কড়চা ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ আশি হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন এবং অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যান। দেশে যেসব সাপ রয়েছে, তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। সাধারণত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড় এবং তা থেকে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে।
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির তথ্যে, সাপে কাটার ঘটনা গ্রামাঞ্চলে, এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি ঘটে থাকে। স্থলভূমিতে থাকা সাপ পায়ে বেশি দংশন করে। এছাড়া বাংলাদেশে ২৩ ধরনের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে, সেগুলো মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের দংশন করে। তবে সমুদ্রের গভীরে তাদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণত এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী সাত প্রজাতির বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়।
সেগুলো হলো, নায়া, নায়া কাউচিয়া, কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়, ক্রেইট বা শঙ্খিনী, কালো নাইজার, চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ বোড়া।
আমাদের দেশে প্রায় ৪০০ প্রজাতির সাপ আছে। এই বিরাট সংখ্যক সাপ চেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর সব সাপ জনবসতির কাছাকাছিও থাকে না। তাই নিজেদের উপকারের জন্য সাধারণ কতকগুলি সাপ চিনে রাখলেই যথেষ্ট।
বিষধর সাপ: কেউটে, গোখরো এই সাপ চেনা সবচাইতে সোজা। এই সাপের ফণা রয়েছে। ফণার উপরে গোল ছাপ থাকে। গোখরোর মাথার উপরে থাকে ইউ আকারের ছাপ। কেউটে, গোখরো যে বিষধর সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চন্দ্রবোড়ার মাথাটা শিঙারার মতো তিনকোণা। শরীরটা খয়েরি। গায়ে লেপার্ডের মতো কালো চাকা চাকা দাগ। লেজটা হঠাৎ শেষ হয়ে গিয়েছে। কোনও কারণে উত্তেজিত হলে কুণ্ডলি পাকিয়ে যায় আর প্রেশার কুকারের সিটির মতো আওয়াজ করে।
কালাচ গ্রামেগঞ্জে বা আধা শহর, আধা গ্রামের মতো জনপদে রাতবিরেতে কালাচ সাপ বেরয়। সারা গা তেল চকচকে। তার উপর কালো চুড়ির মতো দাগ রয়েছে। মাথাটা ছোট্ট জিওল গাছের পাতার মতো। মারাত্মক বিষধর সাপ এটি।
শাঁথামুটিখুব নিরীহ সাপ। কালো আঁশের উপর উজ্জ্বল হলুদ রিং-এর মতো দাগ থাকে শাঁখমুটির। গায়ে এমন নকশার জন্যই শাঁখামুটিকে সহজে চেনা যায়। সচরাচর কামড়ায় না।
নির্বিষ সাপ: প্রথম স্থানেই থাকবে দাঁড়াশ। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলাফেরা করে। মোটমুটি সাধারণ লোকের বাড়ির আশপাশে, আনাচে কানাচে, চাষের খেতে সর্বত্র দেখা যায়।
আজকাল হেলে সাপের সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছে। পুকুর, খালবিল, ছোট ডোবা, এমনকী ড্রেনেও হেলে সাপ থাকে। দেহ সরু। রং হালকা বাদামি। শরীরের উপরে দু’টি হালকা ফিতের মতো দাগ থাকে।
ঢোঁড়া সাপও সাধারণত পুকুর, ডোবা, অল্প জল জমে থাকা চাষের জমিতে থাকে। মাঝারি আকারের সাপটির দেহের রং হলুদাভ সাদা। সঙ্গে বাদামি বা কালো রঙের ছোপ ছোপ দাগ থাকে। পেটের দিকে সাপটির রং হলদে সাদাটে হয়।
মেটুলি কাদাজলে থাকে। গাঢ় বাদামি রঙের। পেটটি হলুদ। দেহের তুলনায় মাথা ছোট এবং সরু।
গাছে থাকা বিষহীন সাপের মধ্যে রয়েছে লাউ ডগা, কালনাগিনী আর বেত আচরা। বেত আচরাকে অনেকে বেতে সাপও বল।মএরা উঁচুতে থাকে আর মাঝে মধ্যে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে। এই কারণে গ্রামে গঞ্জে মিথ আছে, লাউ ডগা সাপ উড়ে গিয়ে ছোবল বসায়! মজার ব্যাপার হল লাউডগা বিষহীন! সবুজ রঙের লাউডগা সাপ দেখতে অতিসুন্দর।
কালনাগিনীও দেখতে খুব সুন্দর। হলুদ কালো ডোরাকাটা দাগের উপর লাল টিপের মতো দাগ থাকে। নামে কালনাগিনী হলেও বিষ নেই মোটেই। গাছে থাকে। ভীতু সাপ।
বেত আচরাও নিরীহ। দেহ সরু আর হালকা। শরীরের রং গাঢ় বাদামি। দেহে কালো ছোপ ছোপ থাকে। ঝোপের উপরে, গাছের ডালে দিনের বেলায় এদের দেখা যায়। এরা খুব দ্রুত চলাফেরা করতে সক্ষম।
গ্রামেগঞ্জে, শহরতলিতে একটা সাপ খুব দেখা যায়, যার নাম ঘরচিতি। অনেকের কালাচ ভেবে ভ্রম হয়। ঘরচিতির গায়ের রং বাদামি। ঘাড়ের কাছে চওড়া পট্টির মতো দাগ থাকে। গায়ের উপর হালকা হলুদ রঙের দাগ থাকে। কালাচের রং কালো। গায়ে সাদা সাদা দাগ থাকে। রাতে বেরয়। ঘরচিতির বিষ নেই। কালাচ বিষাক্ত। তবে এই দুই ধরনের সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই রাতে মশারি টাঙিয়ে শোবেন। আর মশারি টাঙানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নেবেন। কারণ অনেক সময় বিছানাতেও সাপ আগে থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে।
সাপে কামড়ালে কী করবেন?
সাধারণভাবে বোঝানোর জন্য বলা যায়, সাপের বিষ দুই ধরনের হয়। নিউরোটক্সিক এবং হেমোটক্সিক। এক ধরনের বিষ স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে। এক ধরনের বিষ রক্ততঞ্চন ঘটায়। সময়ে ব্যবস্থা না নিলে দু’টি ক্ষেত্রেই পরিণতি মত্যু। তাই সাপে কামড়ালে দেখুন ওই ব্যক্তি ঝিমিয়ে পড়ছেন কি না। শরীর অবশ লাগছে কি না। ঢোক গিলতে সমস্যা হচ্ছে কি না ইত্যাদি। হেমোটক্সিক বিষে শরীরে জ্বালাভাবও থাকে। এমন ক্ষেত্রে সাপ খুঁজে তাকে ধরে মেরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় ব্যয় করবেন না। সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যান। মনে রাখবেন ওঝা বা গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না কোনওমতেই। তাতে অকালে একটা প্রাণ ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
কড়চা/ এস কে