একগুচ্ছ বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার। প্রায় সম বয়সী। কাজ করতে করতে এক সময় হয়ে যাই পরস্পরের বন্ধু। তিনি হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন। তিনি আমাকে এবং আমাদের ন্যায় কিছু উদ্যমী মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম। তিনি হলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব। তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক। তিনি হলেন প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। শুরু হলো প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা। ফোরাম এর শ্লোগান, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে। আমরা দেশের নাগরিকদের মধ্যে জাগানিয়ার ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করি। দেশের নাগরিক উন্নয়ন কর্মী উন্নয়ন সংগঠন এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা বিগত ১৬ বছর বিভিন্ন পর্যায়ে মিলিত হই। আমরা দুটো দিক উম্মোচন করি। পিছনে ১৯৭১ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। সম্মুখে ২০২১ সুবর্ণজয়ন্তী। মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশে দারিদ্র্য থাকতে পারে না। আমরা ব্যক্তি হতে সামষ্টিক পর্যায়ের সকল সচেতন নাগরিককে ২০২১ কে অভীষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট করে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উদ্বুদ্ধ করি। দারিদ্র্য দূর করার সাথে সাথে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ আমাদের রয়েছে। সেদিকেও আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আমার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কন্যার বয়স সে সময় ছিল ৭ বছর। সে যখন ২৩ বছর বয়সে ২০২১ সালে পদার্পণ করবে। তখন বাংলাদেশ কেমন হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অটিস্টিক সকল মানুষের জন্য বাংলাদেশের অবস্থা কিরূপ হবে। নতুন আইন হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিকভাবে আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্বমানের সেবাপ্রদানের কলেবরের বিস্তার তেমন আমাদের দেশে ঘটেনি। এটি আমার ক্ষুদ্র একটি পর্যবেক্ষণ।
সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশবাসী প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর সাথে যুক্ত হতে থাকেন। ফোরাম এর সদস্যবৃন্দের বেশির ভাগ সদস্য এনজিও থেকে চলে আসেন যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মী। আমাদের সদস্য ফি মাত্র ১ শত টাকা। ফোরাম এর রেজিস্টার্ড সদস্য এখন প্রায় ১ হাজার ৭ শত। আমাদের প্রত্যাশা ছিল ১ লক্ষ মানুষকে সাথে নিয়ে ২০২১ এ বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো। প্রত্যাশার ২০২১ ফোরাম সকল সদস্য এর নিকট হতে প্রাপ্ত সদস্য ফি’র অর্থ খরচ করেনি। সে অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা রয়েছে। উদ্দেশ্য সুবর্ণজয়ন্তী আয়োজিত উৎসব সম্পন্ন করবো। প্রকাশিত হবে প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের সংকলন। এসবই বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। আমরা ইতিহাসের অতীব নগণ্য পাত্র পাত্রী মাত্র।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফোরাম ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ চাই শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করে। এতে বরেণ্য লেখকদের সাথে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বপ্নের বাংলাদেশকে বই আকারে নিয়ে আসা হয়। ওয়াহিদুল হক এর লেখা সোনার বছরের সোনার স্বপ্ন লেখাটি আমাদের ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ চাই বই এ সংকলিত। সম্ভবত: এটি ওয়াহিদুল হকের শেষ লেখা ছিল। এর তাৎপর্য অবশ্যই ভিন্ন মাত্রা বহন করে। বই এর ভূমিকায় মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেন, ওয়াহিদুল হকের ‘সোনার বছরের সোনার স্বপ্ন’ লেখাটিই এই গ্রন্থের মূখ্য বিষয়কে প্রকাশ করেছে। ২০২১ হচ্ছে সোনার বছর।
করেছি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশকে মনের রং এ আঁকেন শিশু শিল্পীবৃন্দ। শিশুদের চিত্র প্রকাশ করা হয় বই আকারে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে আয়োজন করা হয় প্রকাশনা উৎসব। সম্মেলন হয়েছে রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গ্যেটে ইন্সটিটিউট, সিরডাপ মিলনায়তনসহ ঢাকার বাইরে বগুড়া, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহে। ফোরাম নেতৃত্বেরও পরিবর্তন হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন পরিবেশবিদ, ব্যাংকার ও উন্নয়নকর্মী মহিদুল হক খান, সাংবাদিক ও উন্নয়ন সংগঠক এস এম আজাদ হোসেন। বর্তমান চেয়ারম্যান যুব সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিক দুলাল বিশ্বাস। সদস্য সচিব হিসেবে আসেন বাস্তব উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রুহি দাস। বর্তমানে কবি মাশুক শাহী। আমি ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে ছবির অ্যালবাম। এরূপ নানাবিধ আয়োজন। দেশের মানুষ আমাদের কথা শুনতেন। আমরাও আপামর মানুষের সাথে মিলেমিশে তাঁদের সাথে কথা শুনে সমৃদ্ধ হয়েছি।
নাগরিক সংগঠন হিসেবে প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম সে সময় এ দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং স্বপ্নের ২০২১ কে নিয়ে প্রত্যাশার কথাগুলো রাজেৈনতিক দলও গ্রহণ করে। ২০০৮ এর দিন বদলের সনদ শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে সেখানে সংকলিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং রূপকল্প ২০২১। এটি ছিল প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এরও বক্তব্য। ২০০৮ এর নির্বাচনের পূর্বে অক্টোবর ২০০৮ এ রিপোর্টারস ইউনিটি’তে ফোরাম কর্তৃক কেমন নির্বাচনী ইশতেহার দেখতে চাই এর এক আয়োজনে বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সভায় অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিদও উপস্থিত ছিলেন। তিনি গ্রহণ করেছিলেন প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশার কথাগুলো। আমাদের কথা চলে যায় নির্বাচনী ইশতেহারে। নাগরিক সংগঠন হিসেবে এ সাফল্য নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।
২০১১ সালে ফোরাম প্রকাশ করে ২০২১ সাল স্বপ্নের পত্রাবলি। বইটি আমরা উৎসর্গ করি সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের যাঁদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড় তোলার জাতীয় প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছেন। সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতির জন্য এ এক বিশাল সৌভাগ্য। দেশ অর্জন করেছে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত এ অর্জনে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত। আমরা গর্বিত।
ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর আমরা নিয়মিতভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১৫ ডিসেম্বর বিজয়ের পূর্বদিন বাংলাদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে দেশের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান এবং বাংলাদেশের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা সভা, সেমিনার করেছি। করেছি পথ সভা এবং র্যালি। নেলসন ম্যান্ডেলা এবং জাপানের হিরোসিমা দিবস সবই ছিল ফোরাম এর বিগত ১৬টি বছরের উল্লেখযোগ্য আয়োজন।
প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম কার্যক্রমে স্মরণ করি আমাদের শিক্ষক জাপানের নাগরিক কুরিহারা হিরোমি’কে। যিনি আমাদের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি ব্যবহারে আমাদের সহায়তা করেন।
২০২১ কে নিয়ে আমাদের আবেগ উচ্ছ্বাসের অন্ত ছিল না। শুনে অবাক হবেন, আমাদের সদস্যদের মধ্যে প্রায় শতাধিক মোবাইল নম্বর রয়েছে ২১ কে কেন্দ্র করে। আমরা গ্রহণ করি শেষ চার ডিজিট ২০২১। আমার নিজের মোবাইল এর শেষ চার ডিজিট ৫২৭২। ’৫২ হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। ’৭২ এ প্রণীত বাংলাদেশ সংবিধান। সংখ্যা দিয়ে দেশপ্রেম এবং দেশের প্রতি আবেগের বহি:প্রকাশ। প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক স্থান মেহেরপুরেও করেছে সফল আয়োজন। ফোরাম সদস্যবৃন্দ চলে যান ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই ব্যানার নিয়ে কক্সবাজার।
মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী’র আজকের দিনে বিনম্র শদ্ধা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র প্রতি। বাংলাদেশ উদযাপন করছে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ। লাখো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য যাদের নৃশংসভাবে এবং ০৩ নভেম্বর ১৯৭৫ এ কারাগারে মহান জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যান্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান’কে হত্যা করা হয়। তাঁদের সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং দেশ মাতৃকার তরে অকাতরে যারা জীবন দিয়েছেন।
বাংলাদেশবাসীর নিকট ইতিহাস এবং আবেগের বড় জায়গায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একটি কাল্পনিক গ্রাম দেখেছিলাম। প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর আর একটি আবেগের ক্ষেত্র। সেথায় বলা ছিল, আজ বৃহস্পতিবার। শীতের কুয়াশা ঘেরা আজকের এই সকালটি গ্রামবাসীদের কাছে অন্য যে কোন সকালের থেকে আলাদা।
গ্রামের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব। ভোর থেকেই গ্রামবাসীরা উৎসবে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় মাঠে সমবেত হতে শুরু করেছে। মাঠের কোণায় কোণায় টানানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা, নিবেদিত সমাজ উন্নয়ন কর্মীদের ছবি। মাঠের মঞ্চ থেকে পরিবেশিত হচ্ছে গান, কবিতা ইত্যাদি। সবই হচ্ছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে, যেন প্রাণের টানে।
বিজয় দিবসের এই উৎসব গ্রামবাসীদের কাছে খুবই আনন্দের ও গৌরবের। কারণ এখন তারা দারিদ্র্যমুক্ত। বিগত ৫ বছরে গ্রামের মানুষ সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দারিদ্র্য দূর করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন আজ তারা সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করেেেছ। ১৯৭১ থেকে ২০২১ পঞ্চাশ বছর পর একই বৃহস্পতিবার বিজয় উৎসবে বাংলাদেশ বিচিত্র সাজে সেজেছে।
দেশের নাগরিক হিসেবে বার বার ফিরে যাই ’৭১ এ। আমার বাড়ি মানিকগঞ্জ। ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। ২১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাটুরিয়াকে শত্রুমুক্ত করে।
২২ নভেম্বর সংঘটিত হয় তেরশ্রীতে গণহত্যা। এ বছর মানিকগঞ্জ পালন করে তেরশ্রী গণহত্যা দিবসের ৫০ তম বছর। জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদরায় চৌধুরীকে পরনের ধূতি গায়ে পেঁচিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তেরশ্রীতে এদিন ৩৫ জনকে হত্যা করা হয়।
মানিকগঞ্জে হানাদার বাহিনী প্রবেশ করে ’৭১ এর ০৮ এপ্রিল। মানিকগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম যোগমায়া, ভানু মাস্টার, গোলাম কিবরিয়া তজু। সাটুরিয়া হাটের নিকট মোঃ মনোয়ার হোসেন এর পরিত্যক্ত বাড়ির ভিটা খনন করে বহু লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলোর হাত-পা ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। চোখ মুখ ছিল কাপড় দিয়ে মোড়ানো। বালিয়াটি গ্রামের গণহত্যার শিকার হন হরিদাস সাহা (৫৫), অতুল সাহা (৪৫), নিতাইচন্দ্র সাহা, রাধু ঘোষ ও আওলাদ হোসেন। হত্যা করা হয় গাঙ্গুটিয়া গ্রামের সুধীর রায়, ফালু রায়, ডাঃ বিজয় সাহা ও মৃণালকান্তি রায়; কমলপুর গ্রামের মুক্তার আলী, পালা গ্রামের ফালু মিঞা, কাউনারা গ্রামের হালিম ফকির, আমতা গ্রামের যতিন কর্মকার, নয়াপাড়া গ্রামের শ্যাম সাহা, হাজীপুর গ্রামের হযরত আলী ও সরকারি ডাক্তার নরেন্দ্র ঘোষকে। যতীন কর্মকারের ১৫ বছরের নাতিকে চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে রামনগর গ্রামে ডাঃ কালিপদসহ তাঁর পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ২৯ অক্টোবর গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে ৭৫ জন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্য নিহত হয়। পরদিন গোলাইডাঙ্গা গ্রাম ভস্মীভূত করা হয়। নিহত হন অনেক নিরীহ লোক। মানিকগঞ্জ এর এটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের খুবই ছোট খন্ডিত চিত্র। আমাদের জেলার সাত উপজেলায়ই রেখেছে মুক্তিযুদ্ধে মহান অবদান।
বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর লাল সবুজের মহোৎসব চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবারও জেগে উঠতে চাই। বলতে চাই প্রিয় জন্মভূমি। বাংলাদেশ। তোমায় বড় ভালোবাসি। আমার সোনার বাংলা।
কড়চা/ আর ই টি