সুশিলের বিয়ে/ রুহুল ইসলাম টিপু

প্রতীকী ছবি

সুশিলের বিয়ে

রুহুল ইসলাম টিপু

বিয়ে মানে রোমাঞ্চ। বিয়ে মানে বন্ধন। নর নারীর মিলন। সমাজের শৃঙ্খলিত একটি ব্যবস্থা। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারপদ্ধতি। আমি বিয়ে এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক নই। বিয়ে করেছি। ২৫ বছরের সংসার জীবন। স্ত্রী, তিন কন্যা এবং বাবা মা। বড় মধুর পারিবারিক বন্ধন। একের সুখে সকলের আনন্দিত, দুঃখে ভরাক্রান্ত, বাধা অতিক্রমের প্রাণপণ প্রচেষ্টা। এটিই সংসারের ধর্ম। পরিবার হচ্ছে সমাজের ক্ষুদ্র অংশ। পরিবার এলোমেলো হলে সমাজও কলুষিত হয়। পরিবারের বাঁধনের বাত্যয়কে কোনভাবেই ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। সে অর্থে বিয়ে নারী এবং নরের একত্রিত জীবন যাপনের চেয়েও সমাজ গঠনে অবদান রেখেছে ঢেড়।

করোনা কালের স্থবিরতার মাঝে সামাজিক কর্মাদি সম্পন্ন হচ্ছে। এর মাঝে পেলাম সুশিলের বিয়ের আমন্ত্রণ পত্র। সুশিল যে বিয়ে করেনি, এটি আমন্ত্রণপত্র বলে দিলো। খুশি ও পুলকিত হলাম। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মতো নয়। আচার আচরণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে সনাতন ধর্মের বিয়ে দেখার সুযোগ কম ঘটে। আমন্ত্রণ রক্ষায় ঐকান্তিক বাসনা হলো। আমার সময়টা ভালো যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভৌগোলিক দূরত্ব। দুয়ে মিলে আশির্বাদ এবং উপলব্ধি প্রকাশে লেখনিকে বেছে নিলাম।

হিন্দু বিয়ে শাস্ত্রীয় মতে অবিচ্ছেদ্য। এটি নারী এবং পুরুষের মধ্যে পবিত্র বন্ধন। হিন্দু আইনে বিয়ে কোন চুক্তি নয়। একটি ধর্মীয় সংস্কার। আইনের খুবই ক্ষুদ্র একজন ছাত্র হিসেবে আমরা জানি হিন্দু আইন হিন্দুদের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত আইন। হিন্দুদের উত্তরাধিকার, বিবাহ, ভরণপোষণ, দত্তক গ্রহণ, অভিভাবকত্ব নির্ণয়, পারিবারিক সম্পর্ক নির্ধারণ, উইল, দানপত্র, ধর্মীয় ও দাতব্য কারণে সম্পত্তি দান বা দেবোত্তর হিন্দু পারিবারিক আইনের আওতায় পড়ে। বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ও সাঁওতালদের ক্ষেত্রেও এ আইন অনেকাংশে প্রযোজ্য। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মরিশাস ও শ্রীলংকার একাংশে হিন্দু আইন প্রচলিত। প্রাচীন কালে ৮ ধরনের বিয়ে প্রচলিত ছিল। ৪ টি অনুমোদিত এবং ৪ টি অননুমোদিত বিয়ের প্রচলন দেখতে পাই। অনুমোদিত বিয়ের ৪ নম্বরে রয়েছে প্রজাপাত্য বিয়ে। সুশিলের বিয়ে সম্ভবত: প্রজাপাত্য বিয়ে হবে, কারণ তার আমন্ত্রণ পত্রের শুরুতে শ্রী শ্রী প্রজাপতয়ে: লেখা রয়েছে। হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স এখন শিশু বিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ (সংশোধিত: ১৯৩৮) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইনে বিয়েতে কন্যার বয়স ১৮ এবং পাত্রের বয়স ২১ ধার্য করা হয়। এর কম বয়সের পাত্র-পাত্রীদের বিয়ে হলে সে বিয়ে আইনত অসিদ্ধ হবে না। হিন্দু ধর্মের প্রত্যেক নর-নারীর বিবাহ নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২ পাস হয়, যা বিবাহের একটি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে পরিগণিত হবে। এ আইন অনুযায়ী হিন্দু নর নারী শাস্ত্র অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের নিকট নির্ধারিত ফি প্রদান করে বিবাহ নিবন্ধন করা যাবে। সরকার সিটি করপোরেশন এবং উপজেলায় নিবন্ধক নিয়োগ দান করবেন। তবে নিবন্ধন না করালেও শাস্ত্র অনুযায়ী বিবাহ রীতিসিদ্ধ থাকবে।

বিয়ে নিয়ে শাস্ত্রীয় কথা আমার বিষয় নয়। আমার আবেগীয় ক্ষেত্র সুশিলের বিয়ে। সুশিলের আমন্ত্রণের আন্তরিকতা ছিল বড়ই মনোমুগ্ধকর। প্রত্যেককে পৃথকভাবে আমন্ত্রণ পত্র প্রদান করেন। নিজে এসে বিয়েতে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানান। জলপাই এর মায়া মেশানো রং এর আমন্ত্রণ পত্র। খুবই রুচি সম্মত। সংস্কৃত শব্দে শান্তির বাণী রয়েছে। আমার আবেগের জায়গা দখল করেছে আমন্ত্রণের ভাষা শৈলী। এটি দীর্ঘ দিনের আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলেও, এখনও এতো বিনীতভাবে এর প্রচলন রয়েছে, এটির মূল্য আমার নিকট অপরিসীম। সুশিলের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে এবং কনে সুপর্ণা একই জেলার আদিতমারী উপজেলায়। নেমন্তন্ন করেছেন শ্রী নিরেন চন্দ্র রায় ও সাবিত্রী রানী রায়, সুশিলের বাবা মা। মূল অংশে লিখিত রয়েছে প্রজাপতি ঋষির সৃজনী ভূমিকাকে স্মরণ করে এই আমন্ত্রণ লিপি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে সুশিল এবং সুপর্ণার শুভ পরিনয় বন্ধনের আনন্দবার্তা। প্রীতিভোজে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে ধন্য করার অনুরোধ রয়েছে। পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জনীয়। এ কথাগুলো হয়ত সকল বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রেই থাকে। তবুও আমি এর মধ্যে বড় বিনয় লক্ষ্য করি। এই বিনীত নিবেদনকে শ্রদ্ধা জানাই। সকলের শুভাগমন ও শুভাশীর্বাদে ধন্য হোক সুশিল ও সুপর্ণার নব দাম্পত্য জীবন।

অবশ্যই আমার আর্শিবাদ থাকবে সুশিল, সুপর্ণার প্রতি। সুশিল সুপর্ণার বিয়ে ১০ ডিসেম্বর, এ দিন বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। সুশিল এবং সুপর্ণার দাম্পত্য জীবন সুখ সাচ্ছন্দ্যময় উচ্ছ্বাস আনন্দে ভরে উঠুক। সুখী হোক পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মানব মানবী। মানবাধিকার দিবসে জয় হোক মানবতা এবং বিশ্ব সভ্যতার।

কড়চা/ আর ই টি

Facebook Comments Box
ভাগ