সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : সুখী বাংলাদেশ
রুহুল ইসলাম টিপু
‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম।’
সূফী সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এর একটি জগদ্বিখ্যাত সাড়া জাগানো সঙ্গীত। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার অন্যতম বরেণ্য কীর্তিমানব। লোকসঙ্গীতে ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। প্রায় ১৬ শত গান রচনা ও সুরারোপ করেন। তিনি বাংলা ভাব সাধক ও বাউল। বাউল, ভক্তিমূলক, জারি, সারি, রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পালাগান, মালজোড়া গানসহ সঙ্গীতের কিংবদন্তিত’ল্য শিল্পী। তিনি ছিলেন গণচেতনার সঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার ও গায়ক। শাহ আব্দুল করিম এর ৬ টি বই: আফতাব সঙ্গীত (১৯৪৮), গণসঙ্গীত (১৯৫৭), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০), ভাটির চিঠি (১৯৯৮) ও কালনীর কূলে (২০০১)। তাঁর বিখ্যাত গণসঙ্গীতের কয়েকটি লাইন:
‘এই দেশের দুর্দশার কথা
কইতে মনে লাগে ব্যথা
খোরাক বিনা যথাতথা
মানুষ মারা যায়।’
এ গানে শাহ আব্দুল করিম দেশের দুর্দশার রাজ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যকে প্রধান করে তুলে ধরেছেন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শাহ আব্দুল করিম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি ভাষা সৈনিক। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাধক ধনী গরিব বৈষম্য ঘুচাতে চেয়েছিলেন। আমরা তো ক্ষুধা দারিদ্র্যকে জয় করছি। অর্জন করছি ঈর্ষনীয় সাফল্য। তবে হারিয়ে ফেলছি সম্প্রীতি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা। ১৭ মে ২০২০-এ শাহ আব্দুল করিম (প্রয়াত হন: ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯) এর দেহাবসানের ১১ বছর পর তাঁর শিষ্য রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরসহ দোতরা, বেহালা, হারমোনিয়াম ও গানের বইপত্র পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয়।
এ বাংলাদেশকে তখন বেশ অচেনা মনে হয়। দুর্বৃত্তরা তো এ সমাজেরই মানুষ। রণেশ ঠাকুরের আধ্যাত্মিক বইপুস্তক সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রকে ছাই করা। এটি সূফী বাউল সাধনা ও চিরায়ত লোকজ সঙ্গীত দর্শনের উপর আঘাত। সমস্যা সমধানে শিকড়ে প্রবেশ করতে হবে। উন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, শিক্ষা এবং নৈতিকতার মান সূচকে আমরা যাত্রা করর্ছি উল্টো পথে। শাহ আব্দুল করিম হিন্দু-মুসলমানকে নিয়ে বাউলা গান গাইতেন। আমরা তৈরি করছি বিভাজন। সভ্যতা এবং সমাজের অগ্রগতিতে এটি ভয়ানক অশনি সংকেত। সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ ফলাফলেই দেখতে পাবো প্রকৃত চিত্র। ১১ নভেম্বর ২০২১ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘উন্নয়নের সর্ব সূচকে উন্নত হলেই দেশকে উন্নত বলা যাবে। উন্নয়নের একটি সূচক হচ্ছে, হ্যাপিনেস মানে সুখ। তা কি আছে?’
বাংলার হিন্দু, বাংলার খৃষ্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি। এ পোস্টার বুকে ধারণ ও বহন করেছি আমরা। এ কথায় সুর দিয়ে গান গেয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলমানসহ এ দেশের সকল ধর্মগোষ্ঠীর মানুষ একত্রে সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসি নৃ-গোষ্ঠীসহ সকলে একসাথে বসবাস করে আসছি। এদেশ শাসন করেছেন পাল বংশ। বৌদ্ধ রাজা ছিলেন। সেন বংশ রাজত্ব করেছেন। বংশ পরম্পরায় হিন্দু রাজা জমিদারবৃন্দ দেশ শাসন করেন। মুসলিম মোঘল শাসকবৃন্দও দেশ শাসন করেছেন দীর্ঘদিন। এসেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং বৃটিশ শাসন। তাদেরও বিতাড়িত করেছি আমরা সবাই মিলে। এখন তো আমরাই বিতাড়িত হয়ে যাচ্ছি নিজ মাতৃভূমি হতে। আমাদের বেউথা’র পশ্চিম দিকে একটি এলাকা কাছমা’র ট্যাক। শব্দটি ছিল কাছিমের ট্যাক। কাছিমের পিঠ উঁচা। চারিদিকে নিচু জমি। মাঝখানে কাছমা’র ট্যাক। পুরো কাছমা’র ট্যাক ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। আজ সেথায় রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গুটিকয়েক বসতবাড়ি। ১৯৪১ সালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। কমতে কমতে এখন ৯ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৪ নভেম্বর ২০২১-এ প্রথম আলো’তে প্রকাশিত শিশির মোড়ল এর প্রতিবেদন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু। স্বাধীন বাংলাদেশে সব ধর্মালম্বীর সমান মর্যাদা নিয়ে বসবাস করার কথা। বাস্তবে তা হয়নি। শিরোনাম : ৫০ বছরে দেশে ৭৫ লাখ হিন্দু কমেছে।
সম্প্রতি আলাপকালে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধু বলেন, আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত করা হচ্ছে। আামাদের বিতাড়িত করছেন আপনারা। আমরা চলে যাবো। তখন আপনারা নিজেদের মধ্যেও একই আচরণ করবেন। এবছরের দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে তান্ডবলীলা দেখে আমরা দেশবাসী হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভারতবর্ষ ভাগ করেন ধর্মের ভিত্তিতে। অনিবার্য পরিণতির শিকারে পড়ে যায় সাধারণ মানুষ। ফলশ্রুতিতে ঘটে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা। রক্তাক্ত সে অতীত ইতিহাসের কালিমা দূর করে সকল ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে এখন সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি করতে চাই। স্বাধীন বাংলাদেশ এখন দেশ তো আমরাই শাসন পরিচালনা করি। রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি’র অন্যতম হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। দেশের মানুষ পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চান। ২০২০ সালে করোনার কারণে পূজো উৎসবসহ সকল উদযাপনই সীমিত পরিসরে হয়েছিল। আশার কথা এ বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ২১৮ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়। কাজল ঘোষ এর লেখায় পাই, প্রতিমাতে নয়, দুর্গা থাকেন প্রতি মা-তে। মা। মা দুর্গা। মা দুর্গা। মা জননী। জগজ্জননী মা। যে নামেই আমরা ডাকি না কেন, মা আছেন সবখানে। প্রতিটি মা-ই শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার। মা ছাড়া জগৎ দেখা সম্ভব নয়। মা-ই সব। এটি-ই চিরন্তণ। মাতৃভক্তিতেই সিদ্ধ জীবন।
ঝুমন দাসকে ১৭ মার্চ ২০২১-এ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কারাগারে দিন কাটে ঝুমন দাসের ৬ মাসেরও অধিক সময়। একজন হেফাজত নেতার কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এটি পোস্ট করার অধিকার একটি স্বাধীন দেশের যে কোন স্বাধীন নাগরিকের থাকার কথা। ঝুমন দাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম হয়নি। হেফাজতের সমর্থকরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৯০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ২৯ মার্চ ২০২১ মাগুরার চর গোয়ালদহ গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ টি হিন্দু বাড়িতে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ‘প্রথমে মনে কষ্ট পাই, তারপর ভয় পাই। আমরা হিন্দু সম্প্রদায় তো, এমনিতেই উৎকন্ঠায় থাকি।’- কথাগুলো বলেন, চিঠি পেয়েছেন এমন একজন যিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার চরগোয়ালদহ গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষক নির্মল কুমার সরকার। অথচ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। এ কোন অশুভ শক্তির মধ্যে আমরা নিমজ্জিত হয়ে পড়ছি।
১৫ অক্টোবর ২০২১-এ চৌমুহনীর মন্ডপ আর মন্দিরে হামলা করা হয়। বিবিসি বাংলা থেকে জানা যায়, তাতে জীবন যায় দু’জন মানুষের। সেদিনের হামলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসকনের একটি মন্দির। মন্দিরের লাইব্রেরী থেকে শুরু করে সব জায়গায় হামলার চিহ্ন। ভাঙা আসবাবাপত্র, কাঁচের টুকরো, উত্তরীয়, রুদ্রাক্ষের জপমালা- এসব পড়ে থাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দালানের গায়ে ছিলো অগ্নিসংযোগের প্রমাণ। এখানেই হামলায় প্রাণ হারাণ দু’ব্যক্তি। এর মধ্যে প্রান্ত দাশ নামের ২২ বছর বয়সের একজন যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায় সেখানকার একটি পুকুরে, ঘটনার একদিন পর। প্রান্ত দাশের বাবা-মা নোয়াখালীর আরেকটি এলাকা চাটখিল থেকে এসে ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। ঘটনার চার দিন পর সন্তানহারা পরিবারটি ওই মন্দিরেই ছিলেন, আর সেখানে কথা হয় মা বনলতা দাশের সাথে। ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ছেলের মৃতদেহে তিনি ধারালো অস্ত্রের অনেকগুলো আঘাত দেখতে পেয়েছেন। ’প্রান্তকে অনেক নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করে তাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে’, বলছিলেন বনলতা দাশ। ‘আমি আসি দেখি, প্রান্ত’র শরীরে শুধু কোপাকুপির দাগ। তার মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। আমার ছেলের সারা শরীর শুধু রক্ত আর রক্ত।’
২২ অক্টোবর ২০২১ বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদনে রয়েছে, নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন নারী বলেছেন, তিনি এখনকার পরিবেশে ঘর থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। ‘ধরেন, আমি ঘরের বাইরে বের হব। আমার কোন নিরাপত্তা নেই। এখন আমার হাতে শাখা আছে, সিঁদুর আছে। এগুলো নিয়ে আমি কিভাবে বের হব?’ প্রশ্ন করলেন ঐ নারী। তিনি মনে করেছেন, তাদের পুরুষদের ধর্মীয় কোন চিহ্ন শরীরে থাকে না। ফলে তারা বের হয়ে কাজকর্ম করার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু নারীরা পুরুষদের তুলনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সম্প্রীতি এবং সুখী বাংলাদেশ। এ মানসিকতা দেশের সকল মানুষকে লালন এবং ধারণ করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। সনদধারী শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ার বিষয়ে শিক্ষকদের অধিক মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত এবং মানবতাবাদী। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিও নাগরিক সমাজের দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন তৈরি, ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বৈষম্যমূলক সব ধরনের আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার অবসান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যুদ্ধকালে তৈরি করা অর্পিত সম্পত্তি আইন হিন্দুদের দেশত্যাগে প্রভাবিত করে। এর ফলে সংখ্যালঘুরা সম্পত্তির কর দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং সম্পত্তি কেনাবেচাও বন্ধ হয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাস হয়। যাদের সম্পত্তি, তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতেই এ আইন। ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ সালে হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৩ দফায় সংশোধন ও বিধিমালা তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে নৈতিকতা বাস করে অঙ্গাঙ্গীভাবে। সম্প্রতি আমার কর্মক্ষেত্র বনানীতে রাস্তার পাশে টং এর চা’য়ের দোকানে ক্রেতা বিক্রেতার দ্বন্দ্বে মাত্র ১ টাকার জন্য ঘটে লঙ্কা কান্ড। ফুটন্ত গরম কেটলি’র পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। মারধরে মারাত্মক জখম আহত হন কয়েকজন। পুলিশ চলে আসে। এখন চলছে চিকিৎসা এবং মামলা মোকদ্দমা। ১০ নভেম্বর ২০২১ প্রথম আলো’তে প্রকাশিত হয় তানোরে কৃষিবিজ্ঞানীর গবেষণালব্ধ ৬২ জাতের ধান তছনছ শীর্ষক সংবাদ। রাজশাহী’র তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ এর ১০ বছরের গবেষণালব্ধ ৬২ জাতের ধান একত্র করে তছনছ করা হয়েছে। নূর মোহাম্মদ স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতিবছর খরায় ধান নষ্ট হয়। নিজের মাটির ঘরকে বানিয়ে ফেলেন গবেষণাগার। বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ এর চার পাঁচটি ধান জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্পজীবনকালের ধানের জাত তিনি উদ্ভাবন করেন। সমাজের এহেন অসহিষ্ণু চিত্র সুখী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবির সাথে মারাত্মকভাবে সাংঘর্ষিক।
দাবি করা টাকা না পেয়ে একজন মুমূর্ষ রোগীর নাক-মুখ থেকে অক্সিজেন সংযোগ খুলে দিলেন হাসপাতালের এক কর্মী। জীবনরক্ষাকারী এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় রোগী মারা গেলেন। তিনি বখশিস চেয়েছিলেন। রোগীর দরিদ্র বাবা ১৫০ টাকা দিতে পেরেছেন। বাকি ৫০ টাকা না পাওয়ায় ছেলেটাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন হাসপাতলের কর্মী। তিনি দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করতেন। এটি ০৯ নভেম্বর ২০২১-এ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা। নৈতিকতার এরূপ অবক্ষয় দেশের মানুষ দেখতে চান না। ০৬ নভেম্বর ২০২১ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত জানান, এবার দুর্গাপূজার সময় গত ১৩ অক্টোবর থেকে ০১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ২৭ টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এ সময় ১১৭টি মন্দির পূজামন্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ৩০১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলার সময় ৯ জন (চারজন পুলিশের গুলিতে) নিহত হয়েছেন।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের, তিনি যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাঁর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিবে রাষ্ট্র। আমাদের দেশ বাংলাদেশ নিয়ে গর্বের সীমা পরিসীমা নেই। তখন গৌণ হয়ে যায় জাতি কিংবা ধর্ম পরিচয়। সাম্প্রদায়িক হামলা এবং মানুষের অসহিষ্ণু আচরণের নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষজ্ঞের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা বা গোটা সমাজকেই একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতির আওতায় আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করছি। হিংসা ও বিদ্বেষের বদলে মানুষের অন্তরের সম্প্রীতি শুভবোধ জেগে উঠুক। চাই সকল মানবের সম্প্রীতির বন্ধন। একটি সুখী বাংলাদেশ।
কড়চা/ আর আই টি