ঊর্মি আমার ভালোবাসা/ রুহুল ইসলাম টিপু

ঊর্মি আমার ভালোবাসা

রুহুল ইসলাম টিপু

ঊর্মি। আমার ভালোবাসা। ঊর্মিকে প্রথম দেখি সেও দুই দশক হলো। ঊর্মি বাংলাদেশের। আমার ঊর্মির জন্ম, বেড়ে উঠা, ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ অর্জন, সবই দেখছি; আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি ঊর্মির পানে। কখনও ঊর্মিকে পাই খুবই সাদামাটা। কখনও বিচিত্র রংয়ে। ঊর্মির শ্রী ক্রমশ: বৃদ্ধিই পাচ্ছে। ঊর্মি এখন বেশ সাবলীল। উর্মি এগিয়ে যাচ্ছে। ঊর্মিকে দেখতে আসেন দেশের খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিক। ঊর্মিকে ঘিরে বরেণ্য মানুষের আনাগোনা ঘটে বিস্তর। আমিও হয়ে উঠি আরও আবেগী। ঊর্মিকে ভালোবাসেন শত সহস্র মানুষ। আমার বড়ই হিংসে এবং কষ্ট। আঠার মতো লেগে থাকেন ঊর্মি প্রেমিক সকল মানুষ। মানুষের সাথে ঊর্মির প্রেম। আমার গর্বও হয়। পরম মমতার ভালোবাসার ঊর্মি আমাদের করেছে সম্মানিত। আমরা ঊর্মিকে ভালোসেসে হয়েছি সমৃদ্ধ। আমি ২০ বছর পূর্বে ঊর্মির বাড়িতে প্রবেশ করি। ঊর্মির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বাড়ির কর্তাবৃন্দ। ঊর্মিকে বুকে এবং কোলে করে বাসায় নিয়ে আসি। ঊর্মির পরশে অনুভব করি পরম শান্তি। ঊর্মি অনেক কথা বলে। এতো কথা এক সঙ্গে শুনতে একটু কষ্টই হয়। আবার ঊর্মিকে চাই এক সাথে এক লহমায় গ্রহণ করতে। সেটিও হয়ে উঠে না। সময় এবং কাজ বাধা হয়ে যায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঊর্মিকে বড়ই দেখতে ইচ্ছে করে। কি যেন বলা বাকী আছে। সেই গল্প। এই তো শেষ হচ্ছে। আবার কবিতা। দেশের কথা। মানুষের কথা। সবই ঊর্মির মধ্যে। এতো কথা। এতো কিছু ঊর্মির ভিতর। ঊর্মির সারা শরীরে হাত বুলাই। বড় মায়া মাখানো শরীরের অঙ্গ। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ঊর্মির দেহকে অবগাহন করি। দেহের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে লুকায়িত ঊর্মির রূপ রস আস্বাদন করি। দেশ ভালোবাসা প্রেম বিচ্ছেদ সব ধারণ করে আছে আমার ঊর্মি। শিশুদের ঊর্মি ভীষণ ভালোবাসে। তাদের সাথে ঊর্মির সখ্যতা অনেক। শিশুদের সাহসী করে ঊর্মি। শিশুরাও ঊর্মির সাথে মিলে মিশে চলতে বড়ই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ঊঠে। ঊর্মির দেহের পরতে পরতে নামাঙ্কিত দেখি শিশু কিশোর কিশোরী সকল বয়সের চিন্তাবিদ মানুষের। আমার ঊর্মি তো আর সাধারণের মধ্যে পড়ে না। ঊর্মি অসাধারণ। ঊর্মি হাতে হাতে। বিভিন্ন টেবিলে। ড্রইং রুমের শেলফে। দেশের পাঠাগারে। সরকারি বেসরকারি অফিস ঘরে। পত্রিকার স্টলে। বই মেলায়। দেশ ছেড়ে বিদেশে। ছবি তুলে ফেস বুকে। ঊর্মির বাড়ির বয়স এখন ৬৪ বছর অতিক্রম করছে। যতদূর জেনেছি ১৯৭৪ সালে ঊর্মি এ বাড়িতে প্রবেশ করে। এতো বছরের পুরোনা বাড়িতে অনেক বেদনা। অনেক হারানো স্মৃতি বহন করছে ঊর্মি। ব্যথা কাতুরতা শোক এখন শক্তিতে রূপান্তর হয়েছে। তাইতো আট পৌড়ে সাদাকালোর ঊর্মি এখন আলোক ঝলকানিতে হয়েছে আরও ঊজ্জ্বল। ঊর্মির এখন ৪৭ বছর, পরিপূর্ণতায় ভরপুর।

ঊর্মির বন্ধুরা প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার মিলিত হন। বন্ধুরা গল্প বলেন। দেশের কথা লিখেন। প্রিয়জনের কথা অন্য নাম দিয়ে কী সুন্দর ভাবে পরিবেশন করেন। অনুমান করে অনুভব সম্ভব নয়। ঊর্মির দেহের প্রতি পাতা স্পর্শ করি। দেখতে চেষ্টা করি। ঊর্মির বন্ধুদের। ঊর্মিকে ঘিরে এ আয়োজনের কলেবর অনেক বড়। সব মাসে বন্ধুদের নিয়ে আসর জমানো সম্ভবও হয়ে উঠে না। এভাবে ২৫ টি আসর পার করে ঊর্মি সেজে উঠে নতুন রূপে। সকল লিখিয়ে বন্ধুদের আলিঙ্গনে বুকে জড়িয়ে ধরে ঊর্মি। সম্ভবত: ১০ বছর পর ০২ জুলাই ২০২১ ছিল ঊর্মির বন্ধুদের সাহিত্য আসরের শততম পর্ব। বাড়ির কর্তাবৃন্দ ঊর্মির সাহিত্য আসরের সকল বন্ধুদেরও বড়ই ভালোবাসেন। নতুন পোশাক, রং এবং অবয়বে ঊর্মি হাজির হয়। ঊর্মি হয়ে উঠে আরও আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী। পুরনোদের সাথে ঊর্মিতে যুক্ত হয় নতুন নতুন বন্ধু। আড্ডাবাজ আসর মাতানো বইয়ের নেশাখোড় বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে ঊর্মির।

এবার শততম সাহিত্য আসরের সাথে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে ঊর্মি। ঊর্মি বাংলাদেশকে বড়ই ভালোবাসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবর্ষ দেশ উদযাপন করছে। ঊর্মি ধারণ করে মোঃ জাকারিয়া পিন্টুকে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ডাক্তার নয়, ফুটবলার হবি। মুহাম্মদ নূরুল হুদার ‘যাযাবর’ এ ‘কে যে কাকে মনে রাখে।’ নাসিমুন নেসার স্বাতী আর শশী। আয়েশা স্নেহার মহাকাশ যাত্রা। রুহুল ইসলাম টিপুর মান্তার নৌকা বাইচ। মনিরুজ্জামান পলাশ এর ‘জন্ম নিলেই হয় না মানুষ’। ‘সাধনাতেই মানুষ কেবল মানুষ হয়ে উঠে।’ এরূপ একরাশ কবি, লেখক এর সৃষ্টিকে বুকে ধারণ করে ঊর্মি। স্মৃতির অ্যালবাম। চিত্রে বাশিকপ কার্যক্রম। কিছুই বিচ্যুত হয় না ঊর্মি হতে। মাসিক সাহিত্য আসরের প্রথম সভাপতি সেলিনা খালেক এবং বাশিকপ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল আলম এর শুভেচ্ছা বাণীকে বুকে আগলে রাখে ঊর্মি। ঊর্মির বাড়ি বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ (বাশিকপ)।

০৩ ডিসেম্বর ২০২১-এ ১০০তম সাহিত্য আসর উপলক্ষে ঊর্মির মুখদর্শন। চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী ও কবি নাসির আহমেদ। হল ভর্তি অতিথিবৃন্দ। সকলের হাতে রঙিন কাগজে মুড়ানো ঊর্মি। কেউ রেখেছেন ঊর্মিকে কোলে করে। কেউ টেবিলের উপর। কেউ পৃষ্ঠা উল্টানোর প্রতীক্ষায়। খাদিজা সৃষাও অন্যান্যদের সাথে ঊর্মির মুখ দর্শন সভায় ‘বাড়িতে স্কুল’ নিজের লেখা উপস্থাপন করে। ঊর্মি সৃষাকে গর্বিত করে তোলে। সৃষা হয়ে উঠে আরও সাহসী। ঊর্মিও লেখার সাথে সৃষার ন্যায় সকল বন্ধুদের সৃষ্টি হয় আরও নিবিড় সম্পর্ক।

ঊর্মির বাড়িপ্রধান বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ (বাশিকপ) এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাখদুমা নার্গিস। রঙিন ছিলছিলা পাতলা কাগজের ভাজ হতে মুখ বের করে ঊর্মি। ঊর্মির মোড়ক উম্মোচনপর্বে অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী উপহার দিলেন মেঘনাথ বধ কাব্যের আবৃত্তি। নিরঞ্জন অধিকাকারীর বক্তব্য এবং আবৃত্তি শেষে তাকিয়ে দেখি হলভর্তি সকলের চোখে জল। ঊর্মি সব পারে। ঊর্মিকে হাতে বুকে নিয়ে সকলের নিরব কান্না। অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী তাৎক্ষণিক এক কবিতাও উপহার দিলেন ঊর্মিকে নিয়ে। ঊর্মিকে নিয়ে আনন্দ এবং হাসির অন্ত নেই।

আমাদের আর তর সয় না। ঊর্মিকে দেখবো। তার দেহের পরশ অনুভব করবো। হাতের আঙুল চলে যায় প্রথম পাতা ভিতরের পাতায়। এক দুই তিন পৃষ্ঠা। সব পৃষ্ঠা। থমকে যাই ঊর্মির কান্না দেখে। ঊর্মি বলে, হারিয়েছি শাহ আলমগীর, এম আর মাহবুব, রফিকুল হক দাদুভাই, আ ক ম জহুরুল হক, এম এ কামাল, নিত্যান্দ গোস্বামি নয়ন, মহিউদ্দিন আকবর এবং আবু বক্কর সিদ্দিককে। ঊর্মির সাহস পরিচালক মনিরুজ্জামান খান মজলিস, ‘শত আসরের শব্দমালা, জীবন গড়ায় পথচলা।’

আমার ভালোবাসার ঊর্মিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করি এতো রূপ এবং জৌলসের নেপথ্যের রহস্য কি। মৃদু হেসে জানান দিলো। ঊর্মির সম্পদনায় নাসের ইকবাল যাদু, সালাউদ্দিন কুটু এবং নাসিমুল বারী। প্রিয় ঊর্মি। ঊর্মির আড্ডা সাহিত্য আসর। আমার প্রেম ঊর্মির প্রতি। তাইতো ভালোবাসি ঊর্মির সকল বন্ধুদেরও।

ঊর্মি বহন করে লাবণ্য আহমেদ এর
মুক্তির বারতা পৌছে যাক
শৃঙ্খলিত নারী-পুরুষ-মানবতার কাছে
সত্য, সমতা ও সুন্দরের জয় হোক যুগে যুগে, শতাব্দির পর শতাব্দি।

ঊর্মির মাঝেই পেতে চাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

কড়চা/ আর আই টি

Facebook Comments Box
ভাগ