মে দিবস এবং শ্রমিক অধিকার
রুহুল ইসলাম টিপু
মহান মে দিবস শ্রমিকের আন্তর্জাতিক সংহতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। মে দিবস শুরু ১৮৮৬ সালের ০১ মে হতে। এ বছর দিবসটির ১৩৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। সারা বিশ্বের শ্রমিক এবং আপামর মানুষ দিবসটি মর্যাদার সাথে উদযাপন করে আসছে। এর নেপথ্যের ইতিহাসে রয়েছে শ্রমিকের জীবনোৎসর্গ ও ত্যাগের এক করুন নির্মমতা। সেইসব বীর শ্রমিক নেতৃবৃন্দের স্মরণে তাদের প্রতি সংগ্রামী অভিবাদন ও শ্রদ্ধা। পৃথিবীর সভ্যতার যাত্রা শুরু একদল শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিকদের মাধ্যমে। আমাদের আদি পেশা দাসবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি এবং কৃষির হাত ধরেই আমরা প্রবেশ করছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে। আমাদের হাতে এখন ভার্চুয়াল দুনিয়া, আমরা সবাই গ্লোবাল ভিলেজের সদস্য। বিস্ময়কর অর্জন এবং অভাবনীয় উন্নয়ন ও উন্নতি এর সবকিছুই হচ্ছে বিশ্ববাসী আমাদের প্রতি শ্রমিকের দান, মহিমা ও উপহারসামগ্রী। আমরা সেসব সাদরে গ্রহণ করি। শিল্প, অর্থনীতি ও সভ্যতার বিকাশের সাথে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত আর তাদের শরীরের ঘাম। শ্রমিকের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমেই নির্মিত বিশ্বের প্রাসাদ অট্টালিকাসহ সকল স্থাপনা ও নির্মাণ। মে দিবসের আত্মহুতি এবং অর্জন হচ্ছে পূর্বের শতাব্দীর পর শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া অজস্র-সহস্র আন্দোলনের ফসল। সুদীর্ঘকাল হতে চলে আসা বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বিকাশ ও অর্জনের মাইল-ফলক।
শ্রমিকদের নির্যাতনের বড় অধ্যায় হচ্ছে তাদের ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা ধরে কাজ করতে হতো। পারিশ্রমিকও ছিল খুবই নামমাত্র। ১৮৩৪ সালে নিউ ইয়র্কের বেকারি শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে ধর্মঘট করেন। এরও পূর্বে ১৮২৭ সালে মেকানিক্স ইউনিয়ন অব ফিলাডেলফিয়া ১০ ঘন্টা কর্ম দিবসের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৮৫৬ সালে অষ্ট্রেলিয়ার শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা বিনোদন এবং ৮ ঘন্টা বিশ্রাম এর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ থেকেই বিশ্বব্যাপী শুরু হয় ৮ ঘন্টার কাজের দাবি। ১৮৭৭ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, ৮ কর্মঘন্টা কাজ এবং উন্নত কর্মপরিবেশের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র মালিকদের পক্ষে চালিয়ে যায় নিষ্ঠুর দমননীতি। ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ শত শ্রমিক দাবি আদায়ের সংগ্রামে প্রাণ দেন। একই বছর ৭ অক্টোবর আমেরিকার ফেডারেশন অব লেবার জাতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। চলমান এ আন্দোলন ও দাবি কার্যকর করার সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালের ০১ মে পর্যন্ত। মালিকপক্ষ এতে কোনরূপ সাড়া না দেওয়ায় আমেরিকার শিকাগো শহর হয়ে উঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের মূল মঞ্চ। বিদ্রোহ দমনে মালিকপক্ষ পুলিশকে বিশেষ অস্ত্র কিনে দেন। শ্রমিক নিপীড়ন ও আন্দোলন প্রতিরোধে পুলিশের ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। একটি পত্রিকায় চলমান আন্দোলনের উপর লেখা প্রকাশিত হয়। এতে শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত: দাবি মানার পরিবর্তে রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষ হয়ে উঠলো আরো বেপরোয়া।
০১ মে ১৮৮৬, এদিন ছিল যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক আন্দোলনের চরম পর্যায়। প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। এর তিনদিন পর ০৪ মে ১৮৮৬ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শিকাগো হে মার্কেট স্কয়ার নামক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে একত্রিত হন। ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত বিশাল এক শ্রমিক শোভাযাত্রা সাফল্য লাভ করে। এদিন কানাডার অনুকরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা একইরকম কর্মসূচি পালন করছিলেন। শিকাগো’র এ শ্রমিক সমাবেশ ছিল বিশাল। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ইতোপূর্বে শ্রেণি সংহতির বলিষ্ঠ প্রকাশ দেখা যায়নি। নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ পুলিশ দলের নিকট এক বোমার বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিক ১ জন পুলিশ এবং পরবর্তীতে আরও ৬ জন পুলিশ নিহত হন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর হামলাটি উভয় পক্ষের মাঝে চরম দাঙ্গার রূপ নেয়। এতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। আহত ও গ্রেপ্তার হন অনেকে।
পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অগাষ্ট স্পাইজ, স্যামুয়েল ফিলডেন, মাইকেল স্কোয়ার, জর্জ এঙ্গেল, এ্যডলফ ফিশার, লুই লীংগ, অস্কার নীবে ও এ্যালবার্ট পারসনস প্রহসনমূলক দোষী সাব্যস্ত হন। অস্কার নীবেকে ১৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। লুই লীংগ ফাঁসির পূর্বেই কারারুদ্ধ অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। ১১ নভেম্বর ১৮৮৭-এ ৬ জন অগাষ্ট স্পাইজ, স্যামুয়েল ফিলডেন, মাইকেল স্কোয়ার, জর্জ এঙ্গেল, এ্যডলফ ফিশার, এ্যালবার্ট পারসনসকে উম্মুক্ত স্থানে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। ফাঁসির পূর্ব মুহূর্তে অগাস্ট স্পীইজ বলেছিলেন, ‘সেইদিন আসবে যখন আমাদের নীরবতা হবে খুবই শক্তিশালী যেটি তোমরা আজ শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছো।’ এ্যডলফ ফিশার বলেছিলেন, ‘এটা হচ্ছে আমার জীবনের আনন্দঘন মুহূর্ত।’ এ্যালবার্ট পারসনস বলেছিলেন, ‘জনগণকে আমাদের দাবি শুনতে দাও…।’ পূর্ণ বাক্যটি উচ্চারণ করতে দেওয়া হয়নি; এর পূর্বেই তিনি ফাঁসিতে নিহত হন। মহামূল্যবান অমূল্য সম্পদ জীবন এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আট ঘন্টা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জিত হয়। ২৬ জুন ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর জন পিটার অল্টগেল্ড জানান, মিথ্যে ছিল ঐ বিচার। পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। একই বছর গ্রানাইট দিয়ে ১৬ ফুট উঁচু হে মার্কেট স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটাকে ন্যাশনাল ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ঘোষণা করে। জন্ম নেয় একটি মহান সফল বিপ্লব যার নাম মে দিবস।
মহান মে দিবসের শত বর্ষের আন্দোলনের সাফল্য পৃথিবীতে অনেক বড় বড় পরিবর্তন সাধিত হয়। লীগ অব নেশনস এর সঙ্গে সহযোগী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তির অধীনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও প্রতিষ্ঠিত হয়। লীগ অব নেশনস বিলুপ্ত হলেও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএলও টিকে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৬-এ জাতিসংঘ এবং আইএলও এর মধ্যেকার সম্পর্ক বিষয়ক এক চুক্তির মধ্য দিয়ে আইএলও হচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম বিশেষায়িত সংস্থা।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিকের মহান অবদান অনস্বীকার্য। তারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধকে করেছেন সমৃদ্ধি। দেশের স্বাধীনতায় রেখেছেন অনবদ্য অবদান। আরো পূর্বে ১৯২০ সালে রেল, চা বাগান ও স্টিমার শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সংহতিতে ব্রিটিশদের ধরাশায়ী করে তোলা হয়। জানা যায়, ১৯৩৮ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। আমাদের স্বাধীনতার মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই ২২ জুন ১৯৭২ হতে বাংলাদেশ আইএলও’র সক্রিয় সদস্য। আইএলও’র ৩৫ টি কনভেনশন বাংলাদেশ অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে মৌলিক ৭ টি কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ আত্মপ্রকাশের পূর্বে বিদ্যমান শ্রম আইনের সংখ্যা ছিল ৫০টি। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৫টি, পাকিস্তান শাসনামলে ২৩টি এবং ১২টি বাংলাদেশ আমলে প্রণীত। ১৪ নভেম্বর ২০১৮ শ্রম আইনের সর্বশেষ সংশোধনী সংযোজিত হয়।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার স্বীকৃত মানবাধিকার। শ্রমিকের মৌলিক অধিকার, যুক্তিসঙ্গত: মজুরির বিনিময়ে কাজের নিশ্চয়তা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে। গত বছর ০৮ জুলাই-এ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গ্লোবাল লিডার’স ডে উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মহামারীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বৈশশ্বক সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি, আমাদের অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, লাখ লাখ শ্রমিক তাদের চাকুরি হারিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান করোনা সংকটে শ্রমিক সমস্যাগুলো উত্তরণে তিনটি প্রস্তাব দেন। সেগুলো হচ্ছে ১. এই সংকটের সময় বিদেশের বাজারে অভিবাসী শ্রমিকের চাকরি বহাল রাখতে হবে। ২. যদি অব্যাহতি দিতেই হয় তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুবিধাসহ ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য বরখাস্ত সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মহামারীর পরে অর্থনীতিকে সক্রিয় করতে এই কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। শ্রমিক সুরক্ষায় রাষ্ট্র এবং সরকারপ্রধানের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ দেশের নাগরিকের মাঝে আশার সঞ্চার করে। আমাদের শ্রমবাজারের আয়তন প্রায় ৬৩.৫ মিলিয়ন। শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন ১২.৪ মিলিয়ন, সেবা খাতে ২৩.৭ মিলিয়ন, কৃষিতে ২৪.৭ মিলিয়ন। গত জুলাই এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকার সংখ্যা ২৬ লক্ষ ৭৭ হাজার। প্রতি বছর শ্রমবাজারে ২২ লক্ষ কর্মক্ষম মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। প্রায় ৭ লক্ষ শ্রমিক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমন করছেন।
বাংলাদেশের শ্রমিকের সাফল্য ও অর্জনে দেখা যায়, শ্রম আইন ছাড়াও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫, শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। সংবিধানের আলোকে এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমনীতি ও শ্রমিক কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশে মোটা দাগে শ্রম সেক্টরের অর্জনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৮ হাজার টাকায় উন্নীত। ৪৩টি শিল্প সেক্টরের মধ্যে ৪০টি সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি শতভাগ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩ শত টাকা নির্ধারণ। এরকম অনেক সাফল্য বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়েছে। এসব সাফল্যের তালিকা দেখে আমরা আনন্দ ও পুলক অনুভব করি। উন্নয়নের এক একটি সোপান অতিক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে জানিয়ে দেয় দেশের সক্ষমতাকে। আমাদের শ্রম ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত রয়েছে ৫ কোটির অধিক শ্রমিক। দেশের শ্রমজীবীরা উৎপাদন, বিপণনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশের অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা মোটেও উপেক্ষণীয় নয়। প্রতিদিন ৩০০ টাকা রোজগার করলে তারা বছরে কমপক্ষে ৭ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেন। এই টাকার পুরোটাই খরচ করেন খাদ্য, বাসা ভাড়া, পোশাক, চিকিৎসা, যাতায়াতের জন্য। এটি দেশের অর্থনীতিতে বিশাল সংযোজন। জিডিপি বৃদ্ধিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
‘বিক্ষোভে গুলি, নিহত ৫ শ্রমিক, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে বেতন-ভাতা, কর্মঘন্টা কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।’ এটি ১৮ এপ্রিল ২০২১ প্রথম আলো-এ প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম। পবিত্র রমজানে কর্মঘন্টা ৯ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৬ ঘন্টা, শুক্রবারে ৪ ঘন্টা, প্রতি মাসের বেতন ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ এবং ইফতার, সাহরির সময় বিরতির দাবি শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরে জানিয়ে আসছেন। ঘটনার তারিখ পূর্বদিন ১৭ এপ্রিল ২০২১। পরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭-এ দাঁড়ায়, আহত কমপক্ষে ১৯ জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করেছে। মে দিবসের অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল সুরক্ষা ব্যবস্থার সাথে এ ঘটনাটি মুখোমুখি অবস্থান করে। শ্রমিকের সাথে মালিকের সেতু বন্ধন হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন। এটি আইনসিদ্ধ ব্যবস্থা। হত্যা একটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরনের লঙ্ঘনের ঘটনা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ নানাবিধ ব্যবস্থাকে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষের জীবনহানী কোনভাবেই কারো কাম্য হতে পারে না। শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নিহত হবেন; প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার একটি নির্মম ত্রুটি ও ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা। এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণ এবং অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও সমাজ আরো যত্নবান হবেন, মহান মে দিবস স্মরণে এ শিক্ষা সকলকে গ্রহণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ। শ্রমিক বাঁচলে উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে দেশ। অন্ধকারকে পিছনে রেখে আলোকিত হোক বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষ। জীবনের বিনিময়ে অর্জিত মে দিবসের আন্দোলন বৃথা যেতে পারে না। সকল শ্রমজীবী মানুষের শান্তিময়তায় বিশ্ব সুখময় হোক। মে দিবস বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে, ‘সেইদিন আসবে যখন আমাদের নীরবতা হবে খুবই শক্তিশালী।’
কড়চা/ আর ই টি