মানিকগঞ্জে ফ্ল্যাটের ভেতর নিস্তব্ধ মৃত্যু : মা-সন্তানের লাশ উদ্ধার

কড়চা রিপোর্ট : মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট। বাইরের কোলাহলমুখর শহরের বিপরীতে ভেতরে নেমে এসেছিল নীরবতা। দরজায় কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া মিলছিল না। অবশেষে ভাঙা দরজা খুলতেই মিলল হৃদয়বিদারক দৃশ্য—খাটের ওপর মা, মেঝেতে ছড়িয়ে দুই সন্তানের নিথর দেহ।

নিহতরা হলেন শেখা আক্তার (২৯), তার ছেলে আরাফাত ইসলাম আলভী (৯) এবং ছোট মেয়ে সাইফা আক্তার (২)। পুলিশ বলছে, মা দুই সন্তানকে বিষ পান করিয়ে নিজেও একই পথে পাড়ি জমান। ফ্ল্যাট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল, পাশে মিলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের উপকরণ।

শেখা আক্তারের স্বামী শাহীন আহমেদ দুই মাস আগে জীবিকার টানে মালয়েশিয়ায় যান। এর আগে তিনি এলাকায় ইজিবাইক চালাতেন। পাঁচ বছর আগে শেখাকে বিয়ে করেন শাহীন। দুজনেরই এটি ছিল দ্বিতীয় সংসার। সেই সংসারে জন্ম নেয় ছোট্ট সাইফা। শেখার আগের সংসারের সন্তান আরাফাতও মায়ের সঙ্গেই থাকত। স্বামী দূর প্রবাসে, অচেনা শহরের ভাড়াবাসায় দুই সন্তান নিয়ে একা ছিলেন শেখা।

পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আলমগীর হোসেন ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে—“সকালে বিদ্যুৎ বিলের টাকা চাইতে গিয়েছিলাম। দরজায় বারবার নক করেও কোনো শব্দ পাইনি। বাড়িওয়ালাকে জানাই। তিনিও ডেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। যা চোখে দেখলাম, তা কোনোদিন ভুলতে পারব না।”

পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, দাম্পত্য কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। মা হয়তো দুই সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে শেষ করার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

শাহীনের মামা আমান আনসারী বলেন, শাহীনের বাবা-মা কেউ নেই। বোনের বাড়িতে বড় হয়েছে সে। প্রথম সংসারে বিচ্ছেদের পর শিখাকে বিয়ে করে। মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসায় তোলে। কে জানত এরই ভেতরে এমন ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে।

দুপুরের আলো যখন শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখনই এই ছোট্ট ফ্ল্যাটের ভেতর ছেয়ে যাচ্ছিল মৃত্যুর গাঢ় অন্ধকার। নিঃসঙ্গ এক মায়ের দীর্ঘশ্বাস যেন চিরতরে মিলিয়ে গেল দুই সন্তানের সঙ্গে। চার দেয়ালের ভেতরে বন্দি হয়ে রইল এক সংসারের ভাঙা গল্প।

কড়চা/ এস এস

Facebook Comments Box