বর্ণমালা ও হস্তাক্ষরের প্রতি ভালোবাসা/ এম. আর. লিটন

বর্ণমালা ও হস্তাক্ষরের প্রতি ভালোবাসা

এম. আর. লিটন

ভালোবাসা শুধু মানব-মানবীর প্রেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দেশ, মাতৃভাষা, প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি মমত্বসহ ভালোবাসার ক্ষেত্র বিশাল এবং বিস্তৃত। একদিন মাতৃভাষাকে ভালোবেসে এ ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের মূল্যবান জীনবকে উৎর্সগ করেছে এদেশের সূর্য সন্তানেরা। সেই আত্মদানের বিনিময়ে আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা লিখতে ও বলতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা নিজেদের মাতৃভাষার প্রতি এখনো উদাসীন।

তবে অনেকের রয়েছে মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। নিজের মাতৃভাষাকে নিয়মিত চর্চা ও যত্ন করেন। বর্ণমালা ও হস্তাক্ষরে প্রতি রয়েছে গভীর ভালোবাসা। বলছি, প্রান্তিক কবি ও আর্দশ শিক্ষক আব্দুস সাত্তার এর কথা।

আব্দুস সাত্তার(৬০) মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নিভৃতে পয়লা গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাহিত্য চর্চার সাথে যুক্ত তিনি। এলাকায় আর্দশ শিক্ষক ও কবি নামে সর্বাধিক পরিচিত।

আব্দুস সাত্তার খুব ছোট বেলা থেকে বর্ণমালা ও হাতের লেখার প্রতি যত্নশীল। তিনি সবসময় বলতে ও লিখতে নিজের ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করেন। তার চমৎকার হাতের সুন্দর লেখা দেখে অনেকে বিমোহিত হয়েছে। তার সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্য বেতার বাংলাসহ বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময় প্রশংসিতও হয়েছেন বারংবার।

সরেজমিনে, তার বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, তার হস্তাক্ষরে লিখিত ডাইরি ও কবিতার পান্ডুলিপিতে শত শত লেখা। দেখে বোঝার উপায় নেই এ লেখাগুলো হাতের লেখা। প্রথম দেখায় যেকেউ ভেবে নিবে লেখাগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়ে সবাই কম্পিউটার আর ট্যাবলেট জাতীয় স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলোতে যখন লেখালেখি করছে। তখন কাগজ কলমে বিশেষ যত্নসহকারে লেখছেন তিনি। তার এ হস্তাক্ষরে সুন্দর লেখাগুলো প্রমাণ করে মাতৃভাষা ও বর্ণমালার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

এ বিষয়ে আব্দুস সাত্তার বলেন, সুন্দরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। তবে ভালোবাসার বিষয়বস্তু ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্ন।আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন থেকেই হাতের লেখার প্রতি আমার একটা অদ্ভুত ভালোবাসা জন্মে যায়। পেছনে উৎসাহদাতা হিসেবে বাবা-মা, বড়ো ভাই-বোন, শিক্ষকমণ্ডলী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীগণ কাজ করেছেন। যেকোনো ভালো হাতের লেখা দেখলে আমারও ইচ্ছে জাগত ওরকম কিংবা ওর চেয়ে আরও ভালো করে লিখতে। এখনো আমার প্রিয় বস্তুর তালিকায় কাগজ কলম কালি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

তিনি আরও বলেন, যখন একটু বড়ো হলাম, ভালোবাসা জন্মালো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর। জানলাম বাংলাভাষার গৌরবময় ইতিহাস। জানলাম ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাস। ভাষার জন্য বাঙালির অনন্য আত্মদানের গৌরবগাঁথা। ভাষার প্রতি ভালোবাসার দায়বদ্ধতা নিয়ে চেষ্টা করি আপন ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগের এবং একই সাথে সুন্দর হস্তাক্ষরে মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখতে। কতটুকু সফল তা আমি জানি না, তবে হলফ করে বলতে পারি আমার আন্তরিকতায় কোনও কমতি নেই।

এম আর লিটন: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

কড়চা/ এম আর এল

Facebook Comments Box
ভাগ