সভ্যতা, ক্ষমা কর

মধুসূদন সাহা

নিচের তারুণ্যের ঝলমলে ছবিটা আগে অনেকেই দেখেছেন। আজকে উল্টো রথ। ঝিলিক আর নেই।জড়া মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একেবারে বামে আমি। ডানদিকের দুজন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। আর আমার ডানদিকের জন Corona নয় , সমাজ ও পরিবারের করুনার পাত্র হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী। তিনি ছবির ভদ্রলোকদের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন। এখন না। আগে। তিনি মুনির হোসেন। অনেকের কাছে মনিভাই।

একে নিয়েই আবেগের তাড়না। যদিও মেকী।মেকী না হলে উনার এই অবস্থায় থাকার কথা নয়। বন্ধুত্বের শুরুতে মনি ও মনির পরিবারের সামাজিক অবস্থান অন্যদের থেকে কোন অংশে কম ছিল না। বরং অনেকের থেকে বেশিই ছিল। পিতা সরকারি চাকরি করতেন। দেশের বাড়িতে অজস্র জমি,শহরে একাধিক সম্পত্তি। যা ছবির অনেকেরই ছিল না। বড়ভাই পৌরসভার মেয়র ছিলেন। সমস্যা হল সম্পত্তি ও ক্ষমতা রক্ষা করা ও তার উন্নয়নে কোন আগ্রহ বা দুরদর্শীতা এদের নাই। ফলে বর্ষার উপচে পড়া নদী ক্রমশ গ্রীষ্মের ক্ষীন ধারায় পরিণত হয়েছে।

এতো গেল একদিক। অন্য দিকে ও ছিল এদের মধ্যে সবচেয়ে হাস্যোজ্বল ও আনন্দ প্রিয় ব্যক্তি। একসাথে পড়াশুনা করলেও স্কুলেই ইতি দিল। আমাদের মত কোন রাজনৈতিক বলয়ে কখনো ভিড়ে নি। জীবিকার চেষ্টা কখনও করেনি। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। এখানে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমরাও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলেও সেটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। পার্থক্য শুধু এইটুকুই।

মানিকগঞ্জে গত শতাব্দীর আটের দশকে শক্তির ভরকেন্দ্র ছিল মূলত রাজনৈতিক দল নির্ভর। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়েও এরা পারিবারিক ভাবে একটা শক্তির ভরকেন্দ্র তৈরি করেছিল।যা সব স্হানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও সমীহ করে চলত।সেটার উপর ভিত্তি করে মনির বড় ভাই বাবুল ভাই রবীনহুড ইমেজ নিয়ে নির্বাচনে পৌরসভার মেয়রও হয়েছিলেন।

এখানে লক্ষণীয় যে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কোন শক্তির ভরকেন্দ্র টিকে থাকতে পারে না। এটাও তাই হয়েছে।

বর্তমান সমাজে শক্তি ও বুদ্ধির মিশ্রন হলো ক্ষমতা। ওদের শক্তি ছিল বিক্ষিপ্ত আর বুদ্ধি হীন।তাই এই অনিবার্য পরিণতি।

এখানেই একটা অনিবার্য প্রশ্ন আসে, তাহলে মানবিকতা কোথায়? এই ছবির লোকদের জনে জনে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। এদের প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতির অন্ত নেই।শুধু ছবির লোকই বা কেন, এ ছাড়াও ওদের পরিমন্ডল ছিল, উপকার ভোগী ছিল, তারাই বা কোথায়?

এ প্রশ্নের কোন উত্তর হয় না। সমাজের প্রচলিত ছন্দ থেকে বিচ্যুত হলে, সব থাকলেও এই পরিণতি হয়।আর ছন্দে থাকলে বল বুদ্ধি প্রয়োগে ক্ষমতা ও সম্পদের আকাশ ছোঁয়া যায়।

পরিশেষে বলতেই হয়, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় মনি এখন অনন্তলোকের যাত্রী। শুধু সময়ের অপেক্ষা।ও কারুর করুনা, সহানুভূতি ও দয়ার ধার ধারে না।ওর পরিবারও চায় না। অন্যের সহানুভূতি বা দয়া উদ্রেকের জন্যও এই লেখা না। এই লেখা একটি স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য, মনি নামে আমাদের এক বন্ধু আছে, এখন জীবন মৃত্যুর দোলাচলে। আজকে আমরা যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তাদের মতই সমস্ত গুনাবলী ওর ছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে কম-আর কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি। এটাই ওর মূল্যায়ন হোক।

Facebook Comments Box
ভাগ