প্রাণের বন্ধুরা,
আমার ভালোবাসা নাও। প্রথমেই অভিনন্দন জানাই তাঁদের যাঁরা এই মিলন মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা। এ প্রসঙ্গে বন্ধুবর হযরত, পথিক, নূরুল ও জিন্নাতকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করছি। আমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য বন্ধু হযরতের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর যোগাযোগ করে নিজে এসে সুস্মিতা মন্ডলের শাড়ি পৌছে দেয়ার জন্য বন্ধু মনোরঞ্জের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আজ কত কথাই না মনে পড়ছে! ৩৭ বছর পরে অনেক কথাই আবছা হয়ে গেছে। তবুও কিছু মুখ-কিছু স্মৃতি আজও অম্লান। শ্রদ্ধেয় স্যারদের অনেকেই আজ ইহলোকে নেই (রমনী মোহন তরফদার, রাখাল স্যার, কিশোরী স্যার, ক্ষিতীশ স্যার, পরেশ স্যার, গৌর স্যার, দবির স্যার, মেঘলাল স্যার, মনীন্দ্র স্যার, কাশেম স্যার, কফিল স্যার, নীরোদ স্যার এবং মাধব স্যার)। প্রয়াত স্যারদের স্মৃতির প্রতি এবং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন প্রয়াত শ্রীদাম মন্ডল এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রয়াত হারান উদ্দিন বেপারী (হারান চেয়ারম্যান) ও প্রয়াত বসন্ত পোদ্দার সহ সকলের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
সহপাঠীদের মধ্যে হারিয়েছি বুলবুল (বুলু), ইসমাইল ও স্বপনকে! ওদের সাথে একই ক্লাসে পড়েছি ! কত গল্প করেছি ! অথচ আজ ওরা নেই ভাবতেই কেমন লাগে! ওদের বিশেষ ভাবে স্মরণ করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমরাও যেকোনো সময় হারিয়ে যেতে পারি চিরতরে!
এবার অন্য দু’একটি প্রসঙ্গে কিছু বলি। তোমরা জানো অঙ্কে আমি সবচেয়ে দুর্বল। ৯ম শ্রেণি হতে ১০ম শ্রেণিতে উঠার সময় অঙ্কে ২৯ পেয়ে ফেল করি। এ জন্য আমার রোল হয় ১০ (সব বিষয়ে ৯ জন পাস করেছিল)। ভীষণ চিন্তার মধ্যে ১ বছর অঙ্ক মুখস্ত করে করে এসএসসি-তে পেয়েছিলাম ৭৮ (তখন মনে হলো আহারে যদি আর ২ পেতাম ! তাহলে লেটার মার্কস হয়ে যেত!)। আমি আজও স্বপ্নে অঙ্ক পরীক্ষা দেই। আর অঙ্কের দুর্বল মাথা আমাকে জাগতিকভাবেও দুর্বল করে রেখেছে। ২ + ২ = ৫ লিখে ফেলি! অঙ্কের সেরা ছাত্র আজিজ, ইসমাইল (প্রয়াত), আতিক, বিশ্বজিৎ ও মনোরঞ্জনকে শুধু দেখতাম। আর ভাবতাম, যদি ওদের মতো অঙ্ক বুঝতাম! ক্লাসমেটদের মধ্যে হায়দার, আলতাফ, জিল্লুর,
শফিক, হযরত, হবি, উদ্ধব, গোকুল, শওকত, মোশারফ, জিন্নাত, আদিত্য, রাহেজুদ্দি, নূরুল, স্বপন, পথিক, সুজিত, বিশ্বজিৎ, সিদ্দিক, নারায়ন, নুরু, যোগেশ, তুহিন, যুগল, মিলন, হেলেনা, গৌরী, কানন, নারায়ন, সুভাষ, শোভা, সেতারা’র মুখ (স্মৃতিতে ঝাঁপসা ভাবে আরো কেউ কেউ হয়তোবা লুকিয়ে আছে) প্রায়ই মনে পড়ে। বিশেষ ভাবে মনে পড়ে তুহিন বিশ্বাস ও স্বপনের মজার তর্কের কথা। স্কুলের বাইরে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি নূরুল ও হায়দারের সাথে। প্রায় প্রতি বিকেলে গামছায় মুড়ি নিয়ে ওদের যে কোনো একজনের সাথে কাটাতাম! হায়দারদের বাড়ির পশ্চিম পাশে (নদীর ধারে) গিয়ে ডাকতেই ও চলে আসতো! আজ ওকে পাবো কিনা জানি না। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় কিছুদিন স্কুলের হোস্টেলে রাতে থেকে কিশোরী স্যারের কাছে বৃত্তির বিশেষ ক্লাস করেছি। সে সময় মনোরঞ্জন, হায়দার, জিন্নাত, আনন্দ (বর্তমানে নিউ দিল্লীতে গুরুবাবা) সহ অনেকের সঙ্গই দারুন উপভোগ করেছি। এক শীতের মধ্য রাতে সেখানে মুরগী রান্না করে খাওয়ার (পাশের জমি থেকে চুরি করে পিয়াজ আনা) কথা ভুলিনি (সিনিয়র ভাই কৈতরার প্রফুল্লদা সাথে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইঞ্জিনিয়ার)। হেড স্যারের রাগ (রমনী মোহন তরফদার), রাখাল স্যারের মাঝে মধ্যে একটু দেরীতে দৌড়ে স্কুলে পৌছানো এবং স্যারের অঙ্কের মাথা, কাশেম স্যারের বিদায় ও শিক্ষার্থীদের ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা, মাধব স্যারের (হেড স্যার) বীরের মতো ব্লাকবোর্ডে লেখা, কিশোরী স্যারের বাঁশি ফু (আ্যাসেম্বলিতে) ও সাদা-কালো টেলিভিশন, কফিল স্যারের চুল ধরে কান মলা, মনীন্দ্র স্যারের ‘দ্রবন’ উচ্চারণ ও অঙ্কের ক্লাস, মেঘলাল স্যার ও দবির স্যারের ক্লাস ও বায়রা হাটে চা খেতে যাওয়ার দৃশ্য (সাইকেল চালিয়ে) আচমকা মনে পড়ে যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসের বিকেলে গরুর পাল নিয়ে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে কতবার যুগল-মিলনের কাছ থেকে জল খেয়েছি। ওরা ওদের কামরাঙ্গা গাছ হতে কামরাঙ্গা দিত। কতই না মধুর ছিল সে সময়! দু’চোখে জল এসে গেছে। সময়ের স্রোতে ভেসে চলেছি আমরা। আমরা সবাই আজ ৫০+। ভাবতেই মনটা বিষাদে ভরে যায়। জীবনের গল্পগুলো আমাদের ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে।
আজকের দিনে হয়তোবা সবার গল্প শুনতেও পারবো না! তবুও এতাগুলো বছর পরে আমাদের দেখা তো হলো। সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে, উদ্যোক্তা ও আয়োজকদের আবারো অন্তরের অন্তস্থল হতে ভালোবাসা জানিয়ে এবং আগামীতে দেখা হবে এ কামনায় আজকের মতো শেষ করছি। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা জয়ী হোক !! আমাদের বন্ধন অটুট থাকুক !!!
তোমাদের বন্ধু-
শ্যামল কুমার সরকার
কড়চা/ এসকেএস