বাড়িতে স্কুল/ খাদিজা সৃষা

বাড়িতে স্কুল

খাদিজা সৃষা

বাড়িতে বসে ক্লাশ করি। স্কুল ড্রেস পড়ি না। গাড়ি বা রিক্সায় চড়ে এখন আর স্কুলে যাই না। স্কুলের পথও ভুলে গিয়েছি। মাঠে খেলা। পার্কে বেড়ানো। শেষ কবে এসব করেছি। সেটিও মনে নেই। হোম ওয়ার্ক জমা দিচ্ছি গুগল ফাইলে। ক্লাশ ওয়ার্ক স্ক্যান করি। কম্পিউটারে রেখে দেই। খাতা কাগজ বেশি ব্যবহার করি না। কলমও তেমন ধরা হয় না। স্কুলে টিফিন করতাম ক্লাশের ফাঁকে। টিফিন পিরিয়ডে। অন্য রুমে। কখনও নীচ তলার খালি জায়গায়। এখন ক্লাশে মা খাওয়ান। ক্যামেরা তখন ঘুড়িয়ে রাখি। অংক, বিজ্ঞান আর বাংলা সেই আগের মতো আর পড়া হয় না। বাবা পড়তে বলেন। আমিও বসি। দীর্ঘ সময় টেবিলে থাকি না। ঘরেই দৌড়াদৌড়ি করি। বন্ধুদের সাথে অনলাইনে কথা বলি

টিচার আবার ক্লাশে ঢুকে যান। তখন মনের কথা আর বলা হয় না। আগে টিফিন শেয়ার করেছি। বাসায় কে কি করেছি। সে সব বলেছি। এখন এসব করার সুযোগ নেই। মন ছোট হয়ে যায়। কার খাতায় টিচার কয়টি স্টার দিয়েছেন। কাকে বেশি আদর করলেন। কাকে বকা দিয়েছেন। আমরা এসব নিয়ে কত রকম হাসা হাসি করেছি। করোনা সব বন্ধ করে দিয়েছে।

মা টেলিভিশন দেখেন। আর বলেন, অনেক মৃত্যু। হাসপাতালে রোগী। এখন আবার ডেঙ্গু শুরু হয়েছে। অনেক শিশুরাও আক্রান্ত। একজন সাংবাদিক এর ছোট্ট শিশু মারা যায়। সেও তো আমার বন্ধু। আমি তাকে দেখিনি তাতে কি আসে যায়। বড় হলে দেখতে পেতাম। এখন আর তাকে দেখতে পাবো না। আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছে। টিভিতে দেখেছি যারা মরে যায়, তারা আকাশে চলে যায়। তাঁরা হয়ে যায়। তারাদের দিকে তাকাই। সবাই আমাদের বন্ধু। আগে সব তাঁরাই পৃথিবীতে ছিলো।

অ্যাম্বুলেন্স এর শব্দ আর ভালো লাগে না। খবরের কাগজ এর প্রথম পৃষ্ঠায় শুধুই করোনা’র সংবাদ। প্রতিদিনই একই খবর। পাড়া প্রতিবেশি আত্মীয় অনেকের মৃত্যু খবর বলে। তখন মন খারাপ হয়ে যায়। দাদাও মারা গেলেন ডিসেম্বর ২০২০ সালে। সবাই তাঁরা হলো। তারা তো আর ফিরে আসবে না।

আবার স্কুল খুললে ইউনিফর্ম বানাতে হবে। পুরানো স্কুল ড্রেস ছোট হয়ে গিয়েছে। মানে আমি বড় হয়েছি। আগের আমি নেই। তাই তো বড় স্কুল ড্রেস বানাতে হবে। টিকা এসেছে। এবার করোনা থাকবে না। আমরা আবার স্কুলে যাবো। টিচার এর সাথে সুর করে পড়বো। ক্লাশরুমের সেই ছড়ার শব্দ বাসায় নেই। বাসায় শুধুই রাগারাগি। আমি পড়ি না। কেন পড়ি না। জানতে চায়। আমার তো বাসায় পড়তে ভালো লাগে না।

আমাদের সব ঘরেই বই। আমার মেঝো বোন আপুন পড়েন। শ্রেয়া আপু আঁকি ঝুঁকি করেন। মাঝের ঘরে সবচে’ বেশি বই। লাইব্রেরি আমাদের। খাবারের টেবিলেও বই। বাড়ি এখন স্কুল। বাড়িতে বই থাকবে। আনন্দ করে পড়বো। সেটি ঠিক আছে। তাই বলে স্কুলে যেতে পারবো না। তা কি করে হয়। বাবা বলেন, দেশের সব শিশুদের মোবাইল, কম্পিউটার নেই। আমরা তো মোবাইল কম্পিউটারে পড়ছি। অনেক শিশুরা আজ পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত।

দেশের সরকারের প্রতি অনুরোধ আমাদের সকলের লেখাপড়া নিশ্চিত করুন। আপনারা অবশ্যই পারবেন। একটি ব্যবস্থা বের করুন। আমরা বাঁচতে চাই। শিখতে চাই।

খাদিজা সৃষা : প্রাইম ব্যাংক গ্রামার স্কুল, উত্তরা, ঢাকা’র ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

Facebook Comments Box
ভাগ