২৬ জুলাই ২০২০ এর প্রথম আলো’র একটি সংবাদের শিরোনাম ‘ধর্ষণেই মৃত্যু ছোট্ট শিশুটির, সাভারে গ্রেপ্তার দুই।’ ধর্ষিত মৃত শিশুর বয়স ছয় মাস। সংবাদের বিবরণে জানা যায়, ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েই ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুটির বাবা মা আশুলিয়ায় থাকেন। বাড়ি রাজশাহী। বাবা মা কর্মস্থলে থাকলে নুরজাহান শিশুটিকে দেখতেন। ঘটনাটি ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের, নুরজাহানের জামাতা শিমুল শিশুটিকে ধর্ষণ করে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। সিআইডি’র প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি ধর্ষণ জনিত হত্যাকান্ড। শিমুল এবং তার শাশুড়ি নুরজাহানকে আটক করা হয়।
আমি বাকরুদ্ধ। মানবমাত্র অনুভূতি ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। একটি শিশু। যে কিছুই বুঝে না। অসহায় মানব। বয়স বিবেচনায় কোলের সন্তান। তাকে ধর্ষণ। শিহরণ জাগানো ঘটনা। দিনাজপুরে ইয়াসমীন, চট্টগ্রামে সীমা, মধুপুরে রূপা ধর্ষণ এবং হত্যা এসব ঘটনা কেউ ভুলে নি। রূপাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল ঘাড় মটকিয়ে। মেয়েটি তার সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করেও ধর্ষণ এবং জীবনকে রক্ষা করতে পারেনি। যাদের কথা বলা হলো; তারা আমরা কেউ নই। তবে একটি মানবও আমাদের বাইরের কেউ নয়। ভুক্তভোগী ব্যক্তি জানেন এ যন্ত্রণার পরিসীমা। এ নারী শিশুটি যদি আমি হতাম। তাহলে আমি ৬ মাস বয়সেই ধর্ষিত হবো এবং আমাকে করা হবে হত্যা। আমার জন্য পৃথিবীর আলো বাতাস নয়। আমার জীবনের কোন মূল্য নেই। জগতকে বুঝার পূর্বেই ইতি টানতে হবে আমাকে; হতে হবে নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যা। মানবের নিকট হতে কী নির্মম প্রাপ্তি?
আমার সন্তান যদি এই শিশুটি হয়। তারও হবে এ পরিণতি। আমি তখন কী করবো। যেটি করছেন ধর্ষিত এবং হত্যা হওয়া শিশুটির বাবা-মা। পরিবার, প্রতিবেশি, সমাজ শিশুটির বাবা মা’র নিকট আজ বড় অচেনা এবং অজানা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসামীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। পেনাল কোড, ফৌজদারী বিধি যাবতীয় আইনের বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা সুপ্রাচীন কাল হতে বিদ্যমান। আসামী শিমুলরা এই সমাজেরই মানুষ। আমাদের সমাজ তো শিমুলদের বদলাতে পারছে না। কোন পরিবর্তনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
মনের পশুত্ব নির্মূল বড় প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ভাবনার জগৎ বিশাল। তাদের গবেষণায় উঠে আসবে সমাজের দিক নিদের্শনা এবং এগিয়ে যাবে সমাজ এবং রাষ্ট্র। সমাজের একজন অতি সাধারণ হিসেবে একথা বলা অমূলক হবে না যে আমাদের কোথায় যেন একটা গলদ রয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছি স্বাভাবিক মানবতা। শিক্ষাকে আমরা কবর দিয়েছি অথবা আমরা কোন শিক্ষাই পাইনি। আমি যে সমাজে বাস করি সেখানে ৬ মাসের শিশু ধর্ষিত ও হত্যা হয়। একথা কার কাছে গিয়ে বলবো? কোথায় আমার সভ্যতা?
ঝিটকা খাজা রহমত আলী কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শ্যমল কুমার সরকার আমার একটি লেখার নিচে পোস্ট করে বলেন, মানবতার মৃত্যু নেই; এটি আমাকে বেশ তাড়িত করে। খুঁজে বেড়াই মানবতা। ধর্ষিতা হত্যা হওয়া ৬ মাসের কোলের মেয়েটি আমাকে শিখিয়ে গেল আমরা অসভ্য সমাজ তাকে রক্ষা করতে পারলাম না, বাঁচতে দিলাম না।
আমার প্রতিবাদ, ঘৃণা করি অসভ্য মানবকে।
কড়চা/ আর আই টি