অনেক বয়স হলো। জন্ম ১৯৬৬। বাকী হিসেব করার দরকার নেই। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়, সাইকেল চালানো শিখি। বাবার সাইকেল ছিল। ছোট কাকাও সাইকেল চালিয়ে অফিসে যেতেন। মানিকগঞ্জ মহকুমা শহরে জন্ম। এখন জেলা শহর। আমার প্রিয় স্থান। গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনরা কাজে শহরে আসতেন সাইকেল নিয়ে। সাইকেল রেখে যেতেন আমাদের সরকারি কোয়াটারের বাসায়। সেটিই ছিল সাইকেল চালানোর মোক্ষম সুযোগ। কত বার যে পড়েছি এবং ব্যথা পেয়েছি, সেটি ভুলে গিয়েছি। মনে আছে কোয়াটারের মাঠ, পুকুর পাড়, ঘাসের রাস্তা। এসব অতীত। স্থান বদলে গিয়েছে, আমিও বদলে গিয়েছি।
বিয়ের পর সস্ত্রীক থাকি পাইক পাড়া, মিরপুর। সবুজবাগ থেকে মিরপুর বাসা বদল। অফিস পুরানো পল্টন। সময় ১৯৯৭ সাল। যাতায়াতের খুবই সমস্যা। কিনলাম ভেসপা। সহায়ক হলো। ব্যক্তিগত যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথম হোচট খেলাম ২০১০ এ এসে। আমার তৃতীয় মেয়ের জন্ম। আমরা হলাম ৫ জন। এর পূর্বে শ্রেয়া ভেসপার সামনে, স্নেহা তার মায়ের কোলে, চালক আমি। ভালই চলছিল।
এখন আর একসাথে ভেসপায় জায়গা হয় না। কিনলাম হাত বদল করা একটি টয়েটা গাড়ী। চলাচলে আনন্দই বটে। ঢাকাতে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহারের প্রধান সমস্যা পার্কিং। আর ভালো লাগে না। পায়ে হাঁটাই ভালো। সমস্যা দূরত্ব। থাকি এয়ারপোর্ট এলাকায়। অফিস বনানী। হাঁটতে প্রায় পৌনে ২ ঘন্টা সময় প্রয়োজন। ক্লান্ত শরীরে অফিস করা যায় না। বাস যাত্রা অপছন্দের। অফিসের গাড়ীও নিয়মিত নয়। ১৩ এপ্রিল ২০১৯ এ চলে গেলাম বংশাল। দিনটি ছিল বৈশাখের পূর্ব দিন। ক্রয় করি প্রিয় বাইসাইকেল। চালিয়েই বাসায় আসি দক্ষিণ মোল্লারটেক। অনেক দিন পর সাইকেল চালানো। বেশ কষ্ট হয়েছিল। পথিমধ্যে পানি পান এবং একটু বিশ্রাম ছিল। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সাইকেল চালাই। কী যে মজা, আনন্দ, কী যে সুখ, সেটি শুধু আমিই জানি। আর জানেন, যারা সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করেন।
সাইকেল পরিবেশ বান্ধব। কোন জ¦ালানীর প্রয়োজন নেই, সাশ্রয়ী। সাইকেল স্বাস্থ্যসম্মত। মানসিক প্রশান্তিতে ভূমিকা রাখে। শব্দ দূষণ নেই। প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে থাকার সঙ্গী। সময় আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে। অপরের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। নিয়মিত সাইক্লিং এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দেশের উন্নয়নে সাইকেলের ভূমিকা রয়েছে। সাইকেল সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে একটি বাহন। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর অবদান যেমন স্বীকার্য। দেশের দারিদ্র্য নির্মূলেও সাইকেলের রয়েছে অবদান।
আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে। সুবর্ণজয়ন্তীর বছর আসবে ঠিক ৫ মাসের মধ্যে। আমাদের স্বাধীনতার ৫০তম বছর ২০২১ সাল। করোনা আমাদের দারিদ্র্যমুক্তের সময়, কষ্ট এবং হতাশাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্তসহ বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কার্যক্রমকে বড় বাধার মধ্যে ফেলে দিলেও আমাদের সফলতা আসবেই, এটি আমার বিশ^াস।
সাইকেল চালিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অন্য রকম আনন্দ আছে। বর্ষা এবং সকল ঋতুকে উপভোগ করা যায় প্রিয় সাইকেল চালিয়েই, যেটা অন্য কোন বাহনে সেভাবে উপভোগ্য নয়। ইচ্ছে হলে নেমেই চট করে রাস্তা বা পরিবেশ পরিস্থিতির ছবি তুলতে পারি। গান গাইতে পারি। প্রিয়জনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অন্য জগতে চলে যেতে পারি। আমার দিনের এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার বড় অংশের সৃষ্টি সাইকেল চালানোর সময়। প্রিয় সাইকেলকে তাই আমি ধন্য এবং গর্বিত।
আমাদের আরো সচল হতে হবে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত। পরিকল্পনার সাথে যুক্ত করতে হবে করোনা, বন্যা, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য দুর্যোগকেও, এটিই নয়া স্বাভাবিকতা। আসুন প্রাচীন বিজ্ঞান সাইকেলকে সাথে নিয়ে সকল বাধা অতিক্রম করে আধুনিক জীবন গড়ি। দারিদ্রকে চিরতরে নির্মূল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। বাংলাদেশের সমৃদ্ধির মাঝেই আমাদের শান্তিময় জীবন।
কোনভাবেই আমার প্রিয় সাইকেলকে বাদ দিয়ে নয়।
কড়চা/ আর আই টি